কলকাতা: ছুটির তালিকা অনুমোদন করানোর নিয়ম আগেও ছিল। কিন্তু করতেন অনেক স্কুলই। অনেক স্কুলের ক্ষেত্রে আবার নিয়ম বহির্ভূতভাবে বেশি ছুটিও নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শোনা যায়। তাই শিক্ষাদপ্তরের সুপারিশে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবছর এবিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবছর থেকে জেলা পরিদর্শককে দিয়ে ছুটির তালিকা অনুমোদন করানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারী ভাবে প্রত্যেক বছরই সরকার পোষিত মাধ্যমিক/উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির জন্য মডেল ছুটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী হল, সারা রাজ্য স্কুলগুলিতে একটি অভিন্ন ছুটির তালিকা প্রনয়ণ করা। কিন্তু ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, স্থানীয় উৎসব, প্রথার বিভিন্নতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঘটনা বা স্থানীয় বাধ্যবাধকতার কারনে সরকারী ছুটির তালিকাকে বাধ্যতামূলক করা যায়নি।
বিতর্ক এড়াতে ঐ ছুটির তালিকাকে মডেল তালিকা হিসাবে বাখ্যা করে, স্থানীয় সুবিধা-অসুবিধা মাফিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরিবর্তনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক স্কুলের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পর্যাপ্ত কারন না থাকা সত্বেও স্কুলগুলি নিজেদের ইচ্ছামত ছুটির তালিকা তৈরী করছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যখন স্কুল শিক্ষা-দিবসের সময় ছুটি মঞ্জুর করে, শ্রেণি-শিক্ষণের সুযোগ নেই এমন সময় স্কুল খোলা রাখছেন। বিষয়টি কিছুদিন আগে দপ্তরের নজরে আসে। তাই এবছর থেকে ছুটির তালিকা অনুমোদন করানোটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জেলা পরিদর্শকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছুটির তালিকা অনুমোদনের সময় যতটা সম্ভব সরকারের মডেল তালিকার সঙ্গে অভিন্ন রেখে স্কুলগুলির ছুটির তালিকা অনুমোদন করতে। যেসকল জেলায় বা এলাকায় স্থানীয় উৎসব বা স্থানীয় সমস্যা নেই, সেই সকল এলাকায় প্রত্যেক স্কুলের ছুটির তালিকা পর্ষদ প্রকাশিত মডেল তালিকার সঙ্গে অভিন্ন রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে! স্কুল কর্তৃপক্ষ মডেল তালিকাটির দিনগুলিকে যখন পরিবর্তন করে বিকল্প দিনে ছুটি মঞ্জুর করবেন, তখন যথাযথ কারন উক্ত তালিকার রেজোল্যুশানে লিখিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। উল্লেখিত কারন দেখে খুশি হলে তবেই জেলা পরিদর্শকদের উক্ত তালিকা অনুমোদন করতে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, শিক্ষাদপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকারী তালিকা মাফিক ছুটি না হলে, স্কুল-পরিদর্শকদের ক্ষেত্রে স্কুল পরিদর্শনে বিশেষ অসুবিধা হয়। বিশেষত সারপ্রাইজ ভিসিটে গিয়ে জেলা-পরিদর্শকের প্রেরিত দল গত বছরে অনেক স্কুলকেই বন্ধ দেখে হতবাক হয়ে ফিরে এসেছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা দম্পতি ও তাঁদের সন্তাদের স্কুলগুলিতে অভিন্ন দিনে ছুটি থাকলে আখেরে তা শিক্ষাঙ্গণের পক্ষে ফলপ্রদ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। এযাবদ স্কুলের ছুটির তালিকা পরিচালন সমিতি অনুমোদন করলেও প্রকৃতপক্ষে সেই তালিকা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ক্ষমতাশালী বা মাতব্বর জাতীয় একজন বা দুজনের ব্যক্তিগত চাহিদামাফিকই হত।
এবিষয়েও শিক্ষক-শিক্ষিকা মহলে তৈরী হওয়া ক্ষোভ শিক্ষা প্রাঙ্গনের ক্ষতি করতো বলেই পর্ষদের অনুমান। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুুলে পালন বা উদযাপনের যে সকল নির্দেশ সরকারীভাবে দেওয়া হয়, স্কুলের ইচ্ছাধীন ছুটির কারনে তা অনেকক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হতে পারে না। কয়েকটি স্কুল আবার ধর্মঘটের দিনে ছুটি ঘোষনা করে, বকলমে ধর্মঘটকেই প্রশ্রয় দেয়। তাই, এই সিদ্ধান্তের ফলে একঢিলে সব পাখী মারতে চেয়েছেন শিক্ষাদপ্তর।