স্কুলের একটা বন্ধু বলত মেয়েদের শরীরটা খুব ইন্টারেস্টিং। সত্যিই কিন্তু তাই। মেয়েদের শরীরে উত্থান, পতন, খাঁজ গভীরতা সবই রয়েছে। প্রকৃতির মতই পাহাড় রয়েছে, গুহা রয়েছে, ঝর্ণা রয়েছে। সেই জন্যেই আদিযুগ থেকে প্রকৃতিকেও নারীরূপে কল্পনা করা হয়েছে। নামীদামী কবিরা কেউই প্রকৃতিকে দু’চোখ ভরে দেখতে চাননি, বরং তাঁর রূপ-রস-গন্ধ উপভোগ করতে চেয়েছেন… আদিকাল বলতে পুরাকালের কথা মনে পড়ল। মুনি ঋষিদের ধ্যান ভঙ্গ করতে ইন্দ্র পাঠাতেন উর্বশী, মেনকাদের। তাঁদের নাচ দেখে মুনিরও চোখ কপালে উঠত; ভাবত চুলোয় যাক অমরত্ব, আগে একটু প্রান ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে অপ্সরার সাথে গড়িয়ে নি… আবার অসুররা স্বর্গ জয় করলে ফাউ সম্পত্তি হিসাবে অপ্সরাদের শরীরটা পেত…
তো যাই হোক, কথা হচ্ছিল শরীর নিয়ে। হ্যাঁ শরীর তো দেখারই জিনিষ। ছেলের হোক বা মেয়ের। সলমন খান শার্ট খুললে তাঁর সিক্স প্যাক দেখতে লোকে ফ্যামিলি প্যাক নিয়ে সিনেমাহলে হাজির হয়। আবার রাস্তায় হট প্যান্ট পরা মামনি দেখলে আমাদের মানে ছেলেদের ইমানদন্ড মনুমেন্টের চুড়োয় পৌঁছে যায়। সত্যি বলতে সলমনের সিক্স প্যাক বানানো বা মেয়েদের হটপ্যান্ট পরা, দুটোই মানুষকে দেখানোর জন্যেই। তাই খালি চোখে দেখলে, এমনকি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেও সমস্যা নেই। সমস্যা হল ছেলে আর মেয়ের শরীরের মেজর ডিফারেন্স নিয়ে। মেয়েদের শরীরটাই একমাত্র ভোগ্য, সেই আদিকাল থেকে, অ্যাডাম ইভের আমল থেকে বোধহয়। সেই জন্যেই খিস্তিগুলোও কিন্তু নারীকেন্দ্রিক হয়। যেমন ‘তোর মায়ের ইয়েতে ইয়ে’, ‘তোর বোনের ব্লাহ ব্লাহ’…
শরীরের চাহিদার আবার রকমফের আছে, প্রত্যেকের আলাদা আলাদা সাইকোলজি। কেউ ইয়ং মেয়েদের শরীরে সুখ খোঁজে, কেউ তিন বছরের বাচ্চার, আবার কেউ সত্তর বছরের দিদিমার। কিন্তু চোখ দিয়ে দেখে কি তৃপ্তি মেটে? করে দাও রেপ। পরে কি হবে দেখা যাবে… কিন্তু সবার কি আর রেপের সাহস থাকে? তাই ভিড় মেট্রো অথবা ট্রেনে কুনুইটা দিয়ে ধাক্কা মেরে অনেকে বুকের গভীরতা খোঁজার চেষ্টা করে। অনেকে ফেসবুকে মেয়েদের ফটো দেখেই সুখ পায়না, তাকে সেক্স চ্যাটের অফার করে আরেকটু শরীরের সান্নিধ্য খোঁজে… আচ্ছা এগুলো কি রেপ নয়? শুধু জোর করে সেক্স করলে তবেই রেপ বলে?
মেয়েদের মেজর সমস্যা হল এই উপভোগ্য শরীর… কোন একটা কবি বলেছিলেন, নগ্নতার থেকেও কল্পনা করে নেওয়া নগ্নতা অনেক বেশী সুখের। ব্যাপারটা কিন্তু সত্যিই। লোকজন সানি লিওনীর বলিউডি আইটেম ড্যান্স কেন দেখে? ওখানে তো সানির মেইন অংশগুলোই ঢাকা থাকে। ইন্টারনেটে কি সানির নগ্ন ভিডিও নেই? কারনটা হল কল্পনা করে নেওয়া নগ্ন শরীরটাই বেশী সুখ দেয়। তাই রেপের কোনো নির্ধারিত ড্রেস কোড নেই। সুইম স্যুট পরলেও হতে পারে, আবার বোরখা পরলেও। নগ্নতাই যদি ধর্ষণের কারণ হত তাহলে পৃথিবীর এত্ত ন্যুড বিচ আছে, মেয়েগুলো সব খুলে শুয়ে থাকে… ওদের কেউ ছুঁয়েও দেখেনা কেন???
একমাত্র মা কালী পেরেছিল শরীর আর যৌনতার মধ্যে পার্থক্য টানতে। সুন্দরী মা দুর্গাকে দেখেও মহিষাসুর বত্রিশ পাটি কেলিয়ে লেজ দুলিয়ে বলেছিল ‘এই অবলা নারীকে আমার চাই’… কিন্তু মা কালীর অর্ধ নগ্ন শরীর দেখেও অসুরদের যৌনতা পায়নি, বরং কলা শুকিয়ে আমসত্ত্ব হয়ে গেছিল। এরকম ভয়ঙ্করী কালীরূপ ধরতে কজন দুর্গা পারে?
শেষ করার আগে বলি, এখন নারীবাদী, পুরুষবাদী, আঁতেলবাদী, কলার কাঁদি এরকম অনেক ডিপার্টমেন্টে বুদ্ধিজীবী জনতা বিভক্ত হয়ে গেছে। সত্যি বলতে এই কথাগুলো তারাই বুঝবে, যারা নিজের গার্লফ্রেন্ড, বোন, বান্ধবী, বউ অথবা রক্ষিতাকে মন থেকে ভালোবেসেছে। অন্তত জীবনে একবার। তাঁদের প্রত্যেকেকেই রেপের শিকার হতে হয়েছে প্রতিনিয়ত, ভার্চুয়ালি অথবা রাস্তাঘাটে। কেউ না কেউ, একবার না একবার তাঁদের শরীর নিয়ে মন্তব্য করেছে অথবা ছুঁয়েছে ঠিকই। সব ধর্ষণের কেস ফাইল হয়না। মানসিক ধর্ষণগুলো তো মেয়েরা আরও বেশী চেপে যায়। তাঁদের হাতে হাত রেখে ভরসা দেওয়াটা আমাদের কর্তব্য। কেননা সব দুর্গা কোনওদিনই কালী হতে পারবেনা। সমাজ তো বটেই, বাকি মেয়েরাও তাঁদের হতে দেবে না… 😊