মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে প্রায় তিন হাজার দলীয় কাউন্সিলারদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের লোকসভা ভোটে রাজ্যের প্রায় ৫০% পুরসভায় তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে আর শহরাঞ্চলের এই ফলাফলের বিশ্লষণেই আজকের এই বৈঠক।
নজরুল মঞ্চ থেকে দলীয় কাউন্সিলারদের কী বার্তা দিলেন মমতা ?
সাধারণ মানুষ গালাগালি করলে তা শুনতে হবে। তাঁদের জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি এদিন আরো বলেন, এই নির্বাচনটা কোনও নির্বাচনই নয়। হাজার হাজার, কোটি কোটি টাকার চিটিং হয়েছে। এটা ইলেকশন না চিটিংবাজি তা সকলেই জানতে পারবে।
যাঁরা দল ছাড়ার তাড়াতাড়ি ছাড়ুন, চোরেদের আমি দলে রাখব না।
বিকাশ বসুর স্ত্রীকে টিকিট না দিয়ে তাঁর খুনিদের টিকিট দয়েছি, এটা আমার বড় ভুল। এসব ভুল গুলো সংশোধন করতে হবে।
ডেডিকেটেড বাবা-ছেলেকে টিকিট দিতে হবে। ভুল করে বাবা ছেলেকে টিকিট দিয়ে দিয়েছি। বুঝতে হবে যাঁরা পার্টি ছেড়ে যাবে না, তাঁদের টিকিট দিতে হবে।
আমাদের নতুন কর্মী সব জায়গায় তৈরি করে নিয়েছি আমরা। এক জন যাবে ৫০০ জন তৈরি করব।
কোথায় কোনও একটা গ্রামসভা চুরি করে পালিয়ে গেল, তাতে আমার বয়েই গেল। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ১৫ থেকে ২০ কাউন্সিলার কোথাও চলে গেলে কিচ্ছু হবে না। আর যে সব বিধায়করা যাওয়ার তাড়াতাড়ি চেলে যান।
এটা যেন রামধনু পার্টি হয়ে গিয়েছে। কখনও মনে হল বিজেপি করব, কখনও মনে হল সিপিএম করব। এদের রাজনৈতিক কোন সত্ত্বা আছে ? আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। যে লোকটা মানুষের জন্য কাজ করে জীবনে হারে না।
ডেঙ্গিটা নিয়ে আপনাদের এখন থেকেই ভাল করে নামতে হবে। বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগণায়। কয়েকটা পকেট আছে যেখানে ডেঙ্গি বেশি হয়। সেখানে এখন থেকেই অ্যাকশনটা নিতে হবে। একটাও খারাপ ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
পারফরম্যান্স ভালো হলে, সেটা দেখে এ বার টিকিট দেওয়া হবে। জেলার নেতাদের হাতে আর টিকিট নয়।
প্রত্যেকে ভোটার তালিকাটা ভালো করে করুন। কারণ আমরা আগে যে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে ভোটার তালিকা করতাম, সে ভাবে তালিকা বানাতে হবে। কারও নাম যেন বাদ না যায়। আমাকে অনেকেই বলেছেন, তাঁর নাম নেই।
সরকারি সম্পত্তির দাম আছে। এটা ববির ডিপার্টমেন্ট। ববিকে বলব ব্যবস্থা নিতে।
সরকারের সমস্ত জায়গা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে নিজের নামে করে নিয়েছে। পার্ক থেকে পুকুর থেকে শুরু করে সব কোনওটা বাবার নামে, কোনওটা কাকার নামে করে নিয়েছে। এদের ক্ষমা করব না।
এটা অত সহজ নয়। অন্য দলে চলে গেলেই বেঁচে যাবেন না, আরও ফাঁসবে।
এলাকায় যদি ভাল কাজ না হয়, দোষটা দলের উপড় পড়ে, ভাল কাজ হলে দলের সুনাম বাড়ে। আমার অনেক কর্পোরেশন,মিউনিসিপ্যালিটি যত্ন করে কাজ করে, অনেকে খেয়ালই করে না। বাড়ি আর প্রোমটিং ছাড়া
কিছু ভাবে না তারা।
আজকাল আবার নতুন স্টাইল হয়েছে। চুরি করলেই পালিয়ে যায়, যে-ই চুরি করছে আর ধরা পড়ছে অন্য একটা দলে গিয়ে নাম লিখাচ্ছে।
কাউন্সিলারদের কাজ কিন্তু মানুষের কাজ করা। স্থানীয় উন্নয়ণের টাকা কিন্তু সাংসদ,বিধায়কদের কাছে থাকেনা। কাউন্সিলাররাই জনগণের কাজ করার জন্য সরাসরি হাতে টাকা পান।
সব শেষে তিনি বলেন, উপস্থিত সমস্ত কাউন্সিলার, চেয়ারম্যান, মেয়র- সহ সমস্ত বন্ধুদের বলছি, আমার এই মিটিংয়ে আসার কথা ছিল না তাও আপনাদের কাছে আসা। কলকাতা কর্পোরেশন ও দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটির সমস্ত কাউন্সিলাররা এসেছেন কিনা খোঁজ নেন এবং সব শেষে বলেন কী কাজ করতে হবে শুনে নিয়েছেন তো ?
সবাই ভাল থাকবেন আর মনে রাখবেন বাংলার সংস্কৃতি বাংলার সভ্যতা, বাংলার জাগরণ।
এখন থেকে জয় হিন্দ বলা অভ্যাস করুন, বলুন জয় হিন্দ, জয় বাংলা। আর একটু রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে বলবেন, জয় হে, জয় হে, জয় জয় হে।