আগরতলার, ত্রিপুরা: জিরানিয়ার মান্দাইয়ের বধ্যভূমিতে তরুণ সাংবাদিক শান্তনু ভৌমিককে নৃশংসভাবে খুনের এক বছর পূর্ণ হলাে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় একবছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্বেও ন্যায় বিচার অধরা থেকে গেলাে তার অসহায় পরিবারটির। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে শান্তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মােচনে সিবিআই তদন্তের আদেশ দিলেও এখন পর্যন্ত আশার আলাে তেমন প্রত্যক্ষ হলাে না। ২০ সেপ্টেম্বর শান্তনু খুনের এক বছর পূর্ণ হলাে। একইভাবে অপর সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক হত্যা মামলাতেও তদন্ত জারি রেখেছে। সিবিআই। সেই অভিশপ্ত দিনটির কথা কখনাে ভুলবেন না এই রাজ্যের আজ শান্তন ৩৭ লক্ষাধিক মানুষ। ভুলবেন না। সংবাদ মাধ্যমের সাথে জড়িত আপামাের সাংবাদিক ও অসাংবাদিক কর্মীরা। কারণ, ২০১৭-এর ২০ সেপ্টেম্বর দিনটিতে রাজ্যের বকে ঘটেযায় সেই নারকীয় বীভৎস ও বর্বরােচিত তরুণ সাংবাদিক শান্তনু। ভৌমিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
যে হত্যাকাণ্ড কখনাে ভােলার নয়। রাজধানী আগরতলা থেকে ২৫ কিলােমিটার দূরত্বে থাকা মান্দাইয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে একদল ঘাতকের ধারালাে অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুবরণ করতে হয় সাংবাদিককে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ঘাতক বাহিনী শান্তনুকে খুনের পর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। যে ঘটনা জানাজানি হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাজ্যের পাশাপাশি সারা দেশে সাংবাদিক খুনের নিন্দা বয়ে যায়। আলােড়ন উঠে যায় সাংবাদিক মহলে। সকলেই একবাক্যে এই খুনের সাথে।যুক্ত অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হন। শান্তনু খুনের পর রাজ্যের সাংবাদিকদের লেজুর অংশের বাদ দিয়ে একটা বড় অংশ সিবিআই তদন্তের জোরালাে দাবি জানায়। যদিও তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার সিবিআই না দিয়ে মামলার তদন্ত ভার তুলে দেয় সিট তথা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের হাতে। যদিও সেই সিট প্রথম থেকেই অশ্বডিম্ব প্রসব করে। শুধুমাত্র লােক দেখানাে নাটক হিসাবে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়া হয়। রাজ্য পুলিশ বা সিটের তদন্তের অগ্রগতি বাম আমলে ছিলাে এতটুকুই।
শান্তনু খুনের ঠিক দুমাস বাদেই ২১ নভেম্বর ২০১৭তে রাজধানী সংলগ্ন “আরকেনগর টি এসআর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের সদর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এ কে ৪৭’র গুলিতে খুন করা হয় আরেক সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিককে। সেই হত্যাকাণ্ডকে পনিও আসুন।কেন্দ্র করেও গােটা দেশে আলােড়ন বয়ে যায়। কিন্তু সাংবাদিক সুদীপ খুনের তদন্তেও একইভাবে সেই সিট গঠন করে দায়িত্ব এড়িয়ে যায় সর্বহারা বাম সরকার। এরমধ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। জনতার রায়ে বাম সরকার উৎখাত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মােতাবেক নয়া সরকার দুই সাংবাদিক খুনের ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচারের জন্য সিবিআই তদন্তের আদেশ দেয়। যথারীতি বেশ কিছুদিন পর শান্তনু সুদীপ খুনের তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও নিরাশার বিষয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত শুরু করার কয়েক মাস অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত আশার আলাে দেখতে।পেলেন না সুদীপ শান্তনুর পরিবার। কার্যত ন্যায় বিচার আদৌ জুটবে কিনা সেটা বলাও সময় সাপেক্ষ। ২০ সেপ্টেম্বর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে শান্তনুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের। কিন্তু এই ৩৬৫ দিনের সুদীর্ঘ সময়ে তার পরিবার কি বিচার পেলাে সেটাই বিচার্য বিষয়