শুন্যতেও ও শক্তি! রাজ্যজুড়ে পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার বামেদের


রবিবার,২৬/০৫/২০১৯
611

নিজস্ব প্রতিবেদক ---

বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্ক: সুন্নতে ও শক্তি! রাজ্যের প্রায় দেড় শতাধিক পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করল বামেরা । ২৩ মের নির্বাচনী ফলাফল বামপন্থীদের আশাহত হওয়ার মতো। কিন্তু মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ বামপন্থী আন্দোলন, লালঝান্ডার কাজ থামলে চলে না। ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্যের নানা প্রান্তে তৃণমূলী সন্ত্রাসের দখল হওয়া পার্টি দপ্তর নতুন করে খোলার উদ্যোগ নিলেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। মানুষের সমর্থনও মিলল তাতে।

উত্তরবঙ্গে কোচবিহার থেকে শুরু করে মধ্যবঙ্গে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ব্লকে কিংবা দক্ষিণবঙ্গে উত্তর ২৪পরগনার দত্তপুকুরে অথবা হুগলীর শ্রীরামপুরে ফের পার্টি দপ্তরে লালঝান্ডা উড়ল। বছরের পর বছর তৃণমূলী আক্রমণের মুখে বন্ধ থাকার পর সিপিআই(এম) এই দপ্তরগুলি চালু করতে কোথাও গ্রামের সাধারণ মানুষ চাঁদা তুলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

রাজ্যের নানা প্রান্তে হামলা, আক্রমণ চালানো তৃণমূলী নৈরাজ্যের বাহিনী নির্বাচনে বেশ খানিকটাই ব্যাকফুটে। তাই জবরদস্তি জুলুম চালিয়ে দখল করা পার্টি দপ্তর এবার ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হল। কোচবিহারের দিনহাটার ভেটাগুড়ি, প্রান্তিক বাজার ও নিগমনগরের তিনটি পার্টি অফিস ২০১৬ সালে জবরদস্তি দখল নিয়েছিল তৃণমূলীরা। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পার্টিকর্মীরা দল বেঁধে একের পর এক পার্টি দপ্তর দখলমুক্ত করে লালঝান্ডা টানিয়ে দেন। শুধু পার্টিকর্মী সমর্থকেরা নন, সাধারণ মানুষও ফের পার্টি দপ্তর দখলমুক্ত করে চালু করায় সমর্থন জানিয়েছেন। শুধু দিনহাটা কেন, কোচবিহারের মাথাভাঙাতেও বৃহস্পতিবার তৃণমূলী দখলমুক্ত হলো পার্টিকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে। এদিন মাথাভাঙা শহর লাগোয়া সিতাই মোড়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর তৃণমূলীরা সিপিআই(এম) দপ্তর দখল করেছিল। সেই পার্টি অফিসেই পার্টিকর্মীরা লালঝান্ডা উড়িয়ে দেন। এই পার্টি অফিস তৃণমূলীরা জুলুমে দখল করে ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। এদিন পার্টির এরিয়া কমিটির সম্পাদক মকসেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামীদিনে এই অফিস থেকে দলের কাজকর্ম চলবে আগের মতই।

এদিকে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ২নং ব্লকের ঢেকা গ্রাম পঞ্চয়েতের অন্তর্গত লোকপাড়া গ্রামের লালঝান্ডার দপ্তরও এই সময়ে দখলমুক্ত করা হলো। অতীতে পার্টির লোকাল কমিটির দপ্তর ছিল এটা। ২০০৯-১০ সাল নাগাদ রাজ্যে হিংসার রাজনীতি চালু করার সময়েই এমন একটা লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তৃণমূলীরা বন্ধ করে দিয়েছিল এই পার্টির কার্যালয়। একইসঙ্গে পার্টির কর্মী-নেতৃত্বের ওপর হামলা, আক্রমণও চলেছিল। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল পার্টি কর্মীদের। তৃণমূলী সন্ত্রাসে দীর্ঘদিন পার্টি অফিস বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে পার্টি কর্মীদের উদ্যোগে কিছুদিন খোলা হয়েছিল এই অফিস। কিন্তু ঐ বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর ফের তৃণমূলী হামলায় বন্ধ হয়ে যায় এই দপ্তর। এই পার্টি দপ্তরই ফের চালু হলো। শুধু তাই নয়, এলাকার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে পার্টি অফিসের ভেতরে খারাপ হওয়া কল, টিভি এসব মেরামতি হলো। এদিন উত্তর ২৪পরগনাতেও দত্তপুকুরে লালঝান্ডার একটি দপ্তর তৃণমূলী দখলমুক্ত হয়েছে পার্টিকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে।

এদিকে লোকসভা ভোটের ফলাফলে রাজ্যের শাসকদলের ভরাডুবির আঁচে ফের তৃণমূলী আক্রোশ ঝরে পড়ল লালঝান্ডার ওপরেই। গতকাল পুরোদস্তুর ফল প্রকাশ হতে না হতেই উত্তর ২৪পরগনার সোদপুরের ১৪নং ওয়ার্ড এলাকায় সিপিআই(এম)’র শাখা অফিসে হামলা, আক্রমণ চালায় তৃণমূলীরা। পার্টির পানিহাটি ১নং এরিয়া কমিটির অন্তর্গত ১৪/১ শাখা দপ্তরেও ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূলীরা। রেল পার্কের উলটোদিকে ঈশ্বর চ্যাটার্জি রোডের ওপর এই পার্টি অফিসের দরজা ভেঙে ফেলা হয়, ফ্লেক্স, পতাকা এমনকি শহীদ বেদীতেও টাঙানো পতাকা ছিঁড়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এই এলাকাতেই ১৪নং ওয়ার্ডে প্রাইমারি স্কুলের বুথে বসেছিলেন যে পার্টিকর্মী তাঁর বাড়িতেও হামলা, আক্রমণ চালিয়েছে তৃণমূলীরা। ভোটের ফলাফলে দমদম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হওয়ার পরই পানিহাটিতে সিপিআই(এম)’র অফিস ভাঙচুর ও এজেন্টের ওপর এই আক্রমণ চালায় তৃণমূলীরা। এদিন খড়দহ থানায় পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে খড়দহ থানার পুলিশ এলেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

গতকালই ভোটের ফল প্রকাশের শ্রীরামপুরের মাহেশে সিপিআই(এম)’র দপ্তর দখল করেছিল তৃণমূলীরা। কিন্তু হামলা আক্রমণে গুটিয়ে যাননি পার্টিকর্মীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফের পার্টিকর্মীরা ঐ অফিস দখলমুক্ত করলেন। গতকাল রাত ৯টা নাগাদ মাহেশ এলাকায় জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দীর্ঘ ৭০বছরের পুরানো এই পার্টি অফিস তৃণমূলীরা দখল করে দরজায় তালা দেয় এবং তৃণমূলের ঝান্ডা লাগিয়ে দেয়। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার সকাল থেকেই পার্টিকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এরপর এদিন সন্ধ্যায় তৃণমূলীদের লাগানো তালা ভেঙে পার্টি অফিস দখলমুক্ত করেন পার্টিকর্মীরা। এরপর ঐ অফিসের সামনেই পার্টি নেতৃত্ব সভা করেন এবং তৃণমূল নেতাকে ডেকে তাদের পতাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ভোটের ফলাফলের জেরে গত ২০১১সালে যেমন তৃণমূলী হামলা, আক্রমণ চলেছিল, তেমনই এবার বিজেপি-র হামলা, আক্রমণও শুরু হলো রাজ্যের বেশকিছু জায়গায়। কোচবিহারে বিভিন্ন এলাকায় ২০১১ ও ২০১৬-র মতোই বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলের পার্টি অফিস জ্বালানো, ভাঙচুর চালানোর কর্মসূচিতে নেমে পড়ল। শিতলকুচি, সিতাই, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জে একের পর এক তৃণমূলের অফিস দখলের কর্মসূচিতে নামল বিজেপি কর্মীরা। হামলাকারীদের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। এদিন সিতাইতে তৃণমূলের অফিস পুড়িয়ে দেয় বিজেপি কর্মীরা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একইরকম হামলা, চলছে। তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি, দোকান ভাঙচুরের খবরও মিলছে নানা জায়গা থেকে। শীতলকুচির তৃণমূল নেতা আবেদ আলি মিয়া এদিন স্বীকার করেন ব্লকের নানা জায়গায় তাদের দলীয় অফিসে হয় তালা ঝোলানো হয়েছে, নতুবা ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। তাঁরই স্বীকারোক্তি ২০১১ সালে বামফ্রন্ট হেরে যাওয়ার পর তৃণমূলীরা একই কায়দায় একের পর এক বামপন্থীদের অফিস দখল ভাঙচুর লুট করেছিল। তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের মহিষকুচি-১, গ্রাম পালিকা, ফেরশাবাড়ি, ঘেদেরচর ঘোনাপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে চলছে বিজেপি কর্মীদের হামলা। সংখ্যালঘু পরিবার আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। প্রশাসন, পুলিশ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটলেও কোনও ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেয়নি।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট