কলকাতা: প্রতিবছর গঙ্গাসাগর কুম্ভ মেলা সহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তীর্থযাত্রীদের সহযোগিতায় এবং তাদের উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এবছর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার গঙ্গাসাগরে গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে তীর্থযাত্রীদের উদ্ধার কাজে দেড় হাজার ও এলাহাবাদের কুম্ভ মেলায় ৫০০ সাঁতারু নিয়োগ করছে ভারত সেবাশ্রম সংঘ। আজ সোমবার কলকাতার বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান, ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান সম্পাদক স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ মহারাজ।
তিনি বলেন, তীর্থ যাত্রীদের গঙ্গাসাগরের যাত্রাপথে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাশাপাশি ভারত সেবাশ্রম সংঘের পক্ষ থেকে লট নম্বর এইট,কচুবেড়িয়া, নামখানা, চেমাগুড়ি ও গঙ্গাসাগর মেলায় স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি পয়েন্টে যাত্রীদের সুবিধার জন্য ডাক্তারখানা, ভ্রাম্যমান মেডিকেল ইউনিট এবং লাইফ জ্যাকেট পরিহিত সাঁতারু প্রস্তুত থাকবে যেকোনো সমস্যার মোকাবিলায়। সংঘের ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ হাজার লোককে নিঃশুল্ক খাবার বিতরণ, গরিব ও দুস্থদের শীতবস্ত্র, কম্বল দান এমনকি রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই পুরীর সমুদ্রতটে এই সাঁতারু এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কিভাবে মানুষকে উদ্ধার করা হবে তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেইসব প্রশিক্ষিত যুবকদেরই এই দুই মেলায় নিয়োগ করা হচ্ছে। এ বছর এলাহাবাদের কুম্ভ মেলা শুরু হচ্ছে ১৫ জানুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত। সেখানেও যাঁরা পুন্য স্নান করতে আসবেন সেই সমস্ত তীর্থযাত্রীদের বিনামূল্যে ঔষধ ,অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি জলে ডুবে গেলে বা অন্য কোন ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে প্রশিক্ষিত সাঁতারুরা কাজ করবে বলে তিনি জানান।
কুম্ভ মেলার দায়িত্বে থাকা স্বামী সত্যমিত্রানন্দ মহারাজ বলেন, শুধু তীর্থযাত্রীদের সহযোগিতাই নয়, হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, দেবদেবীর মূর্তি এবং মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে কুম্ভ মেলাতে। এছাড়া সুবৃহৎ মন্দির তৈরি করা হচ্ছে যেখানে দেবাদিদেব মহাদেবের, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, শ্রী রামচন্দ্র এবং শ্রী গুরু ভগবান আচার্যদেবের সুন্দর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এছাড়া সেখানে থাকছে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি। সুসজ্জিত রামায়ণ ও মহাভারতের উজ্জ্বল ঘটনাবলীর ওপর নানা প্রদর্শনী। মেলার ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ কে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রতিদিন থাকছে ভজন, কীর্তন, হোম, যজ্ঞ, ভক্তিগীতি, ধার্মিক এবং আধ্যাত্মিক প্রবচন ,ভাগবত কথা, পুজা আরতি এবং প্রসাদ বিতরণ।
সংঘের প্রধান সম্পাদক স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ মহারাজ বলেন , তীর্থযাত্রীদের জন্য ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানে সেলাইন, ইসিজি ,অক্সিজেনের যেমন ব্যবস্থা থাকছে তেমনি ২৪ ঘন্টা ডাক্তার উপস্থিত থাকবে। সংঘের কলকাতা, দিল্লি, জম্মু, বারাণসী ,পুষ্কর, এলাহাবাদ গয়া ,পুরী, বোম্বে সহ বিভিন্ন শাখা থেকে সন্ন্যাসী এবং স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছেন কুম্ভ মেলার উদ্দেশ্যে। সংঘের এইসব কাজের পাশাপাশি থাকছে সাধু-সন্ত পদযাত্রা। দেশ বিদেশ থেকে যে সমস্ত সাধু-সন্তরা এই কুম্ভ মেলায় আসেন তাদের থাকা খাওয়া এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে সহযোগিতা করা হয় ভারত সেবাশ্রম সংঘের পক্ষ থেকে।