খাবারের মধ্যে যে প্রানশক্তি নিহিত আছে, তাকেই আমরা সহজ ভাষায় বলি ভিটামিন বা খাদ্যপ্রান। শ্বেতসার জাতীয় বা স্নেহ জাতীয় খাবার যে পরিমাণ আমাদের শরীরের পক্ষে প্রয়োজন তার তুলনায় খাদ্যপ্রানের পরিমান আনেক কম, কিন্তু আবার অন্যদিকে খাদ্যপ্রানের সাহায্য ব্যাতিরেকে ছানা জাতীয়, শ্বেতসার জাতীয় ও চর্বি জাতীয় খাবার যথাযথ ভাবে কার্্যতকরী হতে পারে না। এদের অভাবে আমাদের দেহ যন্ত্র হয়ে যায় অচল।
ভিটামিন দু ভাগে বিভক্ত-
চর্বি দ্রবনীয়- ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ এবং ‘কে’।
জলে দ্রবনীয় – ভিটামিন ‘বি কমপ্লেক্স’, ‘সি’।
ভিটামিন ‘এ’(Vitamin A)-প্রয়োজনীয়তা
ইহা দেহের বৃদ্ধির সহায়ক, এর অভাবে শিশুকালে ও কৈশোরে দেহের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, রাত্র্যন্ধরোগ, চর্মরোগ, ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।
চোখের কার্যকারিতার জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি।
ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজনীয় মাত্রায় দেহে থাকলে কোন সংক্রামক ব্যাধি সহজে দেহকে আক্রমণ করতে পারে না।
ভিটামিন ‘এ’ – র উৎস
দেহ মধ্যস্থ চর্বির সঙ্গে মিশে এই ভিটামিন দেহের মধ্যে সঞ্চিত থাকে।
মায়ের দেহের ‘এ’ ভিটামিন মাতৃ দুগ্ধের সঙ্গে মিশে শিশুদের পুষ্টির যোগান দেয়।
জীবদেহের চর্বি ও লিভারে ভিটামিন ‘এ’ সঞ্চিত থাকে।
বিভিন্ন শাক সবজি-লালশাক,কলমিশাক, মেথিশাক ছোলাশাক,পালংশাক, বাঁধাকপি,গাজর।
ফল- পাকা আম, পেঁপে, কাঁঠাল, কমলালেবু ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘এ’ সঞ্চিত থাকে।
ভিটামিন ‘ডি’(Vitamin B)-র প্রয়োজণীয়তা
দেহের অস্থি গঠনের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কাজে এই ভিটামিন বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
এই ভিটামিনের অভাবে রিকেট রোগ সৃষ্টি হয়।
মায়ের দেহে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ‘ডি’ না থাকলে শিশুর দেহের অস্থি ঠিক ঠিক ভাবে গঠিত হতে পারে না, ফলে শিশুদের উপযুক্ত সময়ে দাঁড়ান বা হাঁটা হয়ে ওঠে না। দাঁতের গঠনের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ বিশেষ প্রয়োজনীয়।
ভিটামিন ‘ডি’ – র উৎস
সবুজ শাক পাতায়, দুধ ও চর্বি জাতীয় খাবারে মানুষের উপযোগী ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
মাছ ও জীবজন্তুর চর্বিতে ও লিভারে যথেষ্ট পরিমাণে ‘ডি’ ভিটামিন জমা থাকে।
ডিমের হলুদ অংশে যথেষ্ট পরিমাণে ‘ডি’ ভিটামিন জমা থাকে।
সূর্যরশ্মি ভিটামিন ‘ডি’ সংগ্রহের সহজতম উপায়। সূর্যরশ্মির প্রভাবে চামড়ার তৈলাক্ত পদার্থ গরম হয়ে ভিটামিন ‘ডি’ তে পরিণত হয়।
ভিটামিন ‘ই’(Vitamin E)-র প্রয়োজণীয়তা
এই ভিটামিন দেহের তন্তু গঠনের বিশেষ সহায়ক।
এর অভাবে নারী ও পুরুষ সন্তান লাভে বঞ্চিত হয়।
ভিটামিন ‘ই’ – র উৎস
আমিষ ও নিরামিষ সর্বপ্রকার খাবারের চর্বি অংশে এই ভিটামিন বিদ্যমান।
কমলালেবু, কলা, শাক-সবজি ইত্যাদিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
ভিটামিন ‘কে’(Vitamin K)-র প্রয়োজণীয়তা
দেহে রক্তপাত হলে রক্তের জমাট বাঁধানোর কাজে ভিটামিন ‘কে’ প্রধান সহায়ক।
সন্তান সম্ভবা ও স্তন্য দায়িনী মাতাদের এই ভিটামিন অতি প্রয়োজনীয়।
এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের সময়মত বৃদ্ধি হয় না।
এই ভিটামিন অস্থি গঠন ও সংরক্ষনে বিশেষ সহায়ক।
ভিটামিন ‘কে’-র উৎস
সবুজ শাকপাতা, টমেটো, সয়াবীন, ফুলকপি,বাঁধাকপি,পালংশাক ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন ‘কে’ প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান।
ফল ও শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যে এই ভিটামিন থাকে।