বাংলার ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব

বাংলার ঐতিহ্যবাহী হালখাতা ক্রমে আপামর বাঙালির কাছে উৎসবের তকমা আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে।হালখাতার আভিধানিক অর্থ করলে দাঁড়ায় নতুন বছরে নতুন হিসাব-নিকাশের খাতা।তবে বাংলা সন বঙ্গাব্দের সঙ্গে একেবারে মেলে না হালখাতা উৎসব।বঙ্গাব্দ বৈশাখ মাস দিয়ে শুরু হলেও হালখাতা হয় কিন্তু জৈষ্ঠ্য- আষাঢ় মাসে।ইদানিং আবার জৈষ্ঠ্য- আষাঢ়ের পাশাপাশি পৌষ-মাঘ মাসেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে হালখাতা।ছোট-বড় কিংম্বা মাঝারি ব্যাবসার অঙ্গ হয়ে উঠেছে এখনকার হালখাতা।বছরে দুবার উৎসবে মেতে ওঠেন ব্যাবসায়ী ও খদ্দেররা।

দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে হালখাতাকার্ড ছাপান ব্যাবসায়ীরা।তা নিজে গিয়ে অথবা লোক মারফৎ পৌঁছে দেওয়া হয় খদ্দেরের বাড়ীতে।তাতে লেখা থাকে অমুখ তারিখে আমার দোকানে শুভহালখাতা বা মহরৎ অনুষ্ঠিত হবে।আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।পৌঁষ মাসের হালখাতা যখন হয়,তখন ইংরেজি জানুয়ারি মাস চলে।তাই শুভ ইংরেজি নব বর্ষের সাদর সম্ভাষণ গ্রহণ করুন বা পুরাতন গ্লানি মুছে নতুনের আহ্বান করে শুভেচ্ছাও জানানো হয়।হালখাতার দিন দোকানিরা ফুল-মালা ও আলোর রোসনাইতে সাজিয়ে তোলেন তাদের দোকান গুলি।মাইক বাজিয়ে চলে গান-বাজনা।খরিদ্দারদের পাশাপাশি নিমন্ত্রণ করা হয় নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের।খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন করা হয়ে থাকে।খদ্দেরদের জন্য থাকে মিষ্টি মুখের ব্যাবস্থা।এমনকি তাদের বাড়ীর লোকেদের জন্যও প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মিষ্ঠি।কেউ কেউ ঠান্ডা পানীয় এর ব্যাবস্থাও করেন।জৈষ্ট্য মাসের হালখাতাতে কোন কোন ব্যাবসায়ী খদ্দেরদের হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেন নতুন ক্যালেন্ডার।খদ্দেররাও সাধ্যমতো চেষ্ঠা করেন পুরানো খাতার দেনা শোধ করার।এবাবেই বছরে দুবার আন্দন্দে মাতেন দোকানা ও ক্রেতারা।বলা চলে সাধারণ মানুষের কাছে হালখাতা এক অঘোষিত উৎসবে পরিণত হয়েছে।

পৌঁষ-মাঘ কিংম্বা জৈষ্ঠ্য- আষাঢ় মাসে হালখাতা কেন করা এবিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কয়েকজন ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়।আমাদের যারা ক্রেতা তাদের বেশির ভাগ কৃষি কর্মের সঙ্গে যুক্ত।আর এই মাস গুলিতে সাধারণত তেমন কোন প্রাকৃতিক বিপর্যায় নেমে আসেনা।ফলে ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হয়না।কিছুটা হলেও এই সময়টিতে অন্য সময়ের থেকে একটু বেশি লাভবান হন এবং স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটান।ওদের হাতে এখটু পয়সাও থাকে।তাই আমরা এই সময়টাকেই বেছে নেই শুভ হালখাতার জন্য।

বছরেরে এই দুটো সময় ব্যাস্ত সময় অতিবাহিত করেন ছাপাখিনার কর্মীরা।প্রচুর পরিমাণে অর্ডার আসে হালখাতা কার্ডের।ফলে রাতদিন এক করে তাদের কাজ করতে হয়।অবশ্য রোজগারও একটু বেশি হয়।ফলে কাজের ফুরসৎ না মিললেও মেলে বেশি পরিমাণে পারিশ্রমিক।তাই তাদের চোখে-মুখে আনন্দেরই ছাপ টের পাওয়া যায়।

শীতের মরসূম রাজ্যের কোনায় কোনায় নানা উৎসবের সমাহার নিয়ে হাজির।কোথাও শেষ,কোথাও শুরু,আবার কোথাও তোরজোড় চলছে।যেমন কৃষিমেলা,শ্রমিকমেলা,পিঠে-পুলি-পায়েস উৎসব,পাখি মেলা,পুষ্পমেলা,শিশু-কিশোর উৎসব প্রভৃতি।অবশেষে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে বাংলার বহুবিধ উৎসবের মধ্যে হালখাতাও অনন্য এক স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।

Subha Biswas

Share
Published by
Subha Biswas

Recent Posts

জম্মু-কাশ্মীরে মাতা বৈষ্ণদেবীর মন্দির রোপওয়ে প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত

জম্মু-কাশ্মীরে মাতা বৈষ্ণদেবীর মন্দির পর্ষদ বয়স্ক ও ভিন্নভাবে সক্ষম পূর্ণার্থীদের সুবিধার্থে বহু প্রতিক্ষীত রোপওয়ে প্রকল্প…

14 hours ago

দিল্লীর জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে বাতাসের গুণমান আরও খারাপ

দিল্লীর জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে বাতাসের গুণমান আরও খারাপ হয়েছে। গতাকল রাত ১০ টায় এই গুণমান…

14 hours ago

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ গুজরাটের গান্ধীনগরে

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ গুজরাটের গান্ধীনগরে রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বভারতীয় পুলিশ বিজ্ঞান কংগ্রেসের সুবর্ণজয়ন্তী…

14 hours ago

রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ছত্তিশগড়ে CBI, রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তামান সিং সোনওয়ানিকে পি এস সি-র নিয়োগ…

14 hours ago

উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাসপেনশন স্থগিত: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ

উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে সম্প্রতি থ্রেট কালচার নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেন্ড হওয়া সাতজন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ…

14 hours ago

মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের কড়া নজর: পর্যালোচনা বৈঠকে অমিত শাহ

মণিপুরের ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল নতুন দিল্লিতে…

2 days ago