আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য, রাসমনি ভবনে লক্ষাধিক মানুষের ভোগের আয়োজন


মঙ্গলবার,০৯/১০/২০১৮
1330

বাংলা এক্সপ্রেস---

কলকাতা: আড়াইশো বছরের পুরনো ঐতিহ্য। জমিদার বাড়ির পুজো বলে কথা। কেউ যেন খালি মুখে ফিরে না যান। নজর থাকত পরিবারের সদস্যদের। তখন জানবাজারে পুজো হত। রাসমনি ভবন মহালয়ার দিন থেকেই গমগম করত। আত্মীয় স্বজন যে যেখানেই থাকতেন চলে আসতেন এই সময়। লোক-লস্কর, হাঁক-ডাক, পরিবেশটাই বদলে যেত। পুজোর ক’দিন ভোগের আয়োজন ছিল সবার জন্য। যাঁরাই প্রতিমা দর্শনে আসতেন তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়া হত ভোগের প্রসাদ।

ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দেশ থেকে জমিদারি প্রথা লুপ্ত হয়েছে। ইংরেজও ভারত ছেড়েছে। জানবাজারের বাড়ি থেকে সেই কবে রাসমনি বাড়ির পুজো চলে এসেছে বালিগঞ্জের রাসমনি ভবনে। কিন্তু প্রাচীন এই দুর্গাপুজোর রীতি-নীতি-ঐতিহ্য সেই আগের ধারাই বজায় রেখেছে। পুজোর আয়োজন বহরে কমলেও আন্তরিকতার খামতি নেই রানী রাসমনির বর্তমান বংশধর শ্যামলী দাস ও তাঁর পরিবারের। এবছর পুজোর আয়োজনের জোরদার প্রস্তুতি চলছে। বায়না হয়ে গিয়েছে সবকিছুই। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আসবেন ধরে নিয়ে রান্নার কাজের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন অমিয় মহাপাত্র। প্রায় ৫০ বছর ধরে রাসমনি ভবনে পুজোর ভোগের রান্নার দায়িত্বে ছিলেন অমিয়’র বাবা বৃন্দাবন মহাপাত্র। অমিয়কে সহযোগিতা করবেন কৃষ্ণা, সিকন্দর, শংকররা। বাড়ি আলো দিয়ে সাজানোর কাজে নেমে পড়েছেন ইলেকট্রিশিয়ান চন্দন রায়। রানিমার বড় ভাই তপন দাস দেখে নিতে ব্যস্ত সব ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা।

শ্যামলীদেবীর দুই ছেলে অমিতাভ ও অম্লান, পুত্রবধূ ঝুমা ও রীণা এখন ব্যস্ত শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিতে। নাতি- নাতনি অভিষেক, অনন্যা, অদৃজার আনন্দ দেখে কে।

আগে কৃষ্ণনগর থেকে প্রতিমা শিল্পীরা রাসমনি ভবনে এসে প্রতিমা তৈরী করতেন। এখন অবশ্য আর তা হয়ে ওঠে না। স্থানীয় প্রতিমা শিল্পীর কাছেই প্রতিমার বাইনা দেওয়া হয়। এবার প্রতিমা বানাচ্ছেন উত্তম দাস। পুজোর ব্রাহ্মণ সুখেন্দু মুখোপাধ্যায়।

রানি রাসমনির নাতবউ তথা অতীন্দ্রনাথ দাস এস্টেটের প্রধান শ্যামলী দাস জানালেন, আগের মত আর সামর্থ্য নেই। রানি রাসমনির পরিবারকে নানা ভাবে ঠকানো হয়েছে। গোটা বাংলাদেশেই জমিদারি ছিল একসময়। কিন্তু তাঁদের পরিবারকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। তবে এই দুর্দশার মধ্যও মাকে ঘরে আনতে কোন কিছুই বাদ রাখছি না। লক্ষাধিক মানুষের ভোগের আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
শ্যামলীদেবী বলেন, যাঁরাই রাসমনি ভবনে আসবেন পুজোর সপ্তমী থেকে দশমীর দিন কেউ যাতে খালি মুখে ফিরে না যায় তার জন্য ভোগের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। কথায় কথায় তিনি জানালেন, অনেক বছর মায়ের পুজোর আয়োজন কি করে করা হবে তা নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়তে হয়। কিন্তু মা য়ে খুব জাগ্রত। মায়ের আয়োজনের টাকা মা’ই জোগাড় করে দেন।

এবছর দেশের সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজের বিশিষ্টজনেদের কাছে পুজোর আমন্ত্রণ পাঠানো হয়ে রাসমনি পরিবারের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ববন্দ্যোপাধ্যায়- বাদ পড়েননি কেউই। রাজ্যের ও কেন্দ্রের মন্ত্রীদের কাছেও আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন রানিমা শ্যামলী দাসের পক্ষে অতীন্দ্রনাথ দাস এস্টেটের ম্যানেজার সঞ্জয় দাইমা। শ্যামলী দাস বলেন, মহাপুজোয় তিনি চান রাজনৈতিক দলাদলি ভুলে সকলে একসঙ্গে মিলিত হন। ভেদাভেদ নয়, কিভাবে দেশের উন্নতি হয় তা নিয়ে ভাবুক সবাই।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট