পশ্চিম মেদিনীপুর :- প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নানা ধরনের আর্থিক তছরুপের অভিযোগ তুলে স্কুলে তালা বন্ধ করল গ্রামবাসী।নারায়ণগড় ব্লকের বাখরাবাদ ১৩ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের হিয়াৎচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা।বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল সহ বিভিন্ন আর্থিক ক্ষেত্রে তছরুপের অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার থেকে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়।এমনকি মঙ্গলবার ও বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা।এর ফলে স্কুলে এসেও ফিরে যেতে হয় কচিকাঁচা পড়ুয়াদের।প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসিরা।যদিও এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক রানা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ অনিয়মিত স্কুলে আসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক রানা।পাশাপাশি বিদ্যালয়ে এসেও নানা অজুহাত দেখিয়ে চলে যান।পাশাপাশি মিড ডে মিলের,রান্না কারি, জামাকাপড় সরবরাহকারী দের টাকা দেয়নি প্রধান শিক্ষক নিজেই।সেই মতই গ্রামবাসী বিদ্যালয় এর বেনিফিশিয়ারি কমিটি বিদ্যালয় পরিদর্শক এর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।কিন্তু কোন রূপ সুরাহা না হলে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।শুধু বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী নয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এসেও ফিরে যান।বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সুদীপ কর বলে-“বিদ্যালয়ে প্রতিদিন আসি কিন্তু প্রধান শিক্ষক আসে না।আজকেও এসে দেখি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।গ্রামের লোকেরা বলে ফিরে যেতে তাই বাড়ি চলে যাব।”বিদ্যালয় এর এই ধরনের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষকের সহকর্মী অমিতা মোহান্তি।তিনি বলেন-“বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপর থেকে এলে ও প্রধান শিক্ষক নিজে তা পরিবেশন করছেন না।আমি মনে করি এই ধরনের তছরুপ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক রানা নিজে করছেন।
বিদ্যালয়ে শুক্রবার থেকে গ্রামবাসীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তাই পঠন-পাঠন বন্ধ রয়েছে।” বিদ্যালয় এর বেনিফিসারি কমিটির সদস্য তথা অভিভাবক কালীপদ দাস জানিয়েছেন-“যতদিন থেকে এই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় এসেছেন তবে থেকেই নানান অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে।পাশাপাশি তিনি মিড ডে মিল জামাকাপড় ভুসিমাল বিভিন্ন জায়গায় টাকা দেননি।অনিয়মিত বিদ্যালয় এসে তিনি স্বাক্ষর করে নেন।বিদ্যালয়ে আসা বিভিন্ন ধরনের সরকারি সাহায্য তিনি নিজে আত্মসাৎ করেছেন।এবং দীর্ঘদিন ধরে ভূষিমাল সহ সবজি দোকানে টাকা না দেওয়ায় মিড ডে মিল হয় না।তাই গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা শুক্রবার থেকে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেই।তবে আমরা পঠন-পাঠন বন্ধের পক্ষে নই।গ্রামবাসীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যালয় তহবিলের এর বিভিন্ন তছরুপের টাকা মিটিয়ে বিদ্যালয় আবার চালু হোক আমরা সেটাই চাই।”
সমস্যার সমাধান হয়ে বিদ্যালয় চালু হোক এটাই চায় গ্রামবাসীরা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের অভিযোগ এর সম্পূর্ণ সত্য না হলেও আংশিক সত্যতা স্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বয়ং।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা অভিযুক্ত দীপক রানা জানিয়েছেন-” বিদ্যালয় এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য বিদ্যালয় পরিদর্শক সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মত বিদ্যালয় আজ এসেছি।আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি অনিয়মিত বিদ্যালয় আসি।আমি পোশাকের টাকা অন্য একজনকে দিয়ে দিয়েছি ওটাই একমাত্র আমার সমস্যা।এ ছাড়া আমার আর কোন সমস্যা নেই।আমি গত শুক্রবার খবর পেয়েছি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।সেই জন্য আজ বিদ্যালয় এসেছি সমস্যা সমাধানের জন্য।আমার সমস্যা রয়েছে আমি তা স্বীকার করছি। তবে সব অভিযোগ সত্যি নয়।”অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কাঞ্চন মন্ডল জানিয়েছেন-“আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করার পর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রতিনিধি গেলে তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষুব্ধ জনতা।পরে বেলদা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
ব্লকের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক,জেলা পরিদর্শকসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রামবাসীদের।গ্রামের এই প্রাথমিক বিদ্যালয় আবার চালু হোক নিয়মিত ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় আসুক এই দাবি রাখছে গ্রামবাসী থেকে সকলে।