যাদবপুরের ভোটের নির্ণায়ক হয়ে উঠবে ভাঙড়?

বিশেষ সংবাদদাতা: আগামী ১৯ মে সপ্তম তথা শেষ দফায় নিজেদের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা। রাজ্যের হাই ভোল্টেজ লোকসভা কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম এই যাদবপুর। ত্রিমুখি লড়াইয়ে তৃণমূলের অভিনেত্রী প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। প্রতিপক্ষ বিজেপির অনুপম হাজরা ও সিপিএমের বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। গ্রীষ্মের পারদ যত চড়ছে যাদবপুরের রাজনৈতিক উত্তাপও তত বাড়ছে।

যাদবপুরের মধ্যেই ভাঙড় বিধানসভা ক্ষেত্র। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে এই ভাঙড় থেকেই ৬০ হাজারেরও বেশি ভোটে লিড পেয়েছিলেন তৃণমূলের সুগত বসু। পরবর্তী সময়ে নানান ঘটনায় বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে কলকাতা লাগোয়া এই গ্রামীন এলাকা। পাওয়ার গ্রিডের প্রতিবাদে জমি রক্ষার আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে ভাঙড়ের মাটি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে তৃণমূলের দাপট ছিল ভাঙড়ের সর্বত্রই।

কিন্তু পাওয়ার গ্রিড ইস্যুতে জমি আন্দোলনের জেরে এক লহমায় অনেকটাই জমি হারায় রাজ্যের শাসক দল। গত পঞ্চায়েত ভোটে তা প্রতিফলিত হয়। পায়ের তলার হারানো মাটি কিছুটা হলেও উদ্ধার করে নেয় ক্ষমতা হারানো বামফ্রন্ট। আর এবারের লোকসভা ভোটে কৃষি জমি ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সরাসরি সমর্থন করছে বাম প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে। যে লাল পতাকা একসময় ভ্যানিস হয়ে গিয়েছিল ভাঙড় থেকে এবারের ভোটে আবারও সেই লালের মূর্তিমান উপস্থিতি।

সেই সঙ্গে তাদের সমর্থনকারী জমি-জীবিকা কমিটির নীল-সাদা পতাকার আধিক্যও। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের সময় পাড়ার মোড়ে মোড়ে আন্দোলনকারীরা মাঁচা বেঁধেছিল গ্রাম পাহাড়ার জন্য। এখন সেইসব মাঁচায় বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য চিহ্ণিত। অবশ্য বামেদের এই উপস্থিতিকে পাত্তা দিতে নারাজ এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। আন্দালনকারীদের থেকে এলাকার মানুষ এখন মুখ সরিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

উল্টে সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন জমি কমিটির নেতাদের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়ান জমি আন্দোলনের নেতা মির্জা হাসান। রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে থাকলেও সরকার পক্ষ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতায় পাওয়ার গ্রিড জট কেটেছে। প্রকল্পের কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এগোচ্ছে। যার সুফল শাসকের ঘরেই ঢুকবে বলে দাবি তৃণমূল নেতাদের। অবশ্য বেসুরো এলাকার বহু বাসিন্দাই।

ক্ষোভ শাসকের বিরুদ্ধে। অান্দোলন অস্তমিত। প্রকল্প চত্বরে হাঁকডাক, কাজের ব্যাস্ততা। তবে পুরোনো রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে ভাঙড়। মফিজুল, হাফিজুর, আলমগীরদের স্মরণে গড়ে উঠেছে স্মৃতিস্তম্ভ। ভাঙড় আছে ভাঙড়েই। পোলেরহাট বাদ দিলে দেওয়াল লিখনের লড়াইয়ে শুধু মিমি। দেখা নেই অন্য কোন বিরোধীর।

রাজ্য জুড়ে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ঘটলেও একপ্রকার অদৃশ্য এই ভাঙড় বিধানসভা এলাকায়। গত লোকসভা ভোটের মতই বড় ব্যাবধানে লিড পাবেন দলীয় প্রার্থী, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। তবে জমি আন্দোলন অস্তমিত হলেও ঘা এখনও শুকায় নি। তার প্রভাব ভোট বাক্সে পড়ে কিনা তা সময়ই জবাব দেবে।

Susmita Sarkar

Share
Published by
Susmita Sarkar

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

3 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

3 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

3 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

3 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

3 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

3 days ago