পশ্চিম মেদিনীপুর : হাতির আক্রমণে যাতে কোনও প্রাণহানি বা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় তার জন্য হাতিকে জঙ্গলে আটকে রাখার কথা বলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর। বনকর্মীদের এই ভাবে ধমক দেওয়ার পর কি ভাবে জঙ্গলের মধ্যে হাতি আটকে যায় তার জন্য বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রাহন করেছে বনদফতর। যদিও বনদফতরের দাবি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর সব চেয়ে বেশি দিন জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখতে পেরেছে দলমার দলকে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর প্রাণহানি বা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি সেভাবে হয়নি ঝাড়্গ্রাম বনবিভাগে। কিন্তু মেদিনীপুর ডিভিশন এবং রুপনারায়ন ডিভিশনে চলতি বছরে দলমার দল খুব বেশি দিন থাকেনি। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন অংশে। যার ফলে এবার দলমা দলের হানায় ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রান হানির ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে।
তবে এবছর হাতি গ্রামে ঢুকে মানূষকে তাড়া করে মারেনি। যদিও বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দলমা হাতি গ্রামে ঢুকে দিনে দুপুরে মানুষকে তাড়া করে মেরেছে এমন ঘটনা খুবেই কম রয়েছে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জঙ্গলে কাঠ, পাতা কুড়াতে গিয়ে বা অন্ধকারে হাতির সামনে পড়েই মৃত্য গুলি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে বনদফতর সূত্রে। জানা গিয়েছে, জেলা জুড়ে পনেরো জনের মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির সামনে পড়ে। বনদফতরের পক্ষ থেকে হাতির উপর নজর রাখার জন্য ম্যাসেজ পদ্ধতি চালু হয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির লোকজন ম্যাসেজের মাধ্যমে বনদফতরের সংশ্লিষ্ট ব্লকের বনাধিকারিকদের জানাচ্ছেন হাতির অবস্থান।আর তা জেনে বনকর্মীরা হতি গুলির উপর নজরদারি করচ্ছেন। বনদফতের কাছে প্রতিদিন এইভাবে জেলার হাতিদের উপস্থিতি সম্পর্কে খুটি নাটি তথ্য পৌছে যাচ্ছে।
পাশাপাশি বনদফতরের পক্ষ থেকে টানা সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসুচি চলচ্ছে। রাতে,সন্ধ্যার সময়,ভোরে সময় জঙ্গল এলাকার রাস্তায় না যাওয়া, হাতি দেখলে তাকে উত্তক্ত্য না করে কৌশলে সেখান থেকে চলে এসে খবর দেওয়া সহ বিভিন্ন রকম কর্মসুচি চলচ্ছে। বিভিন্ন সামজিক অনুষ্ঠানেও সচেতনতামূলক ফ্ল্যেক্স,ব্যানার দিচ্ছে বনদফতর। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে , গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরই জঙ্গল এলাকায় সব থেকে বেশি দিন দলমা হাতির দলকে আটকে রাখতে পেরছিল বনদফতর। বনদফর সূত্রে জানা গিয়েছে ২০১৬ তে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৫ দিন,২০১৭তে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২৮ দিন এবং ২০১৮তে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১২০ দিন দলমা দলের হাতিকে জঙ্গলে আটকে রেখে ছিল। এছাড়া হাতির করিডর হিসেবে পরিচিত রুট মযূরঝর্না এলাকায় প্রায় ৪৫ কিমি ট্রঞ্চ কেটে হাতিকে আটকানো গিয়েছিল।
কিন্তু বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তঃরাজ্য বর্ডার রয়েছে একশো কিমির বেশি।অত্যন্ত চতুর হাতির দল ছোট দলে ভাগ হয়ে জঙ্গল ছেড়ে ঢুকে পড়চ্ছে।যদিও বনদফতর স্থানীয় মানুষ জনের সাহায্যে যোগাযোগ রেখে হাতির গতিবিধির উপর নজর রাখচ্ছে। ঝাড়গ্রাম বনদফতরের ডিওফও বাসবরাজ হোলেইচ্ছি বলেন, “আমারা হাতির দলের উপর সর্বদা নজর রাখছি। কোথায় কখন হাতির রয়েছে খবর পাওয়া মাত্রই নজরদারি বাড়াচ্ছি। মানুষকে সচেতন করার প্রক্রিয়াও চলচ্ছে।” উল্লেখ্য গত নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়্গ্রামের জেলা শাসকের অফিস ঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনদফতরকে কড়া ভাষায় ধমক দিয়ে বলছিলেন হাতিকে জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখতে হবে।