অহংকার – এন.কে.মণ্ডল (প্রথম পর্ব)


বুধবার,১১/০৯/২০১৯
1802

অহংকার – এন.কে.মণ্ডল (প্রথম পর্ব)

আসিফ মহাবিদ্যালয় পাশ করার পর শহরে পড়তে যাবে। সেখানে মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। আসিফের মামা কলকাতার মস্তবড় ব্যাবসায়ী। তাঁর একটি মাত্র মেয়ে রুনা। পড়াশোনাতে মোটামুটি ভালো। ওর সঙ্গেই ছোটো থেকেই বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আসিফের মামা কোটিপতি হওয়াতে মত বদলে যায়। তেমন একটা উঠাবসা নেই মামার সঙ্গে। কথায় আছে কোটিপতি হয়ে গেলে আর আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর নেয় না। সন্মানে আঘাত লাগে।
তাই একদিন আসিফের মা ফোন করে আসিফের মামাকে। হ্যাঁ রে কেমন আছিস। ভালো। তুমি কেমন আছো। আমিও ভালো আছি, তো বলছিলাম তোর ওখানে আসিফ কে ভর্তি করাচ্ছি একটু সাহায্য লাগবে তোর। হ্যাঁ দিদি বলো। বলছি তোর বাড়ি থেকে আসিফ কে পড়াতে চাইছি। ও এই ব্যাপার সে পাঠিয়ে দাও কোনো অসুবিধে হবে না, আমার বাড়িত থেকেই পড়াশোনা করবে। ঠিক আছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আসিফ রওনা হবে। ঠিক আছে তুমি ফোন দিও আমি রিসিভ করে নেব। ঠিক আছে ভালো থাকিস।

আসিফ খুব খুশি মামাবাড়ি থেকেই পড়তে পারবে। আর যদি মামার আপত্তি থাকলে রুম ভাড়া করতে হত তাই। অবশ্য খাওয়া দাওয়া এবং যাবতীয় খরচ আসিফের বাবাই বহন করবে। শুধু মামাবাড়িতে থাকবে। ও নিজেই রান্নাবান্না করে খাবে কারণ ওরা গরীব হলেও আত্মমর্যাদা আছে।

এক সপ্তাহ পর সেদিন ছিল শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ার পর বাবা মা কে বিদায় জানিয়ে রওনা হল শহরের উদ্দেশ্যে। শেষমেশ পৌঁছালো শিয়ালদহ রেলস্টেশনে। মামা রিসিভ করতে আসতে পারে নি তাই বাড়ির ড্রাইভার পাঠিয়ে দিয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়ে
চেনা পরিচয় করে মামাবাড়ি ফিরলো।
ফিরে দেখে মামির মুখখানি হয়েছে গম্ভীর (মনে হচ্ছে আসিফ আসাতে মন খারাপ) অথচ এই মামি ছোটবেলায় অনেক বেশি ভালোবাসতো। আজ সেইরকম নেই।

–মামি বলল আসিফ তুমি অনেকদূর থেকে এসেছো ফ্রেশ হয়ে এসো টেবিলে খাবার দিচ্ছি। খাবার খেয়ে বিশ্রাম কর।

–ঠিক আছে মামি।

–মামি: ড্রাইভার তুমি আসিফের লাগেজগুলি ওর রুমে দিয়ে এসো।

— ড্রাইভার: ঠিক আছে ম্যাডাম।

ড্রাইভার আসিফের লাগেজ নিয়ে গেলো একটি নতুন রুমে ঠিক রুমার রুমের বিপক্ষে। ওখান থেকে শহরের অনেককিছু দেখা যাবে। অনেকটা ভালো জায়গা। আসিফ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে খেতে আসলো। মামি খাবার পরিবেশন করে দিলো। মামি আসিফকে জিজ্ঞেস করল।

— মামি: আচ্ছা আসিফ তুমি অনেকদূর থেকে এসেছো পড়তে, তো কিভাবে যাতায়াত করবে রান্নাবান্না করবে। আসিফ এইকথা শোনার পর মনে মনে একটু দু:খ পেলো।

–আসিফ: না মামি আমরা গ্রামের ছেলে সবকিছু ম্যানেজ করে নিতে পারব। আর যাতায়াতের জন্য বাবা সাইকেল কিনে নিতে টাকা দিয়েছে এবং রান্নাবান্না করার জন্য জিনিসপত্র তো এনেছি অসুবিধে নেই।

— মামি: তুমি এতো ট্যালেন্টটেড তা আগে জানতাম না।, ঠিক আছে বিশ্রাম নাও আর আজ রাত্রে রান্না করতে হবে না আমাদের এখানে খেয়ে নিও।

— আসিফ: না মামি রান্না করতে হবেই আমাকে, কারণ গ্রামের মতো রান্না না খেলে আমি বাঁঁচব না।
— মামি: ঠিক আছে তাই করো।

মামি গ্রামের রান্নাবান্না শুনতেই মনের ভিতর একটা ঘেন্না চলে আসছে অথচ একদিন গ্রামেই থাকত অতিকষ্টে সহিত।এবং আসিফদের থেকে অনেক গরিব ছিলো। আর আজ আসিফের মামি বিপক্ষে চলে গেছে। আসিফও মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে তাই সে নিজেই রান্নাবান্না করে খাওয়ার কথা বলেছে। আসিফ রুমে শুয়ে শুয়ে একটু চোখের জল ঝরালো এবং নিজেকে দোষ দিলো যে গরিব হওয়া অপরাধ শহরে। যাইহোক আমাকে কষ্টকরে পড়াশোনা করে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট