পশ্চিম মেদিনীপুর : মা কালী কি শুধুই কালী, উনি অন্ধকারে দীপাবলি।দীপাবলির দীপ্ত প্রভা সকলের কাছে পৌঁছে দিতেই তো মা কালীর আগমন। আর কদিন পরেই সেই আলোর উৎসব দীপাবলী। চোখ ঝলমলে আলোর রোসনাইয়ে আলোকিত হবে সারা রাজ্য। বছর দশেক আগেও নাওয়া খাওয়া ভুলে মাটির প্রদীপ, দেওয়ালি পুতুল, হাঁড়ি সরা তৈরি করে সময় কেটে যেত গোয়ালতোড়ের ভান্ডারপুর, কিয়ামাচা, চন্দ্রকোনারোডের ডুমুরগ্যেড়া, শালবনীর পোড়াডিহা প্রভৃতি গ্রামের কুমোর দের। কারন তাদের উপরেই যে রয়েছ মহাদায়িত্ব।
মাটির প্রদীপে তেল সলতে দিয়ে কালীপুজোর রাত গুলো আলোকিত করার। সারা দেশের পাশাপাশি হাসি ফুটত, আলোকিত হত কুমোর পাড়ার অসীম পাল, নবকুমার সাউ, অনীমা ,ঝর্ণা দেবীদের ঘরও। কিন্তু দিন আর নেই। দিন বদলেছে। নেই প্রদীপের আর সেই রোসনাই। বাজার জুড়ে টুনি,চিনা আলোর একাধিপত্য। একের মধ্যেই রঙ বেরঙের হাজার আলো। তাও আবার সাধ্যের মধ্যেই। সলতে পাকিয়ে তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানোর ঝক্কিঝামেলা বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে বাংলার এক প্রাচীন শিল্প কুমোরদের মৃৎ শিল্পকে। গড়বেতা -২ ব্লকের ভান্ডারপুর প্রায় ১০টি কুমোর বাড়ি থাকলেও মাটির কাজের সাথে যুক্ত বর্তমানে হাতে গোনা আর মাত্র তিনটি বা চারটি পরিবার।
বছর পঞ্চাশের নবকুমার সাউ এর বক্তব্য, এই সময়ে তার হাতের তৈরি হাজার পাঁচেক প্রদীপ পৌঁছে যেত বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে। আলোকিত করতো তাদের বাড়ি। এখন চাহিদা এক্কেবারেই নেই। তাই এই বছর প্রদীপ তৈরি করেন নি। আশার আলো এই প্রতিবেদন লেখার সময় নবকুমার বাবুর কাছে এক ক্রেতা পাঁচশো টি প্রদীপের বরাত দিলেন, যা এর মরশুমের প্রথম বরাত। প্রদীপের বরাত পেয়ে দীপাবলীর আগে নবকুমার বাবুর চোখে ধরা দেয় আশার আলো। তার আক্ষেপ এযুগের ছেলেরা আর এই কাজে আগ্রহী নয়। কারন নেই রোজগার, চাহিদাও নেই, নেই সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা। তার উপর যথেষ্ট শ্রমসাধ্য এই কাজ।
গড়বেতা – ২ ব্লকের ভান্ডারপুর, গড়বেতা -৩ ব্লকের ডুমুরগ্যেড়া, শালবনীর পোড়াডিহা গ্রামে এখনও বেশ কিছু পরিবার বংশপরম্পরায় কুমোরের কাজ করে আসছেন৷ ওই পরিবারের অন্যতম সদস্য ৫০ বছরের নবকুমার সাউ বলেন ৪০ বছর ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। এই শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি মাটি আর সামনাসামনি না পাওয়া যাওয়ার ফলে দূর থেকে খরচ করে আনতে হয় । অথচ চাহিদা সেই রকম নেই। মাটির প্রদীপের চাহিদা কমলেও পুজোর ঠাকুরের বাসনের রয়েছে। কিন্তু তাদের পক্ষে এই শিল্প চালাতে গেলে চাই শিল্প লোন। স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলেও কোনো আশার আলো দেখতে পাননি।
দিনবদলের সাথে সাথে মানুষ সচেতন হচ্ছে। শব্দবাজির দাপাদাপি কমে বেড়েছে আলোর খেলা । প্রশাসননিক ভাবে শব্দবাজির উপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ফলে মানুষ এখন বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছেন আলোর রোশনায়ের উপর। এখন দেখার সেই আলো রাজ্যের কুমোর বাড়ি গুলির প্রদীপ আবার জ্বলতে সক্ষম হয় কিনা প্রতি বাড়িতে বাড়িতে।