আসছে বইমেলা, বইপ্রেমিদের জন্য আরও একটি উৎসব


রবিবার,২৭/০১/২০১৯
563

অ্যাপি হোসেন---

আসছে বইমেলা, আমরা যারা বইপ্রেমি তাদের আরেকটা উৎসব। পাঠক- লেখক প্রকাশক, আর প্রিয় প্রিয় বইয়ের সম্ভার এই নিয়ে আদানপ্রদান হয়ে আসছে বহুকাল থেকে। বই নিয়ে মানুষের যে উন্মাদনা আবেগ ও আকাঙ্ক্ষা তার সাথে সাহিত্যগত আবেদন- ও উপার্জনের দাবী মেনে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত হয় গ্রন্থমেলা। লেখক সাহিত্যিকদের সৃষ্টি’শব্দকে নির্বাচন করে তাদের সুন্দর ভাবে গ্রন্থরূপ দান করে পাঠকের হাতে তুলে দিতেই এই মহা সমারোহ ত্বথা মহা আয়োজন।

কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলা ২০১৯ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম। দেশি বিদেশি প্রায় ছয়শতাধিক স্টল নিয়ে আর লিটিল ম্যাগ প্যাভিলিয়ন সমেত বিশাল জায়গা জুড়ে কলকাতা সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক করুণাময়ীতে আয়োজিত হচ্ছে এবারের বইমেলা। অদ্ভুত রকমের অভিজ্ঞতা অর্জন হয় এই মেলাতে। সমস্ত দিন হাজারো বইয়ের সাথে পাঠকের পরিচয় ঘটছে- বিভিন্ন সাহিত্যিক- কবি, লেখক ও গুনিজনের যাতায়াত ও তাদের দর্শন লাভ করার সুযোগ ঘটবে মেলায়।

নতুন বইয়ের গন্ধ ও নাড়াচাড়া সর্বোপরি পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার সাথে সাথে পাঠকের মুখের যে পরিতৃপ্তি সে এক দারুণ ব্যাপার। প্রিয় বন্ধু বা পরিজনের উদ্দেশ্যে উপহার হিসেবে কিংবা একান্ত নিজের জন্যও পছন্দ করে বই কিনছে মানুষ, ভাবতেও কি যে ভালো লাগে, নিদারুণ আগ্রহে পাঠক ছুঁয়ে দেখছে প্রিয় লেখকের সৃষ্টি এবং হঠাৎই লক্ষ করা- সয়ং লেখক হাজির হয়েছে পাঠককূলের মাঝে! এর চেয়ে ভালো দৃশ্য আর কি হতে পারে? বইমেলার অপর নাম যে ‘মিলন মেলা’ তখন সেটা সার্থক হয়ে যায়।

প্রিয় কবি অথবা সাহিত্যিকের স্বাক্ষরিত বইটি পরম আদরের সাথে বুকে কোরে নিয়ে ফেরে পাঠক। বহুদিনের ইচ্ছে কোন দুষ্প্রাপ্য একটি বইকে নিজের সংগ্রহ করা অথচ সম্ভব হয়ে ওঠেনি, সমস্ত স্টল ঘুরে হঠাৎই সেই বইটি মিলে গেছে! তুমুল খুশি হচ্ছে পাঠক, শুভেচ্ছা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাচ্ছে এমন সব ঘটনা বইমেলায় একজন বিক্রেতা বা বইকর্মীদের কাছে যথেষ্ট মধুর স্মৃতি। বাবা মায়ের সাথে ছোট্ট ছোট্ট শিশু কিশোর, তাদের পছন্দের বই – দেশি বিদেশি রহস্য গল্প, গোয়েন্দা গল্প, স্কুলের সহায়ক কিংবা আধুনিক কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন ‘গেইমস’ হাতে পেয়ে নিদারুণ খুশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বড়ই সুন্দর দৃশ্য।

নতুন প্রেমিক- স্টল ঘুরে খুঁজে নিচ্ছে সবচেয়ে রোমান্টিক কবিতার বই- উপহার দেবে তার প্রিয়তমকে। নতুন কবি যথেষ্ঠ আগ্রহ এবং প্রত্যাশা নিয়ে স্টলে এসে বসে আছে তার পাঠকেরা আসবে- তার সন্তানতুল্য কাব্যগ্রন্থ স্পর্শ পাবে সুহুদ সুজনের, পরিচিত হতে হবে তাদের সঙ্গে হবে ভাবনার আদানপ্রদান,, একটু পুরনো একটু নামকরা লেখকেরা এসে খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে তার বইটা কেমন সাড়া পাচ্ছে। কিছু লিটিল ম্যাগের বই ও পত্রিকা উদগ্রীব হয়ে আছে তাদের বিভিন্ন সংখ্যা যাতে আরো কয়েকটা বেশি বিক্রি হয়।

বহুদূর থেকে,কিংবা বিদেশ থেকে এসেছে, ভিন রাজ্য থেকে এসেছে শুধুমাত্র প্রিয় মানুষগুলোকে ও তাদের সৃষ্টির অক্ষর ছুঁয়ে দেখতে। উদাসী মেয়ে একলা একলা ঘুরে বেড়াচ্ছে খুঁজে পাচ্ছেনা- একদম নতুন কলমে লেখা কোথায় যেন শুনেছিল বইটার নাম কিন্তু কবির নাম মনে নেই- প্রচণ্ড দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞেস করছে পাবে কিনা- উত্তরে যেই বলা হলো ‘আছে’ সে অমলিন হাসিটা সম্পদ হয়ে যায় স্মৃতিতে।

কখনো এমন হয়েছে যথেষ্ট পয়সা অবশিষ্ট নেই অথচ বেশ কিছু পছন্দের বই হাতছাড়া করতে মন চায়না, সে সময় তাকে ধার দিচ্ছে যে ছেলেটা সে বই কিনতে নয় শুধু ঘুরতে এসেছিল বোধহয়। এরকমই কত যে টুকরো টুকরো ছবি পাওয়া যায় মেলায় আর থাকে আগতদের অদ্ভুত সুখ ও পাঠকের নিরন্তর ভালোবাসা।

স্বপ্ন আর অনুভূতির অক্ষরগুলি মলাটবন্দী হয়ে নতুন রূপে অপেক্ষায় থাকে সেখানে- তাদের লালন করে সাজিয়ে রাখা এবং এক একটি ঠিকানা খুঁজে দেওয়া, লেখক-পাঠকের মুখের হাসি বিভিন্ন উদ্দেশ্য সফলতা কিংবা ব্যার্থতা সবমিলিয়ে এই মিলনোৎসবের সাথে একজন বইপ্রেমিক হিসেবে এত সবের সাক্ষী থাকতে পারা ও নিজেকে ঋদ্ধ করতে পারলে যথেষ্ট ভাগ্যবান বলে মনে হয়। পরিশেষে এটাই চাওয়ার সকলে বই কিনুন- কিনতে উৎসাহ দিন বই ভালো বাসুন, প্রিয়জনকে উপহার দিন প্রিয় বই সেই সাথে জ্ঞান ও অক্ষর অনুভবে সমৃদ্ধ হোক সবার জীবন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট