মাসুদের কাশ্মীর নামা


শুক্রবার,২৮/০৬/২০১৯
3403

মাসুদ হাসান---

মাসুদের কাশ্মীর নামা
পর্ব ০১

গত বছর ঈদের সময়। হঠাৎ সিদ্ধান্ত হলো উত্তরবঙ্গ ঘুরতে যাবো। ফিরোজ, মিঠু ভাই এবং আমি। এর মধ্যে ইলিয়াছও ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে আসলো। বলে রাখি ফিরোজ আমার হাইস্কুল লাইফের বন্ধু, ইলিয়াছ কলেজ লাইফের বন্ধু। আর মিঠু ভাই। মিঠু ভাই সম্পর্কে বলতে গেলে . . . থাক এক কথায় বলি, অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের অধিকারী একজন মানুষ।

আমি যখন উত্তরবঙ্গ ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান এর কথা ইলিয়াছকে বললাম তখনই ইলিয়াছ বললো বিয়ের আগে একবার কাশ্মীর যেতে হবে। ব্যাস মাথায় কাশ্মীর ঢুকে গেলো। কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই সম্মতি দিয়ে দিলাম। বললাম কবে যাবা ? ইলিয়াছ বললো আগামী বছর ঈদ এর সময়। আমি বললাম ঠিক আছে। ঠিক হলো আগামী বছর রোজার ঈদ করবো দিল্লি জুমা মসজিদ এ। তারপর দিল্লি থেকে সোজা কাশ্মীর। এভাবেই একটা বছর কাশ্মীর যাওয়ার স্বপ্নকে বুকের ভিতর লালন পালন করতে লাগলাম।

এক মাস, দুই মাস, তিন মাস এভাবে প্রায় দশ মাস কেটে গেলো। দিন যত ঘনিয়ে আসতে লাগলো উত্তেজনার পারদ ও তত বাড়তে লাগলো। এর ভিতরে ঘটলো বেশ কিছু বিপত্তি। বাড়িতে বললেই প্রথমেই আম্মুর “না”। বিয়ের আগে আর ঘোরাঘুরি না। যথেষ্ট হয়েছে। আর না। তারপর ও আম্মুকে বুজিয়ে শুনিয়ে রাজি করলাম। বললাম বিয়ের আগে এটাই আমার শেষ সফর। তারপর আসলো ভারতের লোকসভা নির্বাচন। এমনিতেই কাশ্মীর অনেক খতরনাক এলাকা তারপর আমরা নির্বাচনের মাত্র দুই সপ্তাহ পর যাবো। আবার বললাম যদি পরিস্তিতি ভালো থাকে তাইলে যাবো না হলে যাবো না।

এর মধ্যে আরো একজন যাবে বলে টিকেট কাটার টাকা দিলেও কিছুদিন পর আবার বাতিল করলো। প্রায় এক মাস আগে হাওড়া টু জম্মু হিমগিরি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটা হলো। স্লীপার ক্লাস। কিন্তু ওয়েটিং লিস্ট। তিতাল্লিশ এবং চুয়াল্লিশ। প্রায় প্রতিদিনই চেক করতাম কমলো কিনা। আমি মনে করছিলাম যদি চুয়াল্লিশ কমে যায় তাইলে কন্ফার্ম হবে। কিন্তু না। ওয়েটিং লিস্ট কমে গিয়ে হলো “RAC”. “RAC” মানে হলো রিজারভেশন এগেইনস্ট ক্যান্সেলেশন। যাক তাও নিশ্চিত হলাম যাওয়া হচ্ছে।

যাওয়ার মাত্র দুই দিন আগে সব কিছু রেডি করলাম। আমরা যাবো ৪ই জুন, ২০১৯। মানে ঈদ-উল-ফিতর এর আগের দিন। ৩ই জুন বাড়ি গেলাম বিদায় নেয়ার জন্য। ৪ই জুন সকালে এসে সোজা ইন্ডিয়া চলে যাবো। মানে গ্রামের বাড়ি থেকে সাতক্ষীরা আসবো। তারপর সাতক্ষীরা থেকে আমি আর আমার বন্ধু ইলিয়াছ সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ইন্ডিয়া যাবো। আমাদের ট্রেন রাত ১১:৪৫ এ হাওড়া স্টেশন থেকে।

আমার গ্রামের বাড়ি থেকে সাতক্ষীরা প্রায় ২৬/২৭ কিলোমিটার। আসতে সর্বোচ্ছ এক ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা দশ মিনিট সময় লাগবে যেহেতু আমি আমার নিজের বাইক নিয়ে আসবো। বের হলাম সকাল সাড়ে আটটার দিকে। কিন্তু সাতক্ষীরা যখন পৌছালাম তখন বাজে দুপুর একটা। এত সময় কেন লাগলো? কারণ সে কি বৃষ্টি !! আমার জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ বৃষ্টি। ২৭ কিলোমিটার আসতে তিনবার আশ্রয় নিতে হয়েছে বৃষ্টিতে না ভেজার জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। শেষবার যেখানে আশ্রয় নিলাম একটা ছোট দোকান। কোনো মতে আমি ভেজার হাত থেকে আংশিক রক্ষা পেলেও আমার শখের বাইকটা আমার চোখের সামনে প্রায় তিনটা ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে ভিজলো। আমার পাগলা ঘোড়াটার জন্য আমি কিছুই করতে পারলাম না। বৃষ্টির তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আমার প্রায় কোমর পর্যন্ত ভিজে গেলো। টানা তিন ঘন্টার মতো এত মুষলধারার বৃষ্টি আমার লাইফে আমি আগে কখনো দেখি নাই। বৃষ্টি একটু থামলে কোনো মতে ভিজতে ভিজতে আসলাম সাতক্ষীরা।

আবার ঘটলো অন্য আরেক বিপত্তি। টাকা উঠাবো কিন্তু ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম সব বন্ধ। কিছুদিন পূর্বে ইউক্রেনের ছয় পাবলিক দ্বারা ডাচ-বাংলার এটিএম হ্যাক হওয়াতে তারা আপগ্রেশন এর কাজ করছিলো। যার জন্য বুথ বন্ধ। ফাস্ট ট্র্যাক এর একটিমাত্র বুথ থেকে অনেক্ষন পর পর একবার করে টাকা দিচ্ছিলো। আমার ব্যাড লাক এইখানে এসে গুড হয়ে গেলো। মানে আমি একেবারেই টাকা পেয়ে গেলাম। অবশ্য অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন এ দাঁড়িয়ে কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়েও টাকা পাচ্ছিলো না। তাই বলতে হবে এইখানে আমার রাজ্ কপাল ছিল যে একেবারেই টাকা পেয়ে গেলাম। যাক অবশেষে অনেক ঝাক্কি ঝামেলা শেষে হালকা বৃষ্টির মধ্যেই দুই বন্ধু মিলে বিসমিল্লাহ বলে ভোমরা স্থল বন্দর এর দিকে রওনা দিলাম।

পর্ব ০১

**** মাসুদ হাসান ****

( আপনিও আপনার ভ্রমণ কাহিনী আমাদের লিখে পাঠাতে পারেন , [email protected] এ। )

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট