বাংলাদেশে রোহিঙ্গা বিষয়ে হার্ডলাইনে সরকার

মিজান রহমান, ঢাকা: রোহিঙ্গা সমাবেশের আয়োজক ও এর নেপথ্য ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের সমাবেশকে গুরুত্ব না দিলেও হালকাভাবে দেখছে না সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। ইতোমধ্যে ২ সেপ্টেম্বর সোমবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুজন ইনচার্জকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অপরতৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৪১ এনজিওকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরো এনজিওর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনে যাদের অবহেলা ছিল তাদের আনা হচ্ছে জবাবদিহিতা ও শাস্তির আওতায়। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ‘ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন’। গেঞ্জি, ব্যানার, ফেস্টুনসহ সমাবেশের উপকরণ সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী দুটি বিদেশি সংস্থাসহ বেশ কটি এনজিওকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমাবেশের পর থেকেই সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। ওই দিন মহাসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমবেত হওয়া, একই ধরনের গেঞ্জি ও শার্টের ব্যবহার, ব্যানার, ফেস্টুনের উৎস জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, রোহিঙ্গা সমাবেশের নেপথ্যে অর্থসহ নানা উপকরণ সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থা।

গত ছয় মাসের পরিকল্পনার অংশ ছিল এই মহাসমাবেশ। সূত্র জানায়, ২৫ আগস্ট ঘিরে টেকনাফ উখিয়ার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোপনে বিতরণ করা হয়েছে সাদা রঙের ছয় লাখ গেঞ্জি এবং শার্ট। ২৫ আগস্টের এক সপ্তাহ আগে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এসব  পোশাক এবং বলা হয় ২৫ আগস্টের দিন পরিধান করতে। সমাবেশে উপস্থিত পুরুষ ছাড়াও উখিয়া, টেকনাফের সব ক্যাম্পে একযোগে পরিধান করা হয়েছে এসব সাদা পোশাক। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ছয় লাখ  গেঞ্জি এবং শার্ট কোথায়, কখন তৈরি হয়েছে। গোপনে গোপনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা এমন একটি সমাবেশ করে ফেলায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকরাও তো সমাবেশ করলে অনুমতি লাগে। রোহিঙ্গারা অনুমতি ছাড়া গোপনে এত বড় একটা সমাবেশ করে ফেলল। তার পরদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘সমাবেশের খবর সরকার জানত না’, ‘সো স্যাড’। যদি তা-ই হয়, তাহলে তো বুঝতে হবে আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এসবি-ডিএসবি স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও জানতে পারল না কেন-এটাও বোধগম্য নয়। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সমাবেশ হওয়ার সংবাদে খোদ সরকারপ্রধান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ও মাঠ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। সূত্রমতে, রোহিঙ্গারা সমাবেশের অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন জেলা প্রশাসক বরাবর। কিন্তু জেলা প্রশাসক বিষয়টি কাউকে জানাননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এসব সমাবেশের অনুমতির ক্ষেত্রে সাধারণ এসবি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের পর অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার প্রশ্ন আসে। জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন কেন কাউকে কিছু জানাননি-এ বিষয়ে জানতে গতকাল একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। গত ২৮ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এত বড় সমাবেশ সেখানে হলেও মাঠ প্রশাসন থেকে ঢাকার প্রশাসনকে অবহিত কেন করা হয়নি-সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া এ সমাবেশ আয়োজনের পেছনে কারা ছিল সে বিষয়েও আলোচনা হয়।

এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের যে দুজন ক্যাম্প ইনচার্জকে বদলি করা হয়েছে- তারা হলেন উখিয়ার কুতুপালং ৪ ও ৫ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ শামিমুল হক পাভেল (উপসচিব-১৫৮১০) এবং টেকনাফের নয়াপাড়া ১৪ ও ১৫ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ আবদুল ওয়াহাব রাশেদ (সিনিয়র সহকারী সচিব-১৬২৩৫)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ অধিশাখার উপসচিব মুহাম্মদ আবদুল লতিফ কর্তৃক গত ১ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ৭০১ এবং ৭০২ নম্বর স্মারকে এ পৃথক দুটি বদলি প্রজ্ঞাপন জারির মাধমে করা হয়। শামিমুল হক পাভেলকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রপ্তানি প্রকল্পের উপ-পরিচালক এবং আবদুল ওয়াহাব রাশেদকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতাধীন মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের উপ-পরিচালক হিসাবে বদলি করা হয়ছে। এছাড়া কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামকে সোমবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বদলি করা সিআইসি শামিমুল হক পাভেলের বিরুদ্ধে গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ দুজন সিআইসির বদলির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে প্রশাসনিক অ্যাকশন শুরু হলো। রোহিঙ্গা প্রশাসনের আরো অনেক কর্মকর্তার বদলি আদেশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

2 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

3 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

3 days ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

3 days ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

4 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

4 days ago