কোলকাতা: বাংলার উলামা সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক সংকট দূরীকরণে ও উলামা পরিবারের সদস্যদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটানোর দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংখ্যালঘু অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে আজ কলকাতার রাজপথে মহামিছিল হয়। কতিপয় সমাজসেবীর দ্বারা গড়ে ওঠা ‘বেঙ্গল উলামা কল্যাণ মঞ্চে’র এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মুসলিম লীগের রাজ্য সভাপতি শাহেনশাহ জাহাঙ্গীর, প্রোগেসিভ ইউথ ফাউন্ডেশনের রাজ্য সভাপতি সিয়ামত আলি, মুসলিম যুবলীগের সর্বভারতীয় সভাপতি সাবির এস. গাফফার, জুলফিক্কারিয়া আজিজিয়া যুব ফাউন্ডেশনের কর্ণধার পীরজাদা মুহিব্বুল্লাহ হোসাইনী সাহেব, সিরাত ফাউন্ডেশনের আবু্ সিদ্দিক খান, আরাফের পীরজাদা খোবায়েব আমিন, আবমার আবু আফজল জিন্নাহ,বন্দি মুক্তি কমিটির ছোটন দাস , সুখনন্দন সিং আলুআলিয়া,পীরজাদা মাহফুজুল্লাহ হোসাইনী, ছাত্রনেতা আব্দুল কাহার, নুরুদ্দিন প্রমুখ।
বিশেষত উলামা তথা ইমাম, মোয়াজ্জিন, মক্তব শিক্ষক, হাফিজে কোরআন, খারেজী মাদ্রাসার শিক্ষক, দরগাহের মুতাওয়াল্লীদেরকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার সুগম পথ সরকারের নিকট থেকে বুঝে নেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ‘বেঙ্গল উলামা কল্যাণ মঞ্চ’।
বেঙ্গল উলামা কল্যাণ মঞ্চ মূলত যে সমস্ত দাবিদাওয়া নিয়ে পথে নেমেছে সেগুলি হল-(১) তামিলনাড়ু রাজ্যের মডেল অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজ্য সরকারকে ওলামা ওয়েলফেয়ার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে।যার মাধ্যমে ইমাম, মোয়াজ্জিন, হাফিজে কোরান,মক্তব শিক্ষকগণ বেতন,পেনশন, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, সুদবিহীন ঋণ,হাউজিং এবং শিশু শিক্ষাবৃত্তি পাবে।(২) ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাসিক ভাতা(ওয়াজিফা) বর্তমান বাজারদর হিসাবে বৃদ্ধি করতে হবে।(৩) যে সমস্ত ইমামগণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তাদেরকে অবিলম্বে তালিকাভুক্ত করতে হবে।(5)সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারা অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
উলামারাও এদেশের নাগরিক,তাদের আর্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে উন্নতিকরণের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে তাদের গ্ৰহণযোগ্যতা বৃদ্ধির চেষ্টা বেঙ্গল উলামা কল্যাণ মঞ্চের। পরিকল্পিত ভাবে পিছিয়ে রাখা মুসলিম জাতির কান্ডারী উলামাদের কল্যাণার্থে পথচলা এই মঞ্চের। আজকের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালতলা ক্যাম্পাস থেকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত মিছিলের পর বেঙ্গল উলামা কল্যাণ মঞ্চ এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি ও প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
আজকের মুসলিম যুবলীগের সর্বভারতীয় যুব সভাপতি সাবির গাফফার বলেছেন রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর অভাব নেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট উলেমা কল্যাণ মঞ্চের এই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।পাশাপাশি সারাভারত জুড়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ,গো-সন্ত্রাস,মাদ্রাসার ছাত্র জুনাইদ, আজিমের হত্যার প্রতিবাদে এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান করেছেন।
প্রোগেসিভ ইউথ ফাউন্ডেশনের রাজ্য সভাপতি সিয়ামত আলী বলেন তামিলনাড়ুতে যদি উলেমাদের কল্যানার্থে বোর্ড থাকতে পারে বাংলায় কেন থাকবেনা।আগামী লোকসভা ভোটের পূর্বে যদি উলেমাদের এই দাবি না মেনে নেওয়া হয় তাহলে বাংলার মুসলিমরা তার জবাব দেবে।পাশাপাশি তিনি রামমন্দির ও বাবরী মসজিদ নিয়ে বিজেপির উস্কানিমূলক পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেন।
জুলফিক্কারিয়া আজিজিয়া যুব ফাউন্ডেশনের কর্ণধার পীরজাদা মুহিব্বুল্লাহ হোসাইনী সাহেব বলেন আমরা ভারতের মুসলমান।আমরা সংবিধানের উপর পূর্ণ আস্থা রাখি।হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অটুট বন্ধন টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করি ও জনগণকে সেই বার্তা দিয়ে থাকি।তবে সবসময় নীরাবতা পালন করাটা আমাদের দুর্বলতা নয় প্রয়োজনে আমরা বিকল্প পথ নিতে সক্ষম।পাশাপাশি তিনি আরো বলেন ঈমান আমাদের মুল্যবান সম্পদ এটাকে কোনোভাবেই বিকিয়ে দেবনা।
আল্লামা রুহুল আমিন ফাউন্ডেশনের পীরজাদা খোবায়েব আমিন বলেন সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে ঈমান ও মোয়াজ্জিনদের ভাতা প্রদান করে থাকে সুতরাং সেই সম্পত্তি গুলো বাণিজ্যিককরণ করে বর্তমান বাজারদর হিসাবে তাদের বেতন দেওয়া হোক।