জলদাপাড়া জাতীয় অভয়ারণ্য


মঙ্গলবার,০২/০৭/২০১৯
3718

১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, আমি প্রথমবার জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে গিয়েছিলাম আমার কলেজের সহপাঠী এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে। এই ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। প্রথম দর্শনেই এই অভয়ারণ্যে যে সৌন্দর্যতা আমাকে মুগ্ধ করে । শিক্ষক শিক্ষিকারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাদেরকে জিপ গাড়ী করে জলদাপাড়ার জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখাবেন।রীতিমতোই ছয়টি জিপ গাড়ী এসে উপস্থিত হলো আমাদের হোটেলের সামনে, আমরা গাড়ীতে উঠলাম তখন ঘড়িতে দেখলাম ভোর সাঁড়ে পাঁচটা। আমাদের নিয়ে জিপ গাড়ী রহনা দিল। গাড়ীতে থাকা গাইড আমাদের জানিয়ে দিলেন জঙ্গলের কিছু নিয়মের কথা ।

১. জঙ্গলের মধ্যে বেশি জোরে কথা বলা যাবেনা, চুপ করে থাকার পরামর্শ দিলেন।
২. জঙ্গলের কোনো জীবের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কোনো রকম অশালীন আচরন করা যাবেনা। জন্তুদের তাঁক করে ঢিল ছোঁড়া যাবেনা। কোনো জীবকে আঘাত করা যাবে না।
৩. জঙ্গলের মধ্যে প্লাস্টিক বা কোনো বর্জ্যপদার্থ ফেলা যাবেনা ।
৪. এবং চকমকে তীব্র উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরা যাবে না তাতে জীবজন্তুর আক্রমনের প্রবণতা বেশি থাকে।

৪ নং নিয়মটি আমরা আগে থেকেই জানতাম তাই বেছে বেছে কালো বা হালকা রঙের পোশাক পরেই জঙ্গল সাফারি করতে বেরিয়েছিলাম। এবার আমাদের গাড়ীটি জঙ্গলে প্রবেশ করলো তখন ও সূর্য ওঠেনি চারিদিকটা বেশ আবছা। আমাদের ছয়টি জিপ গাড়ীগুলি একটা অপরটার থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল চারিদিকটা অন্ধকার ছিল তার উপর জিপটি ছিল খোলামেলা, আমরা এই অবস্থায় কিছুটা ভয়ও পাচ্ছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে আমাদের গাড়ীটি জঙ্গলের আরও গভীরে প্রবেশ করলো। হঠাৎই গাড়ীটা থেমে গেল, গাইড আঙুলের ইশারায় আমাদের দেখালেন কিছু বাইশন। হলং নদীর পাড়ে তারা বিচরন করছে ।

সকালের হালকা আলোয় সেই দৃশ্যটি আমরা ক্যামেরা বন্দি করতে পারলাম না, তাই মনেই বন্দি করলাম ঊষাকালের সেই অপরূপ দৃশ্য। তারপর আবার গাড়ী চলতে শুরু করলো। তখন ধীরে ধীরে চারিদিকটা সূর্যের আলোয় স্পষ্ট হতে লাগলো। আমারা যতই এগোই দেখতে পাই গাছে গাছে অজস্র ময়ূর। কিন্তু আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম হাতি ও জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের গন্ডার মহারাজকে দেখার জন্য। আমাদের গাড়ীটি একটা ওয়াচ টাওয়ারের কাছে এসে থামলো। আমরা গাড়ী থেকে নেমে বাঁকানো সিঁড়ি দিয়ে সেই ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম।সেখান থেকে জঙ্গলটার অনেকটা জায়গা দেখা যাচ্ছিল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম কোনো জীব আসে কিনা তারপর দেখলাম দুটি হাতি, দেখে মনে হল বাচ্ছাকে সঙ্গে নিয়ে পথ দেখিয়ে দিচ্ছে তার জননী।

তারপর আবার গাড়ীতে উঠলাম। আমরা প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্য দেখতে দেখতে উত্তেজিত হওয়ায় গাইড আবারও মনে করিয়ে দিল জঙ্গলের নিয়ম। আমরা চুপ করলাম, তারপর যাকে দেখার জন্য আমরা বেশি উত্তেজিত ছিলাম সেই জলদাপাড়া জঙ্গলের গন্ডার মহারাজের দর্শন পেলাম। গাড়ীর ডাইভার আমাদের গাড়ীটা ঠিক গন্ডারটির সামনে থামালেন। গন্ডারটি ঠিক ১০-১৫ হাত দূরে দাঁড়িয়েছিল। এইবার আমরা সেই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে সক্ষম হলাম। এরপর আমাদের পিছনে থাকা গাড়ীটির আসার আওয়াজ পেয়ে গন্ডারটি আবার জঙ্গলের ঝোপে লুকিয়ে পরে। তারপর আমরা জঙ্গলেই অবস্থিত একটা বাংলোয় গেলাম সেখানে ছিল বিশাল উদ্যান। না জানি কতরকমের ফুলের গাছ, অসাধারন ছিল সেই জায়গাটি।কিন্তু অভয়ারণ্যের নিয়ম অনুযায়ী জঙ্গল সাফারির সময় ছিল মাত্র আড়াই ঘন্টা তাই আর দেরি না করেই আমরা বাহিরের উদ্দেশ্যে আবার যাত্রা শুরু করলাম।

*** সুচরিতা কর ***

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট