Categories: রাজ্য

ছোট্ট মেয়ে বাবার অপেক্ষায়, অ্যালবামেই পড়ে রইল বাবলুর স্মৃতি

বাউড়িয়া: গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পাক মদদপুষ্ট জঙ্গি হামলায় ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। তারই মধ্যে একজন বাউড়িয়ার চককাশিপুর গ্রামের রাজবংশী পাড়ার ৩৯ বছরের বাবলু সাঁতরা। ঘটনার দিন সকালেও বৃদ্ধ মা বনমালা দেবীকে ফোন করে ছোট মেয়ে পিয়ালের খবর নিয়েছিল। মাকে বলেছিল আর কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি আসবে বেরোতে হবে শ্রীনগরে।তরই মধ্যে দুপুর বেলায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রান কেড়ে নিল বাবলু সাঁতরার। বিকেল পাঁচটা নাগাদ জম্বু সেনা কন্ট্রোল রুম থেকে ফোন আসে স্ত্রী মিতা সাঁতরার কাছে, জানতে চাওয়া হয় বাবলুর ফোন নম্বর।

স্ত্রী মিতার বুকের ভিতরটা ছাঁক করে উঠেছিল তখনই। বিপদ আঁচ করতে পেরেছিল। শাশুড়িকে শুধুই বলেছিল একজন ফোন করে তোমার ছেলের ফোন নাম্বার চাইছে কেন?তখন স্ত্রী ঘরের ভিতরে ছুটে গিয়ে টিভি চালায়। ততক্ষনে টেলিভিশনের পর্দায় শুরু হয়ে গিয়েছে পুলওয়ামার ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা। এক নিমেষেই যেন গোটা পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যায় বাউরিয়ার চককাশিপুর গ্রামের বাবলু সাঁতরা স্ত্রীর কাছে। তারপর থেকে ব্যাকিহারা তিনি। শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ ফের ফোন আসে জম্বু সেনা কন্ট্রোল রুম থেকে।

তখনই চরম খবরটা আছে,তাকেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গিদের বিস্ফোরনে ৪৪ জন শহীদ জওয়ানদের মধ্যে একজন বাবলু সাঁতরা। তিনি ছিলেন ৩৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান। বাবলুরা চার বোন,দুই ভাই। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবলু বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পরে মাছ বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন বাবলুর ঠাকুমা।পড়ার ফাঁকে বাবলুও ঠাকুমাকে মাছ বিক্রিতে সাহায্য করতেন। ২০০০ সালে সিআরপিএফ জওয়ানে যোগ দেন তিনি। সেনাবাহিনীর চাকরি পাওয়ার পরে, দিন আনা দিন খাওয়া সংসারের হাল ফিরে ছিল কিছুটা।

তিনিই দুই বোনের বিয়ে দেন। দোতলা নতুন বাড়িও করেছেন। বছর আটেক আগে নিজে বিয়ে করেন। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সংসার। ছোট্ট পিয়াল সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখতেন তিনি।দেড় মাস আগে বাড়িতে এসে বাড়ির বাইরের অংশের প্লাস্টার করে গিয়েছিলেন। ২-রা মার্চ আবার বাড়িতে এসে বাড়ি রং করবে বলে গিয়েছিলেন স্ত্রীকে।তার আগেই বিবর্ণ হয়ে গেল পুরো পরিবার।

আর মাত্র দ’শ মাস পরেই অবসর নিয়ার কথা ছিল।স্ত্রীকে বলে গিয়েছিল আর মাত্র কয়েক মাস পরেই আমরা এক সাথে সারাজীবন থাকবো। তার আগেই বাড়িতে ফিরলো তবে একটি নিথর দেহ।ছোটো থেকেই বাবলু পাড়ার সকল ছেলেদের সঙ্গে মিশে খেলাধুলা করতো। ছোটো বেলা থেকে বাবলু ভলিবল খেলায় তুখোড় ছিলেন। নতুন বাড়ির সামনে ভলিবলের কোটও কেটে ছিল।কারন তিনি অবসর নেওয়ার পরে ভলিবল খেলবে বলে।

বাবলু যে আর কোনো দিন খেলবে না কেউই মানতে পারছে না চককাশি গ্রামের মানুষরা। ছোট্ট মেয়ে বাবার অপেক্ষায়,তার বাবা যে আর কোনদিন ফিরবে না বুঝতেই পারছে না ছোট্ট পিয়াল। অ্যালবামেই পড়ে রইল শহীদ বাবলু সাঁতরার স্মৃতি।

Susmita Sarkar

Share
Published by
Susmita Sarkar

Recent Posts

মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের কড়া নজর: পর্যালোচনা বৈঠকে অমিত শাহ

মণিপুরের ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল নতুন দিল্লিতে…

15 hours ago

আদিবাসী সমাজের উন্নয়ন: প্রকল্প পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশেষ বৈঠক

আদিবাসী সমাজের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা…

15 hours ago

হাওড়া-ধর্মতলা মেট্রোতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে অপেক্ষার সময়

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবং সকাল ও সন্ধ্যার অফিসের ব্যস্ত সময়ে যাত্রী ভিড় সামাল দিতে মেট্রো রেল…

15 hours ago

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

3 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

4 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

4 days ago