কালিয়াগঞ্জ : এক সময় সাবেক দিনাজপুরের রাজ বাড়ির কামানের গোলা ফাটানোর আওয়াজ শুনেই বর্তমান ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর উদগ্রামের পূজার সূচনা হত। আজ সেই সব শুধুই ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। আজ আর রাজাও নেই নেই রাজপাটও। কিন্তু আজ যা আছে তা বিভক্ত দুই বঙ্গের সীমান্ত চিহ্নিত করণের কাঁটাতারের বেড়া। ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার পর এই রাধিকাপুরের উদগ্রামের দুর্গা মন্দিরের নামে থাকা চল্লিশ বিঘা জমিও চলে গিয়েছে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে।যা রয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে।
আর এপারে রয়ে গিয়েছে দেবীর মুল মন্দির এবং মন্দির সংলগ্ন ১৩ বিঘা কৃষি জমি। সেই জমিতে চাষাবাদ করে ও ভক্তদের অর্থদানে বর্তমানে দেবী পুজার আয়োজন করা হয়। কিন্তু দুই বঙ্গের বিভাজন উদগ্রামের দুর্গা পূজায় আজও কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। আজও এপার বাংলার উদগ্রামে নিয়ম নিষ্ঠাভরে গ্রামবাসীদের দ্বারা উদগ্রামের মন্দিরে পুজিত হয় দেবী দশভুজা। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াজাল তৈরি হলেও আজও শারদীয়া উৎসবে উদগ্রামের পূজাকে ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনার কোনও খামতি নেই বাংলাদেশের হিন্দুপ্রাণ মানুষদের মধ্যে।
তাই প্রতি বছর পূজার দিনগুলিতে দুই বাংলার একাত্মকরণের ছবি দেখা যায় দুই বাংলার দুই পাড়ের মানুষের নিয়মনিষ্ঠার মধ্যদিয়ে। পূজার দিনগুলিতে সীমান্ত রেখা চিহ্নিত করণে কাঁটাতার উদগ্রামে পৌঁছতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও এই বেড়াজাল নিষ্ঠা ও ভক্তির ক্ষেত্রে ওপার বাংলার মানুষের কাছে কোনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। উদগ্রামের দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ বেশকিছু রিতিরেওয়াজ আজও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে। ভ্রমণ রসিক বাঙ্গালী পূজার সময় নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ালেও পূজোর কদিন এই গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে কেউ বাইরে পূজা দেখতে যান না। সেই সঙ্গে পূজোর কদিন গোটা গ্রামের মানুষ নিয়ম করে নিরামিষ খাবার খান। বছরের অন্যান্য সময়ে বিয়ে কিংবা অন্যকোন শুভ কাজে মায়ের মন্দিরে এসে আশীর্বাদ না নেওয়া পর্যন্ত কোনও শুভ কাজ সম্পূর্ণ হয় না এই গ্রামে। এই গ্রামের মৃন্ময়ী দেবী দশভুজার পূজাকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষ যে যেখানেই থাকুক না কেন পূজোর দিন গুলিতে সকলে ফিরে আসেন নিজের বাড়িতে।