ঢাকা, বাংলাদেশ : ওয়ানডে সিরিজে টানা তিন ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়েকে আরেকবার হোয়াইটওয়াশ করলো মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। এর আগে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে দু’বার ও তিন ম্যাচের সিরিজে একবার জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে জিম্বাবুয়েকে চতুর্থবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা। তিন ম্যাচের এই সিরিজ জিতে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে এক রেটিং পয়েন্ট বেড়েছে বাংলাদেশের। আইসিসির সর্বশেষ রাঙ্কিং অনুযায়ী ৯৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে আছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ টানা তিন ম্যাচ জয়ের পুরষ্কার স্বরূপ রেটিং পয়েন্ট ৯৩তে উন্নীত হয়েছে টাইগাররা।
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে ২৮৬ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। এই টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৭ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় টাইগাররা। বাংলাদেশ জিতে ৭ উইকেটে। বাংলাদেশের পক্ষে শতক পেয়েছেন ইমরুল কায়েস(১১৫) ও সৌম্য সরকার (১১৭)।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে জার্ভিসের করা প্রথম বলেই খালি হাতে ফেরেন লিটন দাস। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন ইমরুল-সৌম্য। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৯৪ রানে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম অর্ধশতক তুলে নেন ইমরুল। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সপ্তম অর্ধশতক তুলে নেন সৌম্য। এরপর এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে আসে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।
২৮তম ওভারের প্রথম বলে সৌম্য তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। মাত্র ৮৮ বল খরচায় ৯ চার ও চার ছক্কায় দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দলীয় ২২০ রানে সৌম্যের দুর্দান্ত ইনিংস থেমে যায় ব্যক্তিগত ১১৭ রানে। ৯২ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় দুর্দান্ত ইনিংসটি খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
এরপর সেঞ্চুরিতে যোগ দেন ইমরুল কায়েস। ৯৯ বলে ৯টি চার ও ১ ছক্কায় দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ১১৫ রানে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ইমরুল। এরপর মুশফিক-মিঠুনে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের ম্যাচের মতো এদিনও আগে ফিল্ডিং নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওভারেই সাইফউদ্দিনের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তৃতীয় বলেই চেফাস ঝুওয়াওকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছেন সাইফ। বাঁহাতি ওপেনার ফিরেছেন শূন্য রানে। জিম্বাবুয়ের স্কোর তখন ১ উইকেটে ৬ রান। এরপর দলীয় স্কোরকার্ডে কোন রান যোগ না হতেই রনির ডেলিভারিতে ফিরলেন সফরকারীদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাসাকাদজা।
শুরুতেই দুই উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ে শিবিরে প্রভাব বিস্তার করেছিল টাইগাররা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন দুই নতুন ব্যাটসম্যান টেইলর ও উইলিয়ামস। দুজনেই টাইগার বোলিংয়ের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। বেশ সতর্ক ব্যাটিংয়ে গড়ে তুলেছেন ১৩২ রানের জুটি। অবশেষে দলীয় ১৩৮ রানের মাথায় নাজমুল ইসলামের বলে মুশফিকের ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ভয়ঙ্কর টেইলর। বিদায়ের আগে ৭২ বল খেলে নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ৭৫ রান।
এরপর সিকান্দার রাজাকে নিয়ে ৮৪ রানের জুটি গড়েছেন শন উইলিয়ামস। এই জুটি জিম্বাবুয়ের ইনিংসকে ২০০ পার করে। দলীয় ২২২ রানে অপুর বলে উঠিয়ে মারতে গিয়ে টাইমিং মিস করেন আর বল গিয়ে জমা হয় লং-অনে থাকা ফিল্ডার সৌম্য সরকারের হাতে। ৫১ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ৪০ রান করে বিদায় নেন রাজা। এরপর ধীরেসুস্থে খেলে ১২৪ বলে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন শন উইলিয়ামস।
এরপর পিটার মুরকে সঙ্গী করে বাংলাদেশি বোলারদের হতাশ করতে থাকেন উইলিয়ামস। দু’জনের জুটি থেকে আসে ৬২ রান। এরপর ৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রানআউট করে পিটার মুরকে ২৮ রানে ফেরান আরিফুল হক। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান তুলে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট তোলেন নাজমুল হাসান অপু। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও আবু হায়দার রনি ১টি করে উইকেট নেন।