বেলের শরবত


বৃহস্পতিবার,৩০/০৫/২০১৯
3806

আপ্পি হ্যান্স---

নেড়া বেল তলাতে যায়না, কিন্তু আমি যাই
কারণ আমি নেড়া নই আমার অনেক চুল পুরু লম্বা চুল তাই আমি যাই। আমি বেল তলাতে বেল পাড়তে না হলেও কচি পাতা আনতে যাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পেট পরিষ্কার তার অনেক উপকার কিনা।
আমি আরো যাই বেল ওয়ালার কাছে- কেন? বলছি- দুপুরে দুরন্ত গরম আপনি পিচ রাস্তায় হাঁটছেন আর সামনেই যদি দেখেন কুচি কুচি বরফ দিয়ে হলদে গাঢ়রূপ বেলের সরবত বানাচ্ছে তবে যাওয়াই যায়। আমিও গেলাম তাই
-এক গ্লাস কতো?
-২৫ টাকা।
-বিশ টাকায় হবেনা? দারুণ বানাচ্ছো লোভ হচ্ছে খুব তেষ্টাও পেয়েছে
-হবেনা…
-বিশ টাকার মত হবে? একটু নাহলে কম দিয়ো, আমার কাছে আর খুচরো নেই।
-আচ্ছা।
আমি আচ্ছা করে চিনি দিয়ে কুচি বরফ মেশানো অদ্ভুত উপায়ে ফাটানো গাঢ়ো বেলের সরবত খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম পৃথিবীতে মাত্র ২৫ টাকায় স্বর্গসম উপলব্ধি! আহা কলজে ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম। ‘সারাবান তহুরা’ বেহেস্তের একপ্রকার সরবতের নাম ভাবছি সেটার সাথে এই বেলের সরবতের কোন তুলনা আসে কিনা সেখানে তো কষ্ট নেই হাজারো আইটেম তার মাঝে শরবত আছে কিন্তু এখানে এই রৌদ্রতেজ ঘাম আর পিচগলা আবহাওয়ার মাঝে কুচি বরফ দিয়ে বেলের শরবত আহা, কোনটা সেরা মনে মনে এসব ভাবছিলাম আমি… ঠিক তখনই একটা ঝাঁ চকচকে গাড়ির কাঁচে দপাদপ চাপড় শুনলাম, দুইহাতে লাগাতার মারছে কাঁচের গায়ে আর বলছে রাখো রাখো…মা রাখো। গাড়ি রাখা হলো-
কাঁচ খুলতেই দেখি বড়ো বড়ো দুই চোখ করে সুন্দর এক পিচ্চি তার মাকে বলছে, আমি খাবো…আমি খাবো। মা তো রেগে আগুন!
-এক্ষুনি রেস্টুরেন্টে সুপ খেলি চিপস খেলি আর এসব ফালতু কি দেখে কি বলছিস? মাথায় আমার কি যেন হয়ে উঠলো বাচ্চাটার প্রতি নিছক খুব করুণা হলো
আমি হলুদ গ্লাসটা উঁচু করে পিচ্চিকে দেখিয়ে আমার বুড়ো আঙুল তুল্লাম, মানে এটা যে হেভ্যি একটা জিনিষ আর দুর্দান্ত লাগছে সেটা ওই একটা মাত্র ইশারায়(থামস আপ সাইন) বুঝিয়ে দিলাম আরকি। পিচ্চিটা ফিক করে হেসে দিলে! ওর সামনের দুটি দাঁত নেই- আমিও হেসে ফেল্লাম।
এসি কারের দরজা খুলে নেমে এলো
-কাক্কু আমাকেও দিন না এক গ্লাস, আমি খাবো এই আইসক্রিম।
বেলওয়ালা কিছু বলার আগে আমিই বললাম আরে এটা আইসক্রিম না তবে এটা আইসক্রিমের খালু।
-হাঁ… পিচ্চিটা আমার দিকে হাঁ করে আছে-
-কি নাম তোমার টুনি, এটা হেভ্যি খেতে তুমি জানো? এটা বেলের শরবত মাথা ঠান্ডা করে আর পেট পরিস্কার করে!
-আমার নাম টুনি না ভূমি! আমার পেট ব্যাথা করে -পলিষ্ক্যার হবে? মা তো রেস্টুরেন্ট গিয়ে ‘ল্যাস্যি’ খাওয়ায় ‘ছুপ’ খাওয়ায় আর বলে পেট পলিষ্ক্যার হবে।
আমি হাসলাম, বল্লাম -রেস্টুরেন্ট এসব ভালো জিনিস পাবে কোথায়? ওসব পচা জিনিস’! ওতে কিছু হয়! বলেই আমি ঢক ঢক করে দু চুমুক আরো মেরে দিলাম!
-ও কাক্কু তাইলে বেলের খালু ভালো তাইনা?
টুনির মা… সরি ভূমির মা ড্যাব ড্যাবে চোখে আমার দিকে চাইলে আমি আর কিছু না বলে ইতস্ততভাবে অন্য দিকে চাইলাম।
মা তখন বিড় বিড় করে বলছে উফ যত্ত সব নাটক!
নাটক আরো বাড়বে আমি জানতাম না, হটাৎ ড্রাইবারের জায়গা থেকে আওয়াজ
-বৌদি আমার জন্যেও এক গ্লাস বলো প্লিজ।
চোখ আমার ছানাবড়া, এতক্ষণ দেখতে পাইনি কালো চশমায় বগল কাটা- সরি স্লিভলেস শার্টে অতি আধুনিকা এক রমনি ড্রাই’ভার’!! আচ্ছা আমি বুঝিনা কারের মধ্যে বসে কালো চশমা পরে ড্রাইভ করার মানে কি! ইশটাইল মানে দ্যাখায় আরকি!
কলজে আমার ঠান্ডা হতে হতেও যেন আবার দপ করে জ্বলে উঠলো। মাথার ক্রীড়া নড়ে উঠলো, আমি ভূমির কানে কানে বল্লাম- একদম টানা রৌদ্রে দাড়িয়ে এই শরবৎ না খেলে কিন্তু পেট সেই খারাপই থাকবে, কোনো কাজ হবেনা!
ভূমি জলদি তার আন্টিকে হাত ধরে জোর করে নামিয়ে আনলো
হাসি মুখে নেমে এল ড্রাই’ভার’!
‘গ্লেস’ কারে বলে, সত্যিই খালু এত গরমে মানুষ এত সুন্দর কিভাবে থাকতে পারে! হ্যাঁ পারেও বটে!
ভালো করে একবার দেখেই আমি বেলওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম জলের ড্রাম আছেতো আপনার?
-হ্যাঁ আছে পিছনে, কিন্তু কেন? কি করবেন?
-(বিড়বিড় করে) না মানে রুপের যা তেজ যদি আগুন ধরে যায়?
-কি বললেন?
সাথে সাথেই আমি বল্লাম আমাকে বরফ বেশি দিয়ে আরেক গ্লাস শরবত দাও, বড্ড পেট খারাপ আমার- আর হ্যাঁ গ্লাসগুলি ভালো করে ধুয়ে দিয়ো কেমন, সারাদিন কত মানুষ এইসব গ্লাসে খায় তাদের এঁটো…
বলতেই- ভূমি তার ফোকলা দাঁতে হি হি হি হেসে উঠলো। অদূরেই থাকা মুচকি হাসলেন ভূমির মা’ও
শুধু দুজন মানুষ চরম রাগে অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকালো-
ভ্যাবাচ্যাকা বেলওয়ালা, আর ভূমির আণ্টি…
আমি-! ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর বলে ঢক…ঢক…ঢক… আহ’হা…!!

আপ্পি হ্যান্স

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট