পশ্চিম মেদিনীপুর : দীপাবলীর আলো জ্বালিয়ে অন্ধকারেই থেকে যায় মামনি রেনুকারা – এটাই বাস্তবে প্রস্ফুটিত হয়েছে গড়বেতা – ৩ ব্লকের ডুমুরগ্যেড়া , চাঁদাবিলা গ্রামের গোটা পঞ্চাশেক কুমোর পরিবারের । যাদের মুল পেশাই হলো সমবছর ধরে মাটির সরা , খুরি ,মালসা , হাতিঘোড়া , ঘট , ধুনাচুর ,প্রদীপ তৈরী করে সংসার প্রতিপালন করা । কিন্তু বিদেশী রকমারি আলো আর প্লাস্টিকের দ্রব্য বাজার ছেয়ে যাওয়ায় তারা এখন সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন । চাঁদাবিলা গ্রামের গৃহবধু রেনুকা পাল বলেন , “আমরা সকলেই এই কাজের সঙ্গেই যুক্ত । শ্বশুরের আমল থেকেই এই কাজ করে আসছি । আগে মাটির প্রদীপ বা সরা মালসার কদর থাকলেও এখন আর নেই । মাটির প্রদীপ ১০০ টাকা প্রতি ১০০ টি চন্দ্রকোনা রোড সহ পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানে দিয়ে আসি , এতো কম আয়ে সংসারের খরচ ও ছেলে মেয়েদের পড়াশুনো চালানো দায় । তাই বাধ্য হয়ে অন্যের দীনমজুরীও খাটতে যায় ” । তাদের আক্ষেপ জমি জায়গাও নেই যে পূর্বপুরুষ দের পারিবারিক এই কাজ ছেড়ে দিয়ে চাষ করবো । তাই বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয় ।
মুলত ছয় মাস এই মাটির কাজের ব্যাস্ত থাকেন এই কুমোর পরিবারের মানুষেরা । বাকি অন্য সময় হয় ১০০ দিনের কাজ না হলে অন্যের দীনমজুর এর উপরই নির্ভরশীল । বাষোট্টির্দ্ধো জগন্নাথ পাল বলেন , আমি সেই বারো বছর বয়স থেকে বাবার হাত ধরে এই কাজে নামি । আগে কিছুটা টাকার মুখ দেখলেও এখন আর কিছুই হয় না । কিন্তু এই বয়সে তো আর অন্যের কাজ করতে যেতে পারি না । তাই বাধ্য হয়েই এই কাজে লেগে রয়েছি । যেটুকু যা হয় । ” জগন্নাথ বাবুর দুই ছেলে কেউ কিন্তু বাপ ঠাকুরদা এই কাজ করেন নি । তাদের বক্তব্য কি হবে এই কাজ করে । তাই এই কাজ না করে লেবার খাটতে যায় । দিনের শেষে দুশো টাকাতো পায় ।
আরেক গৃহবধু মামনি পাল বলেন ,”আমরা যে কি কষ্টে দিন যাপন করি তা বলে বোঝানো যাবে না । সরকারি ভাবে কোনো সাহায্যও পাই নি । সরকারি কিছু সাহায্য পেলে হয়তো আমরা আমাদের এই শিল্পে কিছুটা উন্নতি করতে পারতাম । যেখানে সরকার শিল্পী থেকে কবি সকলকেই ভাতা দিচ্ছেন । আর সেখানে আমরা ব্রাত্য । অনেক ঝুমুরের দল , ছৌনাচের দল আছে যারা সারা বছর এউ নিয়ে কোনো চর্চা করেনা বা অভাবও নেই তারাও মাসিক ভাতা পায় । আর আমরা ? সরকারি সাহায্যের কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অশ্বিনী পাল ।
তার অভিযোগ সরকারি সাহায্যের আর কোনো প্রয়োজন নেই । অনেকবার বলেছি । পার্টি বাবুরা সবই জানেন আমাদের অবস্থার কথা । আর বলে লাভ নেই । এদের দুর্দশার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন চন্দ্রকোনা রোড এর এক মিষ্টি বিক্রেতা । তার বক্তব্য মাটির সরা খুরি একটু বেশি দাম পড়ে যায় । তাই এখন প্লাস্টিকের জিনিস ব্যাবহার করি । একই বক্তব্য বাজি ও আলো বিক্তেতাদেরও । তারা বলেন মানুষ এখন আর মাটির প্রদীপ কিনতে চাই না । তাই আমরাও আনিনি । ফলে বিদেশি আলো ও প্লাস্টিকের জিনিসের জন্য যে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার কুমোর দের মাটির শিল্প তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।