বোন মারুফার স্মৃতীতে ১২ কোটি টাকা খরচ করে আস্ত একটা হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন সহিদুল ইসলাম লস্কর।দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুরের প্রত্যন্ত পুঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা ট্যাক্সিচালক সহিদুল।অসাধ্য সাধন করে তিনি এখন এলাকার মানুষের কাছে ‘রিয়েল হিরো’।বারুইপুর নাম বললে চলে আসত সেখানকার প্রসিদ্ধ সুস্বাদু পেয়ারার কথা।এবার থেকে বারুইপুরের নাম উচ্চারিত হলে চলে আসবে সহিদুল ইসলাম লস্করের নাম।
অভাব অনটের সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’।তবুও শান্তিতে চলছিল লস্কর পরিবার।পরিবারের একমাত্র কন্যা মারুফা খাতুন।বয়স মাত্র আঠারো।মারণ রোগ ক্যানসার ধরা পড়ল মারুফার।দারিদ্রতার মধ্যেও পরিবারের একমাত্র কন্যাকে বাঁচানোর সাধ্যমতো চেষ্ঠা।সব চেষ্ঠাকে ব্যার্থ করে অকালেই মাত্র আঠারো বছর বয়সেই জীবন যুদ্ধ শেষ মারুফার।এক মাত্র আদরের বোনের মৃত্যুতে পরিবারের সাথে ভেঙে পড়লেন সহিদুলও।আর বুকে চেপে বসলো একটা জেদ।পণ করলেন আর কোন মারুফাকে এভাবে মরতে দেওয়া যাবেনা।অকালে বোন হারানোর যন্ত্রণা আর কারও যেন পেতে না হয়।অসাধ্য সাধন করার স্বপ্ন নিয়ে বোনের স্মৃতীতে হাসপাতাল গড়ে তোলার চিন্তা ভাবনা করে বসলেন।
কোলকাতার রাজপথে ট্যাক্সি চালিয়েই পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেন সহিদুল।কিন্তু তিনি যে বিশাল স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তবায়ন হবে কি ভাবে।তাঁর বোন হারানোর ব্যাথা এবং হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনার কথা জানাতে লাগলেন যাত্রীদের সঙ্গেই।বেশির ভাগ যাত্রীই সহিদুলের পাশে দাঁড়ালেন।পাশাপাশি এলাকার কিছু সহৃদয় ব্যাক্তিও সহিদুলের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।অর্থের অভাব থাকলেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বপ্ন সার্থক করে তুললেন।১২ কোটি টাকা খরচে বিশাল এক হাসপাতাল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সহিদুল ইসলাম জানান হাসপাতাল টির নাম মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড জিরিয়াটিক রিসার্চ সেন্টার।এটি দু বিঘা জমির উপরে গড়ে উঠেছে।ভবিষ্যতে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।সহিদুল ইসলাম বলেন,এই কাজে তাঁর স্ত্রী পাশে থেকে সর্বদা সাহস যুগিয়ে গেছে।অপর দিকে তাঁর ট্যাক্সি যাত্রীরা আর্থিক সাহায্য না করলে হাহপাতাল গড়া সম্ভব হতো না বলে জানান তিনি।এখনও ট্যাক্সি চালান কিনা? প্রশ্ন করা হলে সহিদুল ইসলাম লস্কর বলেন,ট্যাক্সিটাই আমার কাছে লক্ষ্মী।কাজের চাপে সারা সপ্তাহ সম্ভব না হলেও অন্তত দু -তিন দিন ট্যক্সি চালাবেন বলে জানিয়েছেন।তাও যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একদিন হলেও চালাবেন।
সহিদুল ইসলাম লস্কর জানান,হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে দুঃস্থ রোগিরা চিকিৎসা করাতে পারবেন।চিকিৎসার পাশাপাশি রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষাও করাতে পারবেন।মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সহিদুল ইসলামের আহ্বান, সরকার যদি হাসপাতালের পাশে দাঁড়ায়।তাহলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের পরিষেবা প্রদান সম্ভব হবে।সহিদুল ইসলাম বলেন,মুখ্যমন্ত্রী এমনিতেই তো মানুষের ভালোর জন্য সারা রাজ্য ছোটেন।আর আমরাও তো ভালো কাজের জন্য চেষ্টা করছি।
অনন্য কৃর্তির জন্য সম্প্রতি প্রধান মন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছিলেন সহিদুল ইসলাম লস্কর।দিল্লিতে আকাশ বাণি ভবনে গিয়ে তিনি শেয়ার করেন তাঁর অভিঞ্জতার কথা।তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেই সহিদুলের সংগ্রামের কথা দেশ বাসির কাছে তুলে ধরেন।