ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে করতে গিয়ে ভয়াবহ রেল দূর্ঘটনায় মৃত্যু হল চাকুলিয়ার তিন শ্রমিকের। বারসই রেলস্টেশন থেকে সীমান্চল এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে শ্রমিকের কাজে কেউ দিল্লি, কেউ আগ্রা যাচ্ছিলেন। বিহারের হাজিপুরের কাছে রবিবার রেল দূর্ঘটনায় মারা যান বাংলার এই তিন শ্রমিক । তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এলাকার অনেকেই। তাঁরা কোনক্রমেই প্রাণে বেঁচে গেছেন। তাঁরাই তিন জনের দেহ সনাক্ত করে নিহতদের পরিবারকে খবর দেন। জানা গেছে, চাকুলিয়া থানার এলাকার নিহত তিন শ্রমিকের মধ্যে একজন মহিলা। তাঁর নাম বিবি সায়েদা (৪০)তিনি কোনা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী আইনাল হক আজ থেকে বিশ বছর আগে মারা গেছেন।
অভাবের তাড়নায় শ্রমিকের কাজ করতেন আগ্রায়। তাঁর পরিবারে এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। কিন্তু তাঁরা সবাই আলাদা থাকেন। বিবি সায়েদার বোন রাহেমা খাতুন বলেন, বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় দিদি আমাকে বলেছিলেন এবার যায়। তবে ফিরে এসে বাইরে কাজ করবো না। কিন্তু আমার দিদি এই ভাবে মারা যাবেন তা ভাবতে পারছি না। এদিকে অপর বাকি নিহত শ্রমিকরা হলেন মহঃ সামশুদ্দিন (২২) ও আনসার আলাম( ১৮) তাঁরা বিবি সায়েদার পাশের কামাত গ্রামের বাসিন্দা। মহঃ সামশুদ্দিনের পিতা মাতা এ পৃথিবীতে বেঁচে নেই।
তাঁর পরিবারে পাঁচ ভাই ও এক বোন রয়েছে। ভাই হিসেবে তিনি পাঁচ নম্বরে। ছোট বোন আকলিন খাতুনকে নিয়ে থাকতেন সামশুদ্দিন। তাঁরা খুব গরিব পরিবার। বোন বাদে সবাই বাইরে শ্রমিকের কাজ করেন। আর এক নিহত শ্রমিক আনসার আলাম চাকুলিয়ার হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনা খরচ জোগাড় করতে দিল্লি যাচ্ছিলেন আনসার।পানি পথে মুরগি ফার্মে কাজ করতেন তিনি। তাঁর বাবা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ছেলেকে বাইরে যেতে বারণ করেছিলাম। তুই যাসনে বাবা! কিন্তু ছেলেটা আমাকে এই ভাবে ছেড়ে চলে যাবে তা কোনদিন ভাবেনি।
এদিকে নিহত শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় নেমে আসে শোকের ছায়া। পাড়া প্রতিবেশীরা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রায়গঞ্জ লোক সভা কেন্দ্রের সাংসদ মহঃ সেলিম নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। চাকুলিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সেতাবুদ্দিন বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুব মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক। পরিবারকে সমবেদনা জানার কোন ভাষা নেই। আমরা সবাই তাঁদের পাশে রয়েছি বলে জানান তিনি।