ইফতার পার্টি 


রবিবার,২৬/০৫/২০১৯
4231

আপ্পি হ্যান্স---

ইফতার পার্টি 

হুররে- ইফতার পার্টি ইফতার পার্টি, বিকেল হতে না হতেই পিচ্চি মেয়েটি বলতে লাগল মা মা -ইফতার পার্টি!
-মা(একটু অবাক হয়ে) কিরে পার্টির থেকে ইফতারি দেয় নাকি, তবে খুব ভালো হয় তো।
-হি হি হি… কী বোকা! আজকে পাসের চাচাদের বাড়ি ইফতার পার্টি। অনেক লোক খাবে, হেভ্যি প্যান্ডেল করে সাজিয়েছে উঠোন।
মা- মা জানো! কত্ত কত ফল এসেছে- আপেল, বেদানা, খেজুর, পেয়ারা, শসা, আঙুর । অনেক মিষ্টি- অনেক রকম চপ-চাপাটি আরো কতো কি। আবার বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে! কিন্তু আমাদের ঢুকতে দিচ্ছেনা ওদিকে,খুব পাজি ওরা!ওদের নাকি অনেক নামি দামি দামি আসবে মেহমান আসবে নেতা আসবে, বাচ্চা মেয়েটি বলেই চলেছে এসব।

-উফ কি মুশকিল ওরা ধনি মানুষ, অনেক নামি দামি মেহমান তো থাকবে ওদের ইফতারি দেখে তোর জিব লটকাচ্ছে কেন? তোর বাপের কি জমিদারী আছে, যে এসব আমায় বলিস, যা ভাগ! তোকে যা বললাম তাই কর চাপকল থেকে এক জগ পানি নিয়ে আয় সারাদিনের পর ঠান্ডা পানি একটু খেলে গলাটা শান্তি পায়! এক্ষুনি নিয়ে আয় সময় হয়ে এলো- তোর আব্বু ফিরবে।

পিচ্চিমেয়েটা উচ্ছ্বল থাকে সারাদিন, অনেক্ষন থেকে অপেক্ষায় আছে আজ যেন বেশি খিদে ধরেছে পেটে আর সহ্য হয়না, কখন যে আব্বু তারজন্যে ইফতার নিয়ে ফিরবে, এসব ভাবতে ভাবতে কলের জল এনেই দেখে ঝুপড়ী ঘেরা বাড়ির সামনে আব্বুর রিক্সা বাঁধা। রোজার মাসে সবাই সবার বাড়িতে কিছুনা কিছু ভালো-মন্দ আনার চেষ্টা করে, স্বাভাবিক ভাবে আশায় বুক বেঁধে ছুটে এলো টুসি।

সন্ধ্যের আজানের আর দেরি নেই- রোজা ভাঙার এটাই মজা সারাদিন উপসের পরে দারুণ সব খাবার দিয়ে ইফতারি করা হয়, ভাবতেই ভালো লাগে-
ওদিকে টুসির মা কিছু মুড়ি, সিদ্ধছোলা, আর চালের আটার হালকা পায়েস করে ইফতারি রেডি করছে, সগির মিঞা কেমন যেন আজ মনমরা হয়ে বসে আছে
-আব্বু আব্বু আমি আপেল খাবো। আব্বু আমায় একটা আপেল এনে দেবা! আমি ইফতার খাবো, আব্বু আমায় আপেল আর লেবু এনে দাও মিষ্টি এনে দাও., রোজা রাখলে এমন হয় বড় মানুষেরও ভালো কিছু দেখলেই খেতে ইচ্ছে হয়, আর সে তো বাচ্চা একটা মেয়ে একের পর এক বায়না ধরছিল টুসি।
সারাদিন রিক্সা টেনে রোজা রেখে আর পারছিলনা সাগির মিঞা। তারপর যা আয় হলো প্রায় পুরোটাই গেছে বুড়ি মায়ের ঔষধ আর রিক্সা সারাই করতে আজ হাত ছিল পুরই খালি। একটু বাজার করবে, ইফতার কিনবে সে আর হয়ে ওঠেনি।

-এখন না। আরেকদিন এনে দেব, কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে সগির- এখন চুপ কর ঘ্যানঘ্যান করা এসময় ভাল্লাগেনা । আসলে মেয়ের দাবী যে অবান্তর নয় তা পিতা জানে কিন্তু নিরুপায় মেয়ের আবদারের সামনে অপ্রস্তুত সে, তার মুখের দিকে তাকাতে পারছেনা।

-না না, আমি জানিনা- তুমি আমায় আপেল এনে দেবে কিনা বল.. মিষ্টি এনে দেবে কিনা বলো…নাছোড় মেয়ে বায়না করেই যাচ্ছে, আর চিৎকার করছে…না না.. আমার আপেল চাই, আমার মিষ্টি চাই, আমি ইফতার খাবো।

-বাঁ হাত দিয়ে সজোরে একটা চড় কসিয়ে দিল সগির, আছাড় খেয়ে মায়ের কোলে গিয়ে পড়লো ছোট্ট মেয়েটা। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে কিছু বলেনি সে, শুধু মায়ের কাছে মুখগোঁজ করে ফোঁপাচ্ছিল। ‘উচিৎ শিক্ষা’ এমনই একটা জিনিষ যে এতটুকু মেয়েও বুঝে যায় তাদের প্রত্যাশার সীমারেখা কতখানি।
-মেয়েটা সারাদিন রোজা রেখে একটা বায়না করেছে কিনা -তাতে মুরদ হয়না আবার এভাবে মারলে? কইফিয়েত চাইল সগিরের স্ত্রী, অপরাধী সগির চাইল নিয়তির কাছে…

সারারাত কিছুই খেলোনা মেয়ে, খেলোনা মা বাবাও।

রাতে সগির নামাজ পড়ে ভেজা চোখে দোয়া চাইল নিজের অপারগতা প্রকাশ করে- হে খোদা রহমতের মাস এই রমজান, বর্কতের মাস, ক্ষমার মাস। আমাকে ক্ষমা করো… আর রহম করো আমার পরিবারের উপর, আমি আর কতো চেষ্টা করতে পারি! আমাকে ধৈর্য দাও…ক্ষমতা দাও দুপয়সা রোজগার করার।
সকাল বেলা রিক্সা নিয়ে আর একবুক আশা নিয়ে বের হলো সগির- প্রচণ্ড পরিশ্রমে করে ভাড়াও পেল।
ফেরার পথে বাজারে গেল। ফলের দোকান দেখে উদগ্রীব সগিরের চোখ। সোজা গিয়ে কয়টা টকটকা লাল আপেল নিল; সঙ্গে কিছু আঙুর, আর শসা, খেজুর, একটু মিষ্টি।

বিকেলে ঠিক ইফতারের আগে সগির ঘরে ফিরল, আজ সে বেশ খুশি ইফতারি কিনতে পেরে বেশ তৃপ্ত পিতা।
-মা.., মা কই আমার, দেখ আমি তোর জন্যে কি এনেছি…মা

ছুপ মেরে গাল ফুলিয়ে গুমরে আছে টুসি।সারাদিন কারো সাথে এতটুকু কথা বলেনি, কচি বুকে কষ্ট আর অভিমানের মস্ত পাহাড় ধরে আছে,,
-মা.., রাগ করেছিস আমার মা। আমি খুব খারাপ, না মা? দেখ তোর জন্যে লাল আপেল আর মিষ্টি এনেছি।
গুমরে এককোণে দাঁড়িয়ে আছে ফোলা ফোলা টুকটুকে মুখের টুসি।
টুসির মা বলে-

-এই মেয়ে! কালতো খুব ইফতার পার্টি ইফতার পার্টি করছিলি। খাবো খাবো করছিলি- আরে বোকা ওরা হলো বড়লোক, আমরা হলাম গরিব। আমদের ইফতার পার্টি হয়না… তোর আব্বু এত কষ্ট করে এনেছে, যা মা- আব্বুর কাছে যা,,

টুসি আব্বুর দিকে মুখ তুলে চায়। আবার গাল ফুলিয়ে মুখ নিচু করে থাকে, বোঝা যায় তার অভিমান এতটুকু কমেনি,
-আয় মা, কাল খুব ভুল করে ফেলেছিলাম মা। একে তো কিছুই আনতে পারিনি, আবার তোর গায় হাত দিলাম! আজকে তুই আমায় যা বলবি আমি শুনব। দরকার হলে আজকে তুই আমায় চড় মেরে শোধ তুলে নিবি, আয় মা.. আমায় একটু মার দিকিনি…মেয়ের হাতের নাগালে হাঁটু মুড়ে বসে সগির মিঞা চোখ বন্ধ করে গাল পেতে আছে সে, দু হাতে ভালবাসার থলি ভরা ইফতার-

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে টুসি… বুকে জড়িয়ে ধরে আব্বুকে। দুই গালে দুটো চুমা খেতেই- হাঁও-মাও করে কেঁদে ফেলে সগির। অনেক্ষন বুকে জড়িয়ে রাখে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। কচি হাতে পিতার মুখ মুছে দেয় টুসি সেও কাঁদে। ছগিরের স্ত্রী কাপড়ে মুখ গুঁজে থাকে। চোখদুটি ভেসে যায় খালি…।
আজান শুরু হয়েছে – আল্লাহু’আকবর….আল্লাহু’আকবর…!

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট