তিথি ও তারিখ মেনে সোমবার শুরু হবে বাঙালির উৎসব মরশুম। সোমবার বিশ্বকর্মা পুজোয় মাতবে বাঙালি। গোটা রাজ্যে ছোট বড় কল কারখানা থেকে সরকারি অফিস, সর্বত্র সেজে উঠবে পুজোর আয়োজনে। এবছর বিশ্বকর্মা পুজো সোমবার তাই রবিবার ছুটির মাঝেই সকলেই সেরে নিচ্ছেন পুজোর বাজার।
আর বিশ্বকর্মা পূজো মানেই বাঙালির ঘুড়ি উত্সব ।আগে ছোটো বড়ো সকলেই ঘুড়ি নিয়ে মেতে ওঠতো এই দিনটিতে। তবে বর্তমানে যুগের যুগের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে বিশ্বকর্মা পূজোতে বাঙালির সেই প্রাচীন ঘুড়ি উত্সব ।একটা সময় ছোটো থেকে বড়ো বাড়ির সকলে মিলেই বিশ্বকর্মা পূজো উপলক্ষে আকাশের ঘুড়ির ঝাঁকে ভরিয়ে তুলতো৷আজ বরং মোবাইল গেম, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর দৌলতে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির সেই প্রাচীন ঐতিহ্য বাহী ঘুড়ি উত্সব । এখন আর স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাড়ির ছাদে ছাদে ভোঁ-কাট্টা বলে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখা যায় না৷ কার কটা ঘুড়ি কাটা হল তা গোনাও হয় না৷
স্কুলে গিয়ে আলোচনা হয় না ‘এই কাল ক’টা ঘুড়ি কাটলি রে’ বলে৷ অথচ বছর কয়েক আগেও স্বাধীনতা দিবস থেকে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পর্যন্ত আকাশে দেখা মিলত ঘুড়ির ঝাঁকের৷ কেন এমনটা হয়ে গেল? যেখানে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস লাখ টাকায় ঘুড়ি বিক্রি করছে, সেখানে আকাশে ঘুড়ির ঝাঁকের অভাব কেন?
কালিয়াগঞ্জের এক ঘুড়ি বিক্রেতা বলেন, ‘এখন আর বাচ্চাদের ঘুড়ি ওড়ানোর সময় কোথায়? ফেসবুক ওযাটস্যাপ নিয়েই তারা দিনরাত্রি ব্যাস্ত থাকে।বন্ধু দের সাথে একসাথে ঘুড়ি ওড়ানো ঘুরতে যাওয়া এখন প্রায় কমেই গেছি।এখন যদিও তেমন কেউ ঘুড়ি কিনতেও আসে না।তবে বিশ্বকর্মা পূজো উপলক্ষে আজ ও কিছু কিছু ছেলে মেয়েরা এসে এই দিনটির জন্য কিছু ঘুড়ি কিনতে আসে।তবে আগের মতো আর তেমন ঘুড়ির চাহিদা নেঈ।
কালিয়াগঞ্জের অস্থায়ী ঘুড়ি ব্যবসায়ী দেবাশীষ রায় বলেন, ‘ পড়াশোনার চাপে হোক কিংবা সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে , এখনকার বাবা-মায়ের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েরাও মাঠে- ময়দানে নেমে খেলার ইচ্ছে রাখে না৷
আগে সারা বছরই ঘুড়ি বিক্রি হত৷ এখন বিশ্বকর্মা পুজোর দিন-কয়েক আগেই মূলত ঘুড়ি বিক্রি হয়৷
ঘুড়ি ব্যবসায়ী আনোয়ার আলি জানালেন, ‘ঘুড়ির ব্যবসা খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ আগে সারা বছর যে বিপুল হারে ঘুড়ি বিক্রি হত, এখন তা অনেকটাই কমে গিয়েছে৷ একটা সময় ২০-২৫ হাজার কারিগর ছিল, এখন কমতে কমতে যা দাঁড়িয়েছে ৪-৫ হাজারে৷ সারা বছর কাজ না থাকায় তাই কারিগরদেরও অন্য কাজ দেখতে হচ্ছে। বিশ্বকর্মা ছাড়াও পৌষ সংক্রন্তি, সরস্বতী পুজো অক্ষয় তৃতীয়াতে আগে বিপুল পরিমাণ ঘুড়ি বিক্রি হত। একটা সময় পাড়ায় পাড়ায় দল বেঁধে রাত জেগে বিশ্বকর্মা পূজো উপলক্ষে সুতোয় মাঞ্জা দেওয়ার ছিল রেওয়াজ৷ এখন সে-সবও উধাও’৷ সময়ের অভাবে মাঞ্জা দেওয়া সুতো কিনেই ঘুড়ি ওড়ায় এখনও কিছু উত্সাহী মানুষ৷
.বাঙ্গালী শ্রমিক বিশ্বকর্মা পুজোয় আজও অনন্দ করেন, কিন্ত্ত গৃহস্থের বাড়ির ছাদে আর সেজে উঠে না সেই ঘুড়ির ভোকাটা৷ সময়ের সাথে সাথে বাঙালীর ঐতিহ্য গুলোও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ।