জয়রামবাটী গ্রামটি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর সাব ডিভিশনের কোতুলপুর থানার অন্তর্গত। জয়রামবাটী এবং কামারপুকুরের মধ্যে তফাৎ ৩ মাইলের। এই পবিত্র গ্রামটি সারদা দেবীর জণ্মস্থান। সবুজে ঘেরা এই জয়রামবাটী গ্রাম। মায়ের জণ্মের পর এই গ্রামের সমৃদ্ধি লক্ষণীয়।
শ্রী শ্রী মাতৃ মন্দির
১৮৫৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মায়ের আর্বিভাব ঘটে। ঠিক যে স্থানটিতে মা সারদা জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেইস্থানটিতে জয়রামবাটীর সুন্দর মন্দিরটি তৈরী হয়েছে। এটি ছিল তাঁর পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাসভবন। তাঁর মায়ের নাম শ্রীমতী শ্যামাসুন্দরী মুখোপাধ্যায়। সারদা দেবী ছিলেন মা লক্ষীর আর এক রূপ। পবিত্র মায়ের বিবাহ এই বাড়িতেই হয়েছিল।
১৯২৩ সালের ১৯ শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে স্বামী সারাদানন্দ মহারাজ মায়ের নামে এই মন্দির নিবেদন করেন। ১৯৫৪ সালের ৮ই এপ্রিল শ্বেত পাথরের তৈরী মায়ের মূর্তি স্থাপিত হ্য় এই মন্দিরে। মন্দির তৈরীর জন্য মাটি খনন করার সময় মন্দিরের স্থানে একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া গিয়েছিল, সেই শিবলিঙ্গের পূজা করা হয় এই মন্দিরে।
পুরাতন বাড়ি
মা সারদার ভায়েদের মধ্যে যখন সম্পত্তির বিভাজন ঘটে, ঐ বাড়িতে মা যেখানে থাকতেন সেই অংশটি তাঁর ভ্রাতা প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের ভাগে পড়ে, মা তাঁর জীবনের ৫২ বছর(১৮৬৩ – ১৯১৫) ঐ ভিটেতে ভায়ের সঙ্গে কাটান।
এই পুরাতন বাড়ি এখন বেলুড় মঠের তত্ত্বাবধানে। বেলুড় মঠের কতৃপক্ষ মায়ের স্মরণীয় স্মৃতি রক্ষার্থে প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বংশধরদের কাছ থেকে কিনে নেন, যা এখন পুরাতন বাড়ি নামে প্রসিদ্ধ। এই বাড়িতে মা জগদ্ধাত্রী পুজা করতেন। অনেক মানুষ এই বাড়িতে মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেছেন, সন্ন্যাস, ব্রহ্মচর্য পালন করেছেন এবং এই বাড়িটি পবিত্র হয়ে উঠেছে।
নূতন বাড়ি
ভক্তদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির সাথে সাথে মায়ের মূল গৃহের পরিকাঠামোতে কিছু অসুবিধা সৃষ্টি হল। সেই কারণে স্বামী সারদানন্দ পূণ্য পুকুরেরে পশ্চিমদিকে একটি জমি কেনেন।। জমিটি দেবী জগদ্ধাত্রীর নামে রেজিষ্ট্রি করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৬ সালে মায়ের জন্য সেখানে মাটির দেওয়াল, খড়ের ছাউনির বাড়ি করে দেন। মা একটি ঘর তাঁর শোবার ঘর এবং ঠাকুর রামকৃষ্ণের পূজার ঘর হিসাবে ব্যবহর করতেন।
পূণ্য পুকুর
এই জলাশয়টির অবস্থান মায়ের নূতন বাড়ির পূর্ব দিকে এবং মন্দিরের সামনে। মা এই পুকুরটি নিত্য ব্যবহার করতেন। মায়ের পবিত্র ছোঁয়ায় এই পুকুরটি পবিত্র তাই এই পুকুরটি পূণ্য-পুকুর নামে পরিচিত।
মায়ের দিঘী (ঘাট)
জয়রামবাটীতে মায়ের মন্দিরের বাস স্টপেজটির নাম মায়ের ঘাট। ছেলেবেলায় মা সারদা গরুর ঘাস কেটে নিয়ে যেতেন এই দিঘী থেকে।
আমোদর ঘাট
জয়রামবাটী গ্রামের উত্তর দিকে আমোদর একটি ক্ষুদ্র নদী। সারদা মা এই নদীটিকে গঙ্গা বলে মানতেন।এখানে একটি ইটের পাকা ঘাট বাঁধানো হয়েছিল, যেখানে মা স্নান করতেন।
সিংহবাহিনী মন্দির
দেবী সিংহবাহিনী একটি ধাতব মূর্তি। সারদা দেবী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই কথা বিশ্বাস করা হয়, যে একবার সারদা দেবী একটি কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেবী সিংহবাহিনীর কাছে উপবাস করেন। তিনি দেখেন দেবী সিংহবাহিনী এগারো বারো বছরের একটি কামার মেয়ের রূপ ধরে তাঁর মা শ্যামাসুন্দরীর সাথে আসেন। তারা মা সারদাকে একটি ওষুধ দেন। এই ওষুধ খেয়ে মা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। মা নিজে ভালো হয়ে ওঠার পর এই স্থানের মাটি প্রতিদিন সংগ্রহ করে একটি কৌটোতে রাখতেন এবং তাঁর ভাইঝি রাধারাণীকে দিয়েছিলেন গ্রামের লোকের চিকিৎসার কাজে লাগবে বলে।
এই মাটির রোগ নিরাময়ক ক্ষমতা জানার পর দূর দূর থেকে বহু মানুষ আসেন এই মাটি নিতে। এই কারণে মা সিংহবাহিনী বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পুরানো মন্দিরটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে মন্দিরটি বানানো হয়েছে এবং দেবী সিংহবাহিনীর মূর্তি নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কাছে দূরের বহু মানুষ আসেন শনি এবং মঙ্গলবার আসেন পূজা দিতে। দূর্গা পূজার তিন দিন খুব জাঁকজমক করে দেবী সিংহবাহিনীর পূজা করা হয়। মুখার্জ্জী পরিবারের বংশধরেরা সিংহবাহিনী দেবীর পূজার ভারপ্রাপ্ত।
ধর্ম ঠাকুর
ধর্ম ঠাকুর গ্রামের অধিষ্ঠিত দেবতা। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির দেওয়ালের দুকামরার গৃহে তিনি বাস করেন। গ্রামের দুটি পৃথক জায়গায় পৃথক নামে তিনি পূজিত হন। পূণ্য পুকুরের উত্তর পশ্চিম দিকে ধর্ম ঠাকুরের মন্দির, কচ্ছপের আকৃতিতে তিনি পূজিত হন। ধর্ম ঠাকুর এখানে সুন্দরনারায়ণ নামে খ্যাত। মুখার্জ্জী পরিবার এই পূজার দায়িত্বে থাকেন। ধর্ম ঠাকুরের সাথে সাথে শীতলা মাতা এবং নারায়ণ শিলার পূজা হয়।
এছাড়া ঘোষ পরিবারে ধর্ম ঠাকুর গৃহ দেবতা রূপে পূজিত হন, এখানে তিনি যাত্রা সিদ্ধহারে নামে পরিচিত। গ্রামের পশ্চিমপ্রান্তে মায়ের ঘাটের সামনে ধর্ম ঠাকুরের মন্দির ইটের তৈরী।
বাঁড়ুজ্জ্যে পুকুর
তাল গাছ দিয়ে ঘেরা এই জলাশয়টিকে অনেকেই তাল পুকুর বলে। গ্রামের দক্ষিণ পূর্ব কোণে এই পুকুরটি অবস্থিত। মায়ের বাড়ি থেকে হাঁটা পথে ১০ মিনিট দূরত্বে এই পুকুরটি। মা এই পুকুরের রান্নার জল এবং পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করতেন।
ভানু পিসীর বাড়ি
ভানু পিসী মা সারদার ছেলেবেলার সঙ্গী। তিনি ঠাকুর রামকৃষ্ণের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। প্রতিবেশী সম্পর্কে মা সারদা তাকে পিসী বলে ডাকতেন। জয়রামবাটী থেকে অনতিদুরে ফুলুইতে ভানু পিসীর বিবাহ হয়েছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি পৈতৃক ভিটেতে ফিরে আসেন। মা সারদাকে তিনি দেবী রূপে সম্মান করতেন। ছোটো বেলায় মা সারদাকে গ্রামবাসীরা যখন তাঁর স্বামী ঠাকুর রামকৃষ্ণকে পাগল বলে আঘাত করতেন, মা সারদা মনের শান্তির জন্য চলে যেতেন ভানু পিসীর বাড়িতে।
মায়ের নূতন বাড়ি থেকে ভানু পিসীর বাড়ি খুব কাছে। বর্তমানে শ্রী মাতৃ মন্দির বাড়িটি অধিগ্রহন করেছেন এবং বাড়িটি সংস্কার করেছেন।
কিভাবে পৌঁছাবেন পূণ্যস্থান জয়রামবাটীতে (পথনির্দেশ)
ট্রেনে করে জয়রামবাটীতে
জয়রামবাটীর নিকটতম রেল স্টেশনের নাম গোঘাট। হাওড়া থেকে সরাসরি গোঘাট লোকালে করে গোঘাট স্টেশনে নেমে বিভিন্ন প্রকার গাড়ী (যেন টোটো,ভ্যান প্রভৃতি) পাওয়া যায় সরাসরি জয়রামবাটীর মঠে পৌঁছে দেবে।
গোঘাট পর্যন্ত ট্রেনের সংখ্যা কম তাই আপনারা হাওড়া থেকে আরামবাগ লোকালে করে আরামবাগ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে জয়রামবাটীর অনেক বাস পাবেন।
আরও একটু দূরবর্তী স্টেশনের নাম তারকেশ্বর কিন্তু এখানে ট্রেনের সংখ্যা আরামবাগ বা গোঘাট স্টেশনের থেকে অনেক বেশী। হাওড়া থেকে তারকেশ্বর লোকালে তারকেশ্বর স্টেশনে নেমে পাশেই তারকেশ্বর বাস স্ট্যাণ্ড সেখান থেকে পেয়ে যাবেন জয়রামবাটীর বাস।
বাসে করে জয়রামবাটী
কলকাতার ধর্মতলা বাসস্ট্যাণ্ড থেকে বিভিন্ন প্রকার বেসরকারি এবং সরকারি (সি.এস.টি.সি / এস.বি.এস.টি.সি) বাস আছে জয়রামবাটী যাওয়ার জন্য।
তারকেশ্বর থেকে বাসে আরামবাগ হয়ে জয়রামবাটী। আরামবাগ থেকে বাস, বিভিন্ন প্রকার প্রাইভেট গাড়ী পাওয়া যায় জয়রামবাটী যাওয়ার জন্য।
বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটীর বাস পাওয়া যায়
বর্ধমান থেকে বাসে করে আরামবাগ, আরামবাগ থেকে বাসে জয়রামবাটী। দূর্গাপুর থেকে বাসে বাঁকুড়া, বাঁকুড়া থেকে বাসে জয়রামবাটী।
মেদিনীপুর থেকে বাসে রামজিবনপুর/খিরপাই রোড/ইন্দাস রোড/কোতুলপুর সেখান থেকে বাসে জয়রামবাটী।
কলকাতা থেকে জয়রামবাটীর দূরত্ব ১১১ কি.মি। প্রাইভেট গাড়ীতে করে জয়রামবাটী যেতে গেলে ৩-৩.৩০ ঘণ্টা সময় লাগবে।
₹239.00 (as of মঙ্গলবার,১৪/০১/২০২৫ ১৫:২৭ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹378.00 (as of মঙ্গলবার,১৪/০১/২০২৫ ১৫:২৭ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹17,499.00 (as of মঙ্গলবার,১৪/০১/২০২৫ ১৫:২৭ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹474.00 (as of মঙ্গলবার,১৪/০১/২০২৫ ১৫:২৭ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹17,680.00 (as of মঙ্গলবার,১৪/০১/২০২৫ ১৫:২৭ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…
১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…
রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…
জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…
নেপাল-তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৬২…