বহরমপুরঃ আজ ভাতৃদ্বিতীয়া। এই পবিত্র দিনে বোনেরা তার দাদা বা ভাইয়ের কপালে শুভ্র চন্দন দিয়ে তাদের সুস্থ জীবন ও শতায়ু প্রার্থনা করেন। নানা ব্যাঞ্জন রান্না করে খাওয়ান। এই পবিত্র তিথি তাই বড় মধুর। ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি উৎসব। এই উৎসবের পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিনে উদযাপিত হয় ভাতৃদ্বিতীয়া।

এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে- “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা”। যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর। আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর। এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা সামগ্রী দেয়।

অতঃপর বোন তার ভাইএর মাথায় ধান এবং দুর্বা ঘাসের শীষ রাখে। এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে। ভাইও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে ভাইফোঁটা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়।

শুক্রবার দুপুরে বহরমপুর গোরাবাজার শহীদ ক্ষুদিরাম পাঠাগারের উদ্যোগে প্রায় ৪০জন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের কপালে ভাইফোটা দেন সংস্থার বোন এবং দিদিরা। আক্রান্ত শিশুদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের মিষ্টি মুখ করানো হয় এবং তাদের হাতে কিছু আর্থিক সাহায্যও তুলে দেন উদ্যোক্তারা। তাদের এই অনুষ্ঠান দীর্ঘ ১৮বছর ধরে করে চলেছেন। অপরদিকে কাজী নজরুল ইসলাম শিশু আবাসনের পক্ষ থেকে ছোট ছোট শিশুদের ভাইফোঁটা দিলেন অন্য শিলায়ন হোমের মেয়েরা। এখানে প্রায় ৫৯জন শিশুকে ফোঁটা দেওয়া হয়।

এখানে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, ঝাড়খন্ড এবং মধ্যপ্রদেশের হারিয়ে বাচ্চারা ছোট ছোট বাচ্চারা থাকে আজ তাদেরকেই ফোঁটা দেওয়া হয়। ফল এবং মিষ্টি সহযোগে তাদেরকে ফোঁটা দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা ছোট ছোট বোনেরা।  চাইল্ড প্রটেকশান অফিসার উজ্জ্বল সাহা জানান আমরা এই হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের বাবা মা। তাদের কে যত্ন সহকারে এখানে রাখা হয়। তাদের বাড়ির খোজ পাওয়া গেলে আমরা তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিই।

Susmita Sarkar

Share
Published by
Susmita Sarkar

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

4 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

4 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

4 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

4 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

4 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

4 days ago