বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা

বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা

জেনে শুনে সন্তান না নেয়া আর সন্তান চেয়েও না পাওয়ার মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য তা একজন বন্ধ্যা ব্যক্তি ছাড়া আর কে বোঝেন? বাংলাদেশে কোন দম্পতির বাচ্চা না হলে সাধারণত মেয়েটিকেই দোষারোপ করা হয়ে থাকে। তবে এ কথা সত্যি যে বন্ধ্যাত্বের জন্য ছেলে মেয়ে উভয়ই সমান ভাবে দায়ী হতে পারে।

বর্তমানে অনেক দম্পতি সন্তান চেয়েও সঠিক সময়ে সন্তান জন্ম দিতে পারছে না। দিনে দিনে বন্ধ্যাত্বের হতাশা বেড়েই চলেছে। চলুন, বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানা যাক।

বন্ধ্যাত্ব কী?

বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে বন্ধ্যাত্ব কি। সন্তান ধারণের অক্ষমতাকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, সাধারণত এক বছর পর্যন্ত কোনো দম্পতি সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে, সে অবস্থাকে বন্ধ্যাত্ব বলে চিহ্নিত করা হয়।

মহিলা ও পুরুষের যেকোনো একজন বা উভয়ই বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী হতে পারে। মহিলাদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের কারণ নির্ণয় করা খুবই জটিল। তবে এ সমস্যার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে যা এ রোগের মূল কারণের উপর নির্ভরশীল।

সবসময় বন্ধ্যাত্বের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অনেক দম্পতিই কোনো ধরণের চিকিৎসা ছাড়াই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পায় ও স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান ধারণ করতে পারে।

কি কারণে বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারেন?

বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা একে অন্যের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত। বন্ধ্যাত্বের কারণ জেনে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করানো জরুরী।

ধূমপান ও অ্যাকোহলের ব্যবহারঃ ধূমপানের কারণে সার্ভিক্স ও ফেলোপিয়ান টিউবের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ধূমপানের কারণে অপরিণত অবস্থায় ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায়। ধূমপানের মত অ্যালকোহলের ব্যবহারের ফলেও ডিম্বাণু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দেয়। বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই ধূমপান ও মদ্যপান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বয়সঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে, বিশেষ করে ৩০ এর মাঝামাঝিতে ফলিকলের পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। যার ফলে উৎপাদিত ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণাগুণ হ্রাস পেতে থাকে। এ কারণে গর্ভধারনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার দেখা দেয় ও গর্ভপাতের আশংকা বেড়ে যায়।

যৌনরোগঃ বিভিন্ন যৌনরোগ, যেমনঃ গনোরিয়া ও ক্ল্যামাইডিয়ায় আক্রান্ত হলে ফেলোপিয়ান টিউবের ক্ষতি হয়ে থাকে যার ফলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে ও অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমে যৌন রোগ হতে পারে। এর ফলে সন্তান ধারনের ক্ষমতা কমে পায়।

ওজনঃ স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন খুব বেশি বা কম হলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও-

  • বিভিন্ন অজানা কারণে মহিলাদের গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে।
  • সময়ের আগে ডিম্বাশয়ের পতন হলে।
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম।
  • অনিয়মিত মাসিক।
  • ইউটেরিয়ান ফাইব্রয়েড।
  • ভ্যারিকোসিল অফ দা টেস্টিকালস্‌।
  • ওভারিয়ান সিস্ট।
  • এন্ডোমেট্রিওসিস।

পুরুষদের ক্ষেত্রে কী কী কারণে বন্ধাত্ব্য দেখা দিতে পারে?

পুরুষদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা কেমন? শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। যে টিউব বা নালীর সাহায্যে শুক্রাণু বাইরে বেরিয়ে আসে তা কোনো কারণে আটকে গেলে বা কোনো আঘাত বা অপারেশনের কারণে বা হরমোন জনিত কারণে শুক্রাণু উৎপাদনের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

বন্ধ্যাত্ব ব্যক্তির মানসিক অবস্থার উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে?

বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা ব্যক্তির মানসিক অবস্থার উপরে প্রভাব ফেলে। বন্ধ্যাত্বের কারণে দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। এ সমস্যার কারণে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি তার প্রভাবে পারষ্পরিক সমোঝতা ও ভালোবাসার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ফলে অতিরিক্ত মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ই উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন।

হেলথ টিপস্

বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা আলোচনায় পরবর্তীতে যেটা আসে তা হচ্ছে এর চিকিৎসা। নিচে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে কিছু হেলথ টিপস দেয়া হলো।

পুরুষদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে করণীয়

১। অতিরিক্ত মদ্যপান ও মাদকের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।

২। দূষণ ও বিষাক্ত পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।

৩। যেসকল ঔষধের ব্যবহারে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে তা এড়িয়ে চলতে হবে।

৪। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে করণীয়

১। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।

২। মেদবৃদ্ধি ও স্থূলতা প্রতিরোধ করতে হবে।

৩। ক্যাফেইনযুক্ত দ্রব্যের ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

৪। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

৫। মাদক ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রিঙ্কু সিং: মাঠের কোণ থেকে তারকার যাত্রা

২০১৮ সালে কেকেআর দলে যখন রিঙ্কু সিং যোগ দিলেন, তাঁর জন্য ৮০ লক্ষ টাকা খরচ…

2 days ago

তাৎক্ষণিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস

পশ্চিম বাংলার একাধিক জেলায় ঝড়-বৃষ্টি আসন্ন 📍 কলকাতা, ১৭ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।…

3 weeks ago

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

3 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

3 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

3 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

3 months ago