কলকাতা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার বোড়াল গ্রামের বসু পরিবারের দুর্গাপুজো খুবই প্রাচীণ। প্রায় ৩০০ বছর আগে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। বংশ পরম্পরায় চলতে চলতে একসময় তা কোন এক অজ্ঞাত কারনে বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৪১সালে ওই পরিবারের সদস্য তুলসীচরণ বসু পুনরায় এই পুজো শুরু করেন। এরপর থেকে তা টানা চলে আসছে। বসু পরিবারের আত্মীয়-স্বজনেরা যে যেখানেই থাকুন না কেন দুর্গা পুজোর সময় গ্রামে ফিরে আসেন। ওই সময় সবাই মিলিত হন একসাথে।
বোড়ালে মূলত দুটি বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন হত। একটি দক্ষিণ পাড়ার দত্ত পরিবারে এবং মাঝের পাড়ার এই বসু পরিবারে। কথিত আছে, এক তান্ত্রিক তুলসীচরণ বসুকে বলেছিলেন তোমাদের বাড়িতে মা আসছেন প্রস্তুত হও। ওই বছরই পাশের গ্রামের কেশব নামে এক মৃৎশিল্পী সটান ওই বাড়িতে এসে প্রতিমা বানানোর আব্দার করেন। তুলসীচরণ জানতে চান কত দিতে হবে। ওই পোটো ১০ টাকার বিনিময়ে প্রতিমা বানিয়ে দেবেন বলে জানায়। রাজি হয়ে যান তুলসীচরণ। তৈরী হল এক চালের প্রতিমা। মহা ধুমধামে আয়োজন হল পুজোর। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শিতে মাতোয়ারা হয়ে উঠল পুজোর অঙ্গন। দ্বিতীয় পর্যায়ের সেই শুরু। চিরাচরিত প্রথা ও সম্পূর্ণ নিয়ম নিষ্ঠা মেনে আজও আয়োজন হয়ে আসছে মায়ের আরাধনা।
বসু পরিবারের দুর্গা খুবই জাগ্রত। এমনই মত গোটা গ্রামের। কথিত আছে, একবার অষ্টমীর ভোর হয়েছে ভেবে রাত দু’টোর সময় বোড়ালের ধোয়া পুকুরে স্নান করতর চলে গিয়েছিলেন তুলসীচরণের স্ত্রী লীলাবতী। তিনি দেখেছিলেন, তাঁকে কেউ একজন পাহারা দিচ্ছেন। আসলে স্বয়ং মা দুর্গাই তাঁকে আগলে রেখেছিলেন। তাই অত রাতেও কোন রকম ভয়ের সম্মুখীন হতে হয়নি লীলাবতীকে।
বোড়ালের বসু পরিবার ঋষি রাজনারায়ণ বসুর বংশধর। তুলসীচরণ বসুর ভাই তারাপদ বসু ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদা মায়ের দীক্ষিত পরিবার এই বসু পরিবার। তারাপদ নামটি মা সারদা স্বয়ং দিয়েছিলেন। নামকরন করে বলেছিলেন এই ছেলে সুনাম অর্জন করবে। মায়ের কথায় সত্যি হয়। রামকৃষ্ণ দেবের ভ্রাতুষ্পুত্র নকুলেশ্বর চট্টোপাধ্যায় একসময় বোড়ালে এসে বসু পরিবারের দুর্গাপুজো করেছেন। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে এবছরো মায়ের আরাধনায় কোন খামতি রাখেনি বসু পরিবার। তুলসীচরণ ও তাঁর স্ত্রী লীলাবতী প্রয়াত হয়েছেন। বর্তমানে প্রাণকুমার বসু, ব্রজকুমার বসু ও মধুসূদন বসুর তত্বাবধানে পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে।