হাওড়া,আমতা: আর্থিক অনটন স্বচ্ছল জীবন যাপনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি শিক্ষার মাধ্যমে নতুন স্বপ্ন দেখার চেষ্টায়। ভেঙে যায়নি শিমুলের স্বপ্ন। বরং আরও দৃঢ় করেছিল সেই ইচ্ছাকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিল সবাইকে।আমতার উদং উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবছর উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে ছিল শিমুল চক্রবর্তী। বাজারে আনাজ বিক্রিতাকে কাজে সহায়তা করে পরিবারের অন্ন অন্য যোগাতো শিমুল। উচ্চমাধ্যমিকে ওর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৪২৯। বাংলায় ৯২,ইংরাজিতে ৫৭,ইতিহাসে ৮১, ভূগোলে ৮৭, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৫ ও সংস্কৃতে ৮৪ পেয়েছে।
জানাগেছে শিমুলের বাড়ি আমতা উদং গ্রামে।দু’বছর আগে বাবাকে হারিয়ে অদ্ভুত এক আঁধারের সম্মুখীন হতে হয় পরিবারকে। সংসারের হাল ধরতে বাজারে সবজি বিক্রেতাকে সহায়তা কাজে নেমে পড়তে হয় শিমুলকে। শুরু হয় মেধাবী ছাত্রের অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার এক অদম্য লড়াই।লড়াইয়ের শুরু হয় ভোর চারটে থেকে সকাল দ’শ টা পর্যন্ত। বাজারে বেলা দশটা পর্যন্ত সবজি বিক্রেতার কাজে সহায়তা করে তারপর কোনোরকমে দু’মুঠো ভাত খেয়ে স্কুল। স্কুল থেকে ফিরেই আবারও তাকে ছুটতে হয় সবজি বাজারে।সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পড়াশোনা করে নতুন স্বপ্ন দেখার লড়াই।
তারপর ফের ভোরে ছুটে চলা বাজারে। এটাই ছিল ওর প্রত্যেক দিনের কঠোর সংগ্রাম।শিমুলের মা কল্পনা চক্রবর্তী বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাসিক আয় ৬০০ টাকা। ছেলের আয় বাজারে কাজ করে দৈনিক ৫০ টাকা।মাসিক আয় ২১০০ টাকাতে চলে আমাদের সংসার। শুনে অনেকটা অবাক হলেও এটাই কঠিন বাস্তব শিমুলের।চরম আর্থিক অনটনের মাঝেও পরিবারের সকল দায়িত্বভার গ্রহণ করেও উচ্চমাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিল গোটা রাজ্যবাসীকে। শিমুলের এই সাফল্যে খুশি এলাকার মানুষ। স্কুলের শিক্ষক থেকে পাড়ার সকলে শিমুলের এই লড়াইয়ে কে কুর্নিশ জানিয়েছে।শিমুলের ইচ্ছা, ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে সে শিক্ষকতা করে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে চায়।কিন্তু সেই লড়াইয়ে কীভাবে সে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে,কীভাবে পড়াশোনার খরচ সে চালাবে,তা নিয়ে সে অত্যন্ত চিন্তিত।