পশ্চিম মেদিনীপুর: মোবাইল এবং সহজলভ্য ইন্টারনেটের যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্য যাত্রা শিল্প। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যাত্রাশিল্প ক্রমেই অনুসন্ধিৎসার কারণ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। সেই ধারাকে জিইয়ে রাখতে অশিল্পীরাই দু বছর ধরে নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাত্রা পরিবেশন করে আসছে গ্রামিন নিজেদের অনুষ্ঠানগুলোতে। লক্ষ শুধু হারিয়ে যেতে বসা যাত্রাশিল্প ধারাকে অক্ষুন্ন রাখা। সেই মত নিজেদের উদ্যোগে নারায়ণগড় দুর্গাপূজা উপলক্ষে একটি মাঠে অনুষ্ঠিত করে নিজেদের পরিবেশিত যাত্রা পালা গান। দু বছর ধরে নিজেদের পরিবেশনে অনুষ্ঠিত করে আসছে এই যাত্রা। স্থানীয় সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি তরুণ সিংহ জানিয়েছেন- “বর্তমানে মোবাইল এবং ইন্টারনেট নির্ভর যুগে যাত্রাশিল্প ক্রমে অবক্ষয়ের দিকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু নারানগড় এর বেশ কয়েকজন অযাত্রা শিল্পীদের নিয়ে দু’বছর ধরে পরিবেশিত হয়ে আসছে প্রাচীন ওই সংস্কৃতির যাত্রা পালা গান।
যারা কিন্তু বিভিন্ন পেশায় নিজেদের যুক্ত করে রেখেছেন সময় করে বছরে কয়েকটা দিন নিজেদের মধ্যে অনুশীলন করে গ্রামে যাত্রা পরিবেশন করে।” প্রাচীন সংস্কৃতি যাত্রাশিল্প কে ফিরিয়ে আনার অভিপ্সা করে বড় একজন যাত্রা শিল্পী তৈরি হওয়া কে পাখি চোখ করে গ্রামের মানুষরা একজোট হয়ে নিজেদের গামে যাত্রা পরিবেশন করে।তিনি মনে করেন- “যতই বিজ্ঞানের অগ্রগতি হোক একদিন প্রাচীন থিয়েটার সিনেমা কিংবা যাত্রাশিল্প মানুষের মধ্যে ঘুরে আসবে। আমাদের ধারণা আজকে প্রাচীন ও হারিয়ে যাওয়া যাত্রা শিল্পকে যারা পেশা হিসেবে নেবেন তাদের কিন্তু ভবিষ্যতে জীবিকা নির্বাহ হবে এর মাধ্যমে। শুধুমাত্র আলোকসজ্জার সাহায্য নিয়ে নিজেরাই করে আসছে এই যাত্রা। যাত্রা শিল্পী তথা এলাকার সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি বাবলু কুমার দাস জানান-“যাত্রাশিল্প এক প্রাচীন লোকশিল্প।
বর্তমানে বোকা বাক্সের কারণে মানুষ এই প্রাচীন যাত্রাশিল্প কে ভুলতে বসেছে। নারায়ণগড় একটি সংস্কৃতি মন্ডিত জায়গা যে বেশ কয়েকজন যাত্রা শিল্পী নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন কিন্তু তাদের অবর্তমানে আমরা এই পুরনো অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জীবিকা নির্বাহ যে যার ব্যক্তিগত। কিন্তু ভবিষ্যতে যে বড় যাত্রা শিল্পী হয়ে উঠতে পারবে তা দিল বিশ্বাস রয়েছে আমার।” প্রত্যন্ত তিনটে গ্রামের মানুষরা নিজেদের উদ্যোগে দু বছর ধরে যাত্রা পরিবেশন করে আসছে। লক্ষ্য শুধু প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত যাত্রাশিল্পের আবহকে বজায় রাখা। এলাকার সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি দুলাল টুং জানিয়েছেন- “নিজেদের চিরায়ত লোকসংস্কৃতি কে বজায় রাখতে নিজেদের আর্থিক সাহায্যে গত বছর থেকে উপলক্ষে এলাকার বেশ কয়েকজন যুবককে উৎসাহিত করে যাত্রা পরিবেশন করে আসছি।
বর্তমান দিনে মোবাইল এবং টিভির দুনিয়াতে অপসংস্কৃতি তে ভরে গেছে তাই পুরনো এই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের উদ্যোগ।” মোবাইল কিংবা টিভি ছাড়িয়ে যাত্রাকে নিজেদের মতো করে নেবে এলাকার মানুষজন। সাফল্য গত বছর থেকে এ বছরও পেয়ে আসছে শিল্পী থেকে দুর্গোৎসব কমিটি এবং নারায়ণগড় বাসি সকলেই। এলাকার বাসিন্দা তথা দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য কানাই ভূঁইয়া জানিয়েছেন- “মোবাইল নির্ভর যুগেও আমরা গত বছর থেকে যাত্রা করে আসছি।এলাকায় নিজেরা ভুলত্রুটির মাধ্যমে যাত্রা করে ও সাফল্য পেয়েছি। ভবিষ্যতে এই যাত্রা সংস্কৃতি তে চালিয়ে যেতে চাই।যদি নিজেরা না পারি যাত্রাশিল্পীদের দিয়ে এই সংস্কৃতিকে চালিয়ে যাব।” নিজেরা নিজেদের আর্থিক সাহায্য করে প্রাচীন যাত্রাশিল্পকে ধরে রাখতে চান উদ্যোক্তারা।