উত্তর দিনাজপুর: এক সময় গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া কুটির শিল্প আবার পেয়েছে নতুন দিগন্ত। শিল্পায়ন ও উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই মমতার সরকার এগিয়ে চলেছে৷ ফলে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকেও৷ মৃৎশিল্পের উন্নয়নের খাতিরে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলো বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহন করেছে। ফলে আজ গ্রাম বাংলার মৃৎ শিল্পীরা নিজেদের তৈরি জিনিস পৌঁছে দিতে পারছে বিশ্বের দরবারে।
উল্লেখ্য উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ এর হাট পাড়ায় একসময় মাটির কাঁচা গন্ধে থাকত মাতোয়ারা। ব্যাস্ত কুমাররা হিম-শিম খেতেন চাহিদা মেটাতে। হাট বাজারে মাটির তৈজসপত্রের পসরা সাঁজিয়ে বসতেন মৃৎ শিল্পিরা। নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ছাড়াও শিশুদের খেলনা,সৌন্দর্য বর্ধন সামগ্রীসহ বিভিন্ন বাহারি মাটির তৈজসে পূর্ণ থাকত কুমারপাড়া।
ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প নির্মম বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় কিছু জরাজীর্ণ কুমোর পরিবার গুলো ধরে রেখে ছিল বাপ দাদার এই পেশা। তবে ২০১১ সালের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাত ধরে বাংলায় কারিগরদের তৈরি শিল্প আবারো পেয়েছে নতুন পদ মর্যাদা। মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগীতায় বাংলার কুটির শিল্পীদের নিজেদের তৈরি সামগ্রী বিশ্বের দরবারে পৌঁছাতে নানান ধরনের মেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফলে প্রতি বছর এই মেলা গুলোতে অনেক বেচাকেনা হচ্ছে, শিল্পীদের আয়ও ফলে বাড়ছে। কালিয়াগঞ্জের কুনোর হাট পাড়ার শিল্পীরা তাই এখন ব্যস্ত মেলা গুলোর জন্য আগাম নিজেদের তৈরি সামগ্রী প্রস্তুত করতে। কুণোর পাড়ার এক মৃৎ শিল্পী সাবিন্দ রায় জানান এবার তাদের তৈরি মাটির জিনিস শিলিগুড়ি মেলা তে যাচ্ছে।
বছরে বহু মেলা থাকায় তাদের এখন উপার্জন ও ভালই হচ্ছে। তিনি আরো জানান বর্তমানে মৃৎ শিল্পের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। মানুষ শৌখিনতার জন্য মাটির তৈরি জিনিসপত্র ঘরের বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে ঘরের শোভা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। এছাড়া বিভিন্ন অফিসে এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
তাই তাদের নিজস্ব কামার দ্বারা নিত্যনতুন ডিজাইনের মাটির জিনিস বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি সহযোগিতায় শিল্পীদের জন্য নানান মেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।ফলে তাদের তৈরি মাটির জিনিস কলকাতা, শিলিগুড়ি, দিল্লী, গোয়া সহ দেশ বিদেশের বহু প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।
কুমোর পাড়ার আরেক শিল্পী সুপাল রায় বললেন, মাঝে অনেকদিন কম চললেও ইদানিং বিক্রি একটু বেড়েছে। লোকজন সৌখিন আসবাবপত্র হিসেবেই মাটির জিনিসের বেশি ব্যবহার করছেন। ফলে এখন আগের থেকে অনেক টাই ভালো আছি।আরেক মৃৎ শিল্পী উরমিলা রায় বলেন তারা এখন ভীষন ব্যস্ত থাকেন।
বহু বহু মেলায় তাদের তৈরি মাটির প্রদীপ,ম্যাজিক লন্ঠন, মাটির বোতল, মাটির প্রদীপ, মাটির কাপ প্লেট,মাটির হ্যারিকেন , ইত্যাদির চাহিদা বেড়ে ই চলেছে।তাই তারা প্রতিদিন তাদের তৈরি নিত্য নতুন সামগ্রী তৈরি করতে ব্যস্ত থাকছেন।