টি টোয়েন্টি ক্রিকেট আসার পর থেকে টেস্ট ক্রিকেট নাকি সংকটে! কিন্তু গতকাল আবুধাবিতে যা ঘটে গেলো তা টেস্ট ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাত্র দু ঘন্টায় ম্যাচের চরিত্র বদলে গেলো। যে টিমের জন্য হার অবসম্ভাবী ছিল সে জিতে গেলো, যার কাছে জয় নিশ্চিত ছিল সে হেরে গেলো। ঘন্টা বলা ভুল হবে ব্যাবধান ছিল কয়েক মিনিটের যার মধ্যেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেলো। এখন তো অনেক টি টোয়েন্টি খেলাও একপেশে হয়। সুতরাং, যতই টি-২০ ক্রিকেট হোক টেস্ট ক্রিকেট যে এখনো জীবন্ত আছে তা এই ম্যাচই প্রমান করে।
পাকিস্তান ও নিউজিলান্ডের মধ্যে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সিরিজের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় আবুধাবিতে। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ১৫৩ রান করে, নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান করে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ১৫৩ রান টেস্ট ম্যাচে ! আজকাল তো মনে হয় ১৫৩ রান টি ২০ ম্যাচের গড় স্কোর।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরুটা ভালোই করেছিল কিন্তু ২৭ রানে ২ উইকেট পরে যায়। এরপর ম্যাচের হাল ধরে প্রথম দিকে আসাদ শফিক ও হারিস সোহেল ও পরের দিকে স্কোর বোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যায় বাবর আজম। নিউজিল্যান্ড প্রথম দিকে পিছিয়ে থাকলেও পরে ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত বোলিং এবং অন্যান্য বোলারদের যোগ্য সঙ্গ পাওয়ার ফলে ম্যাচে ফেরে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তান ২২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করে বাবর আজম ৬২। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বোল্ট পান ৪ উইকেট।
পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের লিড পায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে হাসান আলি টম লেথামকে বোল্ড করে নিউজিল্যান্ড কে প্রথম ধাক্কা দেয়। এরপর জিত রাভাল কে সঙ্গে নিয়ে উইলিয়ামসন ৮৬ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়ে তোলে। এরপর নিউজিল্যান্ড দ্রুত চার উইকেট হারায়। এই কঠিন সময়ে দলের হাল ধরে উইকেটকিপার ওয়াটলিং এবং হেনরি নিকোলস। দুজনে ১১২ রানের এক দুরন্ত পার্টনারশিপ গড়ে তোলে। ২২০ রানে নিকোলস আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড মাত্র ২৯ রানে ৬ উইকেট হারায় এবং ২৪৯ রানে অল আউট হয়ে যায়।
জেতার জন্য ১৭৬ রানের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে পাকিস্তান শুরু টা দারুন করেছিল, তৃতীয় দিনের শেষে ৩৭ রান করে কোনো উইকেট না হারিয়ে। সুতরাং পাকিস্তানের ১৩৯ রান দরকার ছিল। কিন্তু পরের দিন খেলতে নেমে পাকিস্তান শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে খুব চাপে পরে যায়। কিন্তু চাপ সামলে আসাদ শফিক এবং আজহার আলি দলকে টানতে থাকে। দুজনে মিলে ৮২ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যায়। দলের স্কোর যখন ১৩০ তখন শফিক আউট হন এবং ১৪৭ রানের মাথায় বাবর আজম আউট হন। বাবরের আউট হওয়ার সাথে সাথে ম্যাচের রূপ বদলে যায়, পাকিস্তান একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে এবং ১৭১ রানে পাকিস্তান অলআউট হয়ে যায়।
ম্যাচের রূপ এতো তাড়াতাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ার পিছনে ছিলেন জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। তিনি ২৪ ওভার বল করে ৫৯ রানে ৫ উইকেট পান। অধিনায়ক উইলিয়ামসন এর অবদানও ছিল অনেক। প্রথমে সোদি ভালো বল করতে থাকেন কিন্তু পরের দিকে সোদির বল আর ভালো হয়নি, তাই সোদিকে সরিয়ে তিনি ওয়াগনার কে দিয়ে বল করতে থাকেন। এক দিকে এজাজ প্যাটেল বল করতে থাকেন অন্য দিকে ওয়াগনার একটানা ১৩ ওভার বল করেন। উইলিয়ামসনের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল সেটি প্রমান হয়ে গেল। ওয়াগনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২ উইকেট তুলে নিয়ে এজাজকে যজ্ঞসংগত দেন।
এই ম্যাচ নিশ্চিত ভাবে পাকিস্তানের জেতা উচিত ছিল কিন্তু নিউজিল্যান্ড যেভাবে পাকিস্তানের মুখের খাবার কেড়ে নিল তাতে শুধু মাত্র নিউজিল্যান্ডের “টিমস্পিরিটই” প্রমান হলো তাই নয়, টেস্ট ক্রিকেট এখনো যে জীবন্ত সেটি প্রমান হলো। টি ২০ আগ্রাসনের মুখে টেস্ট ক্রিকেট যে সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল সেটি এই ম্যাচের পর অনেকটা কাটিয়ে উঠলো সেটি ভিভিএস লক্ষণ থেকে শুরু করে মাইকেল ভন সবাই স্বীকার করেছেন।