নিজস্ব প্রতিনিধি ,বারুইপুর: বেসরকারি সংস্থার সুপার ভাইজার। দামি স্টোনের আংটি পড়ে ভাগ্যলাভ হবে এই আশায় দামি স্টোন কিনতে গিয়ে মালদার কালিয়াচকে অপহৃত হয় ওই সুপারভাইজার অশোক রায় সহ তার সঙ্গি ভাইপো বিশ্বজিৎ ওঁরাও। ৮ লক্ষ টাকার মুক্তিপন নাহলে স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ফোন আসে তাঁর স্ত্রীর কাছে। এরপরেই অপহৃত সুপারভাইজারের স্ত্রী সাহসিকতার সাথেই সোনারপুর থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। আর এই অভিযোগ দায়েবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বারুইপুর জেলা পুলিস সুপার রসিদ মুনির খানের নির্দেশে অভিযোগকারিণী অপর্ণা রায় সহ সোনারপুর থানার দুই তদন্তকারি অফিসার অর্ঘ্য মণ্ডল ও প্রদীপ রায়ের নেতৃত্বে চারজনের টিম রওনা দেয় মালদহের উদ্দেশে। টোপ দিয়ে নাটকিয় কায়দায় তৎপরতার পুলিস উদ্ধার করে ওই অপহৃত সুপারভাইজারকে। একই সাথে গ্রেপ্তার হয় মুল অভিযুক্ত দুই অপহরণকারি।
বাকি দুই জন অপহরণকারি চম্পট দেয়।ধৃতদের নাম ইশাবুদ্দিন শেখ,বিলাল শেখ। যদিও অপহৃত সুপারভাইজারের ভাইপো বিশ্বজিৎ ওঁরাও অপহরণকারীদের ডেরা থেকে দড়ি ছিঁড়ে আগেই পালিয়ে যাওয়ায় তাকে উদ্ধার করা যায়নি। ধৃতদের শুক্রবার দুপুরে বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। শুক্রবার জেলা পুলিস সুপারের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠক করে এই কথা জানান জেলা পুলিস সুপার রসিদ মুনির খান। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিস সুপার ইন্দ্রজিত বসু, সোনারপুর থানার আই সি সৌগত রায়।ধৃতদের পুলিস হেফাজতে নিয়ে পুলিস অপহৃত ভাইপোর সন্ধানে তল্লাশি শুরু করবে। পুলিস জানায়, সোনারপুরের সাহেবপাড়ার লিঙ্ক রোডের বাসিন্দা অশোক রায়। এক বেসরকারি সংস্থার সুপারভাইজারের কাজ করেন। সামান্য আয় তার সংসারে।এক বন্ধু তাঁকে পরামর্শ দেন দামি স্টোনের আংটি পড়লে ভাগ্যলাভ হবে।টাকা পয়সা হাতে আসবে। মালদহতেই ভালো স্টোন পাওয়া যায়।
সেই উদ্দেশ্যেই গত ৬ জুলাই মালদহের উদ্দেশ্যে রওনা দেন অশোকবাবু। ৭ জুলাই সকাল ১১ টার পর মালদহে পৌঁছালে তার এক ভাইপো যে দিনাজপুরের বাসিন্দা সেও আসে। অশোক বাবুর কথায়, যে স্টোন দেবে বলেছিল তার আর খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পর কাজ না হওয়ায় ফিরে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। রাতেই ট্রেন ছিল। ভাবলাম মালদহের আম কিনে নিয়েই যাবো। এর পর আম কেনার উদ্দেশ্যেই একটা ছোট গাড়িতে উঠি। গাড়ীতে আমরা দুই জন ছাড়া আরও দুই জন ছিল। এর পরে অনেক দূর নিয়ে গেলে আমের সন্ধান না পাওয়ায় অচেনা দুই জন কে বলায় তারা বন্দুক দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাকে আর ভাইপোকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে চলে যায় অপহরণকারীরা। আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা সহ মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। একটা ফাঁকা মাঠে আমার পা বেঁধে তিন দিন ধরে রাখা হয়। বেধড়ক মারধোর করা হয়। ৭ জুলাই রাতেই আমার স্ত্রি কে ফোন করে মুক্তিপন হিসাবে ৮ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দিতে পারলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আমার ভাইপো তিন দিন পর দড়িছিঁড়ে পালিয়ে যায়।
আমার স্ত্রীর সাহসিকতায় আর পুলিসের সাহায্যে আমাকে উদ্ধার করা হল। আমি পুলিসের জন্য নতুন জীবন পেলাম। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে পুলিস সুপার জানান, ১০ জুলাই বিকালে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে অশোকবাবুর স্ত্রী অপর্ণা রায়। এর পরেই মোবাইল ট্রাক করে মালদহের সন্ধান মেলে। ওই দিন রাতেই সোনারপুর থানার দুই তদন্তকারি অফিসার সহ চার জনের টিম রওনা দেয় মালদহের উদ্দেশ্যে। পাশাপাশি মালদহ পুলিস সুপারের সাথে যোগাযোগ রাখা হয়। অশোক বাবুর স্ত্রিকে ট্রেনে পাঠানো হয়। বলা হয় অপহরণকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে। এর পরেই অপর্ণাদেবি মালদহ স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামলে অপহরণকারীরা বলে তাকে কোথায় জেতে হবে। অপর্ণা দেবি তাদের আগেই জানিয়েছিল আগে স্বামীকে পাবে তারপর তাদের টাকা দেবে। এর জন্য ব্যাগে ১০ হাজার টাকা টোপ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল অপর্ণাদেবিকে।বলা মত টোটোয় ওঠে অপর্ণা রায় ।
সাথে সাদা পোশাকের আমাদের পুলিসও ছিল। পিছনে বাকি পুলিসের টিম আর ইংরেজবাজার পুলিসের টিম ছিল। এর পরে টোটো কালিয়াচকের রথবাড়িতে পৌঁছালে অপর্ণা দেবি নেমে স্বামীর দেখা পায় অপহরণকারিদের সাথে। সাথে সাথেই পুলিস চারদিক দিয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। দুইজন পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যায় কুখ্যাত দুই অপহরণকারী। পুলিস সুপার আরও জানান,ধৃত বিলাল শেখের বোমা বিস্ফোরণ হাত উড়ে যায়।ধৃত দুই জনের নামে এর আগেও অপহরণের অভিযোগ আছে। এদিকে পুলিসের সাহায্যে নিজের স্বামীকে আবার ফিরে পাওয়ায় খুশি অপর্ণাদেবি পুলিসকেই অনেক সাধুবাদ জানিয়েছেন।