পশ্চিম মেদিনীপুর: পরিবর্তনের সাথে সাথে বিলুপ্তির পথে গ্রামাঞ্চলের একসময়ের ঐতিহ্য ঢেঁকি। সামনেই পৌষ সংক্রান্তির পরব। আর পৌষ সংক্রান্তি মানেই পিঠেপুলির উৎসব। নানা রকমের পিঠের পদ তৈরী হয় ঘরে ঘরে। তার স্বাদ নিতে উৎসুক আম বাঙালি। হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন, তাই এখন থেকেই গ্রামেগঞ্জে জোরকদমে চলছে চালের গুঁড়ি কুটার (তৈরির) কাজ। একরকম বলা চলে এখন অধিকাংশ সময় কাটছে এই কাজে। আর এই সময়টাই একটু হলেও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় এই ঢেঁকির। আগে পাড়ায় পাড়ায় এই সময়টাই ঢেঁকির আওয়াজে কানপাতা দায় ছিল।
বর্তমানে আধুনিক সমাজে মেশিন ও যন্ত্রপাতির দাপটে সেই ঢেঁকির কন্ঠরোধ হয়ে গেছে অনেকটাই। তবুও এখনও গ্রামে কানপাতলে ঢেঁকির সেই আওয়াজ কানে ভেসে আসে। স্বাদে মিষ্টতায় এখনও মানুষের কাছে সেই ঢেঁকিই প্রথম পছন্দ এমনই দাবী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার হরিসিংপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। এই গ্রামে আগে একাধিক ঢেঁকি ছিল এখন অবশ্য তা কমে একটিতেই ঠেকেছে। ওই গ্রামেরই দাস পরিবারের এই সময়টা নাওয়া খাওয়ার ফুরসৎ নেই। কারন পৌষ পরব যতই এগিয়ে আসে গ্রামের মহিলাদের ভিড় জমে গুঁড়ি করার জন্য। ওই পরিবারের বৌমা চন্দনা দাস বলেন, তার শ্বাশুড়ির মুখে শোনা শ্বশুরমশাই আজ থেকে প্রায় ৮০-৯০ বছর আগে তখনকার সময় মাত্র ১৩ টাকা দিয়ে খেজুরকাঠের ঢেঁকি কিনে এনেছিলেন।
সেই ঢেঁকি এখনও সঙ্গ দিচ্ছে গোটা গ্রামকে। হরিসিংপুর গ্রামে প্রায় শ দেড়েক পরিবারের এখন ভরসা একটি মাত্র ঢেঁকি। গ্রামেরই ঝর্ণা দাস ঘোষ, দিপালী ঘোষ, উমা দাস, মনিমালা দাস, অলোকা দাস দের কথায়, এখন অধিকাংশই মেশিনে চাল কুটা হয় তাতে পরিশ্রম কম এবং সময়ও কম লাগে তাই মেশিনে কুটা গুঁড়িই এখন বেশি। আর ঢেঁকিতে গুঁড়ি কুটায় পরিশ্রম আছে, সময়ও লাগে অনেক। ঢেঁকিতে গুঁড়ি কুটতে হলে প্রথমে চাল ভিজিয়ে তা শুকনো করে তারপর ঢেঁকিতে ফেলা হয়। তার উপর ঢেঁকিতে পা দিয়ে কুটে চালতে হয়। এতো কিছুর পর গুঁড়ি বেরোয়। এখন কে আর এত পরিশ্রম করে।
এজন্য মেশিনের দিকেই ঝোঁক বেশি মানুষের। এরা এও বলেন, মেশিনের গুঁড়ি আর ঢেঁকির গুড়ির স্বাদ সম্পুর্ণ ভিন্ন। ঢেঁকির গুড়ির স্বাদই আলাদা এবং পিঠেও ভালো হয়, মিষ্টতা আছে। কিন্তু মেশিনে কুটা গুঁড়িতে তা পাওয়া যায় না। মেশিনের গুঁড়ির পিঠেতে একটা গন্ধ থাকে এবং অনেক সময় পিঠেও ভালো হয় না। তাই গ্রামের দিকে মানুষ এখনও ঢেঁকির উপরেই ভরসা করে। হাতে মাত্র আর কটা দিন, বাঙালির আর এক বড় পার্বন পৌষপার্বন। তার আগে গ্রামে জোর কদমে চলছে ঢেঁকিতে গুঁড়ি কুটার কাজ। আর এতে সামিল মহিলা থেকে পুরুষ এমনকি বয়স্ক বৃদ্ধাদেরও পা দিতে দেখা যাচ্ছে ঢেঁকিতে। তাই বিলুপ্তির পথেও নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ঐতিহ্যের ঢেঁকি।