“উফ মালটার দুদ গুলো দেখ ভাই, সেই…”
হোয়াটস্যাপে ছবি দুখান সহ প্রোফাইল লিঙ্কটি পাঠিয়ে নিচে লিখল সৌমেন।
বুল্টির ছবিটি দেখেই চমকে উঠলো সৌরভ, এর সাথেই তো তার বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী অঘ্রাণে। আত্মীয়সজনরা সব জানাজানি হয়ে গেছে। মেয়েটির সাথে পরিচয় হওয়ার সময় তাকে দেখে তো তখন সেরকম মনে হয়নি, “উফ আজকালকার মেয়েগুলো সবকটাই নোংরা” মনে মনে বলে উঠল সৌরভ।
সৌমেনকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলার পর সৌমেন বলল- “এখন কিছু বলতে যাস না, এসব নোংরা মেয়েদের এখন আঘাতটা করলে এরা মলমটা লাগানোর সময় পেয়ে যাবে, এমন সময় আঘাতটা আমরা করব যখন এরা মলম লাগানোর সময়টাও পাবে না।”
বুল্টির রঙটা একটু কালো বলে পণের টাকাটা সেদিন একটু বেশিই হেঁকেছিলেন চক্কোত্তি মশাই।
– “দেখুন বাজারের যা অবস্থা এই দুর্দিনে আপনাদের মেয়ে উতরে যাচ্ছে এই অনেক।”
পাত্রপক্ষের কথা শুনে মাথা নিচু করে ঘাড় নেড়ে সেদিন সম্মতি দিয়েছিলেন বুল্টির বাবা অমল বাবু।
পাত্রের মা বলেছিলেন- “দেখুন খাট বিছানা আমরা আলাদা ভাবে নেবো, আপনারা শুধু গয়না আর নগদের ব্যাপারটা আজ বুঝিয়ে দেবেন।”
বুল্টির মায়ের ইচ্ছে ছিল সিঁদুর দানটা মন্দীরেই হোক, এবং রিসেপশনটা পাত্রপক্ষের কথামতন বড় কোনো হোটেলে হবে। সবই ঠিক ছিল কিন্তু বিয়ের দিন পাত্রপক্ষ আসতে একটু দেরী করে ফেলল আর আসবে নাই বা কেন, সমগ্র ব্যাপারটাই তো ছিল আগের থেকে সাজানো।
(অমলবাবু আপ্যায়ন করে পাত্রপক্ষকে) “আসুন আসুন বুল্টির সাজ প্রায় হয়েই এসেছে, আসুন আপনারা বসুন, পুরহিত মশাই অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছেন।”
– “আমরা বসতে আসিনি, শুধু এটাই জানাতে এসেছি এ বিয়ে আমাদের ছেলে করতে পারবে না।”
কথাটা শুনে অমলবাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল- “কেন বেয়াইমশাই কি হয়েছে আমায় বলুন।”
পাত্রের মা- “আপনার মেয়ের চরিত্রের ঠিক নেই।”
অমলবাবু- “মুখ সামলে কথা বলবেন বেয়ান।”
সৌরভ – “মা তো ঠিকই বলেছে। আপনাদের মেয়ে তো এখন মডেলিং করছে, মাসিক পত্রিকাগুলিতে ওর আজকাল ছবি বেরোয়, এছাড়াও ইন্টারনেটেও রমরমে বাজার বুল্টির। বহু ছেলের রাতের ঘুম ওড়াচ্ছে বুল্টি। ফুলশয্যার রাতে আমি যা দেখব তা তো অনেক আগেই ভাইরাল করে দিয়েছে আপনাদের মেয়ে, আমার ভাগ্য ভালো এরকম নোংরা মেয়ের হাত থেকে আমি বেঁচে গেলাম, আর তাছাড়া এসব যদি নাও হত, তবুও বিয়ের আগে ভার্জিনিটি পরীক্ষা আপনার মেয়েকে দিতেই হত।”
সারা মন্দীরে আত্মীয় সজনদের মাঝে অমলবাবু লজ্জায় কেঁদে ফেললেন।
“কিছু যদি মনে না করিস তাহলে একটা কথা বলি?” -সকলে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল মন্দীরে থামের আড়ালে বুল্টি দাঁড়িয়ে।
বুল্টির মুখে পাত্রের উদ্দেশ্যে “তুই” সম্মোধনটা শুনে পাত্রের মা বললেন- “দেখুন অমলবাবু আপনার মেয়ের সৌজন্য বোধ, যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল সেই ঈশ্বরতুল্য স্বামীকে ‘তুই’ বলছে।”
অমলবাবুর মাথাটা লজ্জায় আরো হেঁট হল।
বুল্টি- “কথাটা আমার ওর সাথে হচ্ছে তুই কেন মাঝখানে আসছিস?” হবু শাশুড়িকেও ‘তুই’ বলতে শুনে বুল্টির বাবা রেগে গিয়ে বুল্টিকে বাধা দিতে গেলেন, কিন্তু বুল্টি সেসব না মেনে বাবার হাত সরিয়ে এগিয়ে এসে সৌরভকে বলল- “মেয়েরা নগ্ন হওয়া মানেই যদি নোংরা হয়, সতীত্ব প্রমান দিতে হয় তাহলে তুই নিজেকে প্রমান দিতে পারবি তো?”
সৌরভ হেসে বলল- “শোনো ছেলেদের সতীত্ব বলে কিছু হয় না okay? এজন্যই ছেলেদেরকে সোনার আংটি বলা হয়, যা বাঁকা হলেও দাম কমে না। তোমার এই তো রূপের ছিরি, গায়ের রংটার জন্য দয়া করে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।”
বুল্টি- “মেয়েরা কালো হওয়াটা কি অপরাধ? ছেলেরা সোনার আংটিই হোক বা নেকলেস সেটা সোনার দোকানে কালো মূর্তীর গায়ে না উঠলে চমক দেয়না, আর সোনা যদি কোনো মেয়ের শরীরে না ওঠে তাহলে তার মূল্য কানাকড়িও থাকে না।
এরপর আসি নগ্নতার প্রসঙ্গে, একটা মেয়ের ছোট ড্রেস পরা, ড্রেসের ভিতর থেকে ইনার ড্রেস বেড়িয়ে যাওয়া, অথবা মডেলিং করা মানেই কি সে নোংরা? মা কালীও তো নগ্ন, তার প্রতিও কি তোর একই মন্তব্য? শো-অফ বা ভাইরালের কথাতেই যখন এলি তখন একটা কথা বলি, যা কিছু সুন্দর ও আকর্ষণীয় সেটা নিয়েই শো হয় বেশি, অথচ তোরা দেখবি, ভোগও করবি আবার তার ওপর বদনামও দিবি। নারী শরীরকে প্রকৃতির সাথে তুলনা করা হয়, কিন্তু তোরা ছেলেরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেই প্রকৃতির প্রতিটি জিনিসকে ভোগও করিস আবার রাস্তার ধারেই পেচ্ছাব করে প্রকৃতিকে নোংরাও করিস, তুই ছোটবেলায় গরুর রচনা পড়েছিস? গরু এমন একটি প্রানী যার শরীরে দুধ থেকে শুরু করে মাথার শিং, গায়ের চামড়া, হাড়, এমনি পায়ের খুরটাও মূল্যবান, কোনো কিছুই ফেলা যায় না এমনকি মুতটাও, আবার গরুকেই আমরা পূজো করি, মা হিসেবে মানি। নারীও ঠিক সেই রকম।
নারী শরীরে মাথার চুলটাও দেখার যার এক ঝাপটা প্রতিটা মনে বসন্ত আনে, নারীর চোখটাও আকর্ষণীয়, চোখের আই-ব্রো টাও বাজারে বিক্রি হয়, ভ্রুটার জন্যও পার্লারে যেতে হয়, নাকটার জন্যও অলংকার আছে নথ, ঠোঁটের জন্য আছে লিপ্সটিক যার এক হাসিতেই সকলকে প্রেমে ফেলতে পারে, গালের ডিম্পলটা গালের সৌন্দর্যের মাপকাঠি, এছাড়াও হাতের ও পায়ের আঙুল এমনকি নখ যেটা শরীরের বর্জ অঙ্গ সেটাও মূল্যবান, সেটাও প্রেমে ফেলে পুরুষকে। বাকি অঙ্গের সৌন্দর্য দেখানোর প্রয়োজনই পড়ে না নারীর, কারণ সেগুলির সৌন্দর্যের পরিমাপ ও মূল্যায়ণ পৃথিবীর কোনো পুরুষ করতে পারবেনা বলেই সেগুলি ঢাকার প্রয়োজন পড়ে। পুরুষের শরীরে আছেটা কি বলত? তাই বলিউড, হলিউড বা টলিউডে তারা যেকোনো গানে কোট ব্লেজার পরে ঢেকে ঢুকেই ঘুরে বেরায় রে পাগোল। আর কোনো ঠান্ডা পার্বত্য অঞ্চলে ফিল্মের শ্যুটিং হলেও নায়িকার দেহ কম পোশাকে অনাবৃতই থাকে। আজও একটি পুরুষের ব্যবহৃত জিনিসের বিজ্ঞাপনকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে একজন মেয়ে মডেলকেই প্রয়োজন হয়।
নগ্নতাকে তোরা নোংরা বলিস অথচ এই পৃথিবীতে মহৎ কাজগুলো করতে নারীকে নগ্নই হতে হয় যেমন সন্তানকে স্তনপান, সন্তানকে জন্ম দেওয়া। নাহলে পৃথিবীতে তোরা আসতেই পারতিস না।
সৌরভ হেসে বলল – “আপনার লেকচার সবই তো বুঝলাম ম্যাডাম কিন্তু কিছু কথা লেকচারে হয়না কাজে প্রমান দিতে হয়, আপনি যে সতী সাবিত্রি তার প্রমান দিতে পারবেন তো আপনার ভার্জিনিটির, রক্ত দিয়ে প্রমান দিতে পারবেন তো?”
বুল্টি অট্টহাসি হেসে বলল -“আচ্ছা এবার রক্তও দেখতে চাস? ঠিকাছে সেটাও দেখাবো, তবে সমস্যাটা কোথায় জানিস? আমরা নারীরা যা দেখাতে চাইনা সেগুলো তোরা দেখতে চাস, কিন্তু যা আমরা দেখাতে চাই (মন) সেগুলো তোরা দেখতে পাসনা। তাই আজও প্রতিটা ঘরে মা কালী তার কালো রূপ ধরে আসে, কিন্তু আফশোস প্রতিটা ঘরে শিব জন্মায় না।”
কথা বলেই ছুটে চলে গেল সেখান থেকে বুল্টি।
– “এক্সকিউসমি একটু সরবেন?” মন্দীরের ভিতরের কমনরুম থেকে মেকাপ আর্টিস্ট এসে বললেন- “দাদা ব্যাস আর পাঁচ মিনিট, শাড়িটা পরা হলেই বুল্টিকে পাঠিয়ে দেবো।”
– “মানে? একটু আগেই তো ও এসেছিল”
সৌরভ চেয়ে দেখল তার সামনের মার্বেলের মেঝের ওপর থেকে লাল রক্ত মাখা পায়ের ছাপ মন্দীরের মায়ের কক্ষ অবদি চলে গেছে। সর্বাঙ্গ ঘেমে উঠল সৌরভের।
ভালো লাগলে গল্পটি শেয়ার করবেন।