পঞ্চম টেস্ট ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই টেস্ট সিরিজ ইংল্যান্ড পকেটে পুরে নিয়েছে। শেষ টেস্ট টি ছিল সিরিজে নীয়ম রক্ষার ম্যাচ। শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড ভারতকে ১১৮ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতল ৪-১ এর বাবধানে। এই টেস্টটি ছিল অ্যালেস্টার কুকের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে শেষতম টেস্ট ম্যাচ। এই ম্যাচে কুক মোট রান করেন ২১৮ রান, আশ্চর্যের বিষয় হল সিরিজের বাকি ইনিংস গুলোতে কুক একটাও অর্ধশত রান করতে পারেননি।
শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড করে ৩৩২ রান। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বচ্চ ৮৯ রান করেন জস বাটলার। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারত করে ২৮২। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে এগিয়ে থেকে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে মোট ৮ উইকেটে ৪২৩ ইনিংস ডিক্লিয়ার করে দেয় এবং দলের মোট রান হয় ৪৬৩। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বচ্চ রান ১৪৭ করেন কুক।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬৪ রানের লক্ষমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে ভারত শুরুতে প্রবল ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। মাত্র ২ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারায়। এরপর ইনিংসের হাল ধরেন লোকেশ রাহুল ও আজিঙ্কে রাহানে। রাহানে বাক্তিগত ৩৭ রানে আউট হয়ে যায়। কিন্তু আউট হওয়ার আগে রাহানে রাহুলের সাথে ১১৮ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ করেন। আগের ম্যাচের অর্ধশত রান করা হনুমা বিহারি কোন রান না করেই মঈন আলির বলে আউট হয়ে যান।
এরপর মনে হয়েছিল ভারত হয়তো আর বেশিদূর এগোতে পারবে না। কিন্তু রিশব পান্টকে সঙ্গে নিয়ে রাহুল দ্বিশত রানের বেশি পার্টনারশিপ করেন। রাহুল শতরান করেন এবং পান্ট রাসিদের বলে মিড অনের উপর দিয়ে ছয় মেরে তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে প্রথম টেস্ট শতরান করেন। দুজনে মিলে অত্যন্ত দ্রুত্গতিতে রান করতে থাকে। এইসময় অনেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন ভারত বোধহয় ম্যাচটি জিতেই যাবে। জিততে না পারলেও ম্যাচ ড্র অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে আদিল রাশিদের এক অসাধারন লেগস্পিন বলে বোল্ডআউট হয়ে যান রাহুল। কেউ কেউ এই বলটিকে শতাব্দীর সেরা স্পিন বল হিসাবে দেখছেন! কিন্তু আউট হওয়ার আগে তিনি ১৪৯ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন।
রাহুল আউট হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট পরেই রাশিদের গুগলিতে মঈন আলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রিশব পান্ট। তারপর ইংল্যান্ডের জেতা ছিল শুধুমাত্র সমায়ের অপেক্ষা। যদিও তারপর জাদেজার সঙ্গে ইশান্ত শর্মার ৪৪ বলের একটা পার্টনারশিপ যেটার মধ্যে দিয়ে ভারত ভাবতে শুরু করে এখনও ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু স্যাম কুরানের বলে উইকেট কিপার জনি বেইস্ট্রোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ইশান্ত। তার কিছু সময় পর কুরানের বলে জাদেজাও আউট হয় এবং অ্যান্ডারসন সামির বোল্ড করার সাথে সাথে ইংল্যান্ড ১১৮ রানে ম্যাচ জিতে যায়।
সামির উইকেট নিয়ে অ্যান্ডারসনের মোট এই ইনিংসে মোট ৩ উইকেট পান এবং সামির উইকেট পাওয়ার সাথে সাথে অ্যান্ডারসন গ্লেন ম্যাগ্রার ৫৬৩ উইকেটের রেকর্ড ভেঙে দেন। ম্যাগ্রার রেকর্ড ভেঙে দিয়ে অ্যান্ডারসন সবথেকে বেশি উইকেট পাওয়ার দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বোলারের তালিকায় ঢুকে পড়েন এবং ফার্স্ট বোলার হিসাবে সবথেকে বেশি উইকেট পান।
কুকের জন্য এর থেকে ভাল উপহার আর কিছু ছিল না। পুরো সিরিজে ফর্মে না থাকলেও শেষ টেস্টের পারফর্মেন্স তাঁর কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। অন্যদিকে ভারত আগেই সিরিজ হেরে গিয়েছিল সুতরাং এই টেস্ট তাদের কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই ছিল। এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভারতের জন্য ভাল না হলেও রাহুল-পান্টের অনবদ্য পার্টনারশিপের দৌলতে ভারত স্বপ্ন দেখতে শুরু করে কিন্তু ইংল্যান্ডের বোলারদের মানসিক দৃঢ়তার কাছে সেটি সম্ভব হয়নি। শেষপর্যন্ত বিদায়ী টেস্ট কুকের কাছে সবদিক থেকেই স্বরনীয় হয়ে রইল।