আন্তজার্তিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হল গত 8 ই সেপ্টেম্বর 2018 অপরাহ্ন আড়াইটায় হায়াৎনগর সুভাষ সমিতির সম্মেলন কক্ষে। হায়াৎনগর সুভাষ সমিতি ও হায়াৎনগর সুভাষ সমিতি লাইব্রেরির যৌথ উদ্যোগে । আলোচনার বিষয় বস্তু ছিল 2018 সালের আন্তজার্তিক সাক্ষরতা দিবসের থিম “সাক্ষরতা ও দক্ষতা বিকাশ “। সুহৃদ সম্মিলনীর সদস্যরা উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন । বিদ্যাসাগরের ও সত্যেন মৈত্রের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণে , অতিথিবর্গের বরণে ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
স্বাগত ভাষণে উপস্থিত অতিথিবর্গসহ সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে শ্রীলক্ষ্মীকান্ত মান্না বিশ্বে সাক্ষরতা ও দক্ষতা বিকাশে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি র জন্য UNESCO এর পুরস্কার প্রাপক আফগানিস্তান, উরুগুয়ে, ইরান, নাইজিরিয়া ও স্পেন পাঁচটি দেশের নাম উল্লেখ করেন । আমাদের দেশেও আজকের দিনে সাক্ষরতা জন্য জাতীয় পুরস্কার সত্যেন মৈত্রের নামে দেওয়া হয়ে থাকে । সত্যেন মৈত্র জনশিক্ষা সমিতিও শ্রী শক্তিপদ মণ্ডল মহাশয়ের নেত্রীত্বে ধারাবহিক ভাবে সাক্ষরতা ও দক্ষতা বিকাশে ব্রতী আছে। শক্তিবাবুর ব্যবহারিক ও আর্থিক সাক্ষরতা 2015 প্রকল্পটিকে দক্ষিন 24পরগনা জেলার তথা ফলতা থানার জন্য সাক্ষরতার উপর Greenfield project হিসাবে উল্লেখ করে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। হায়াৎ নগরে 1লা সেপ্টেম্বর হতে শুরু হওয়া বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রর সাফল্য কামনা করেন ও সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেন ।
আলোচনাসভায় মূলবক্তাকে হায়াৎ নগর সুভাষ সমিতি ও হায়াৎ নগর সুভাষ সমিতি লাইব্রেরি ও ব্যবহারিক ও আর্থিক সাক্ষরতা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের পক্ষে মানপত্রসহ সম্বর্ধনা-স্মারক অর্পণ করা হয়।
বিদ্যাসাগরের জীবন-দর্শন ও ভাবধারায় দীক্ষিত শক্তি বাবু মূল ভাষণে বলেন সাক্ষরতার প্রসার বিশেষত মহিলাদের মধ্যে অন্ততঃ জরুরি । কেননা মহিলাদের সাক্ষরতার ফলে সমাজের সম্মান বাড়ে ।সেটা সম্ভব হলেই কেরলের মত সারা দেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা তথা সমাজের সমস্তস্তরের প্রগতি সম্ভব। সাক্ষরতার মূল-পথিকৃৎ বিদ্যাসাগরের চিন্তাধারায সর্বস্তরের শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ, কোন জাতি উন্নয়ন করতে পারেনি। দক্ষতার বিকাশ সম্পর্কে তিনি মত পোষণ করেন এই বলে যে, কেবল কর্মকুশলতার দিকটি ধরলে সেটা কিন্ত একটা গণ্ডির কথা বলা হবে নিজের নিজের স্বার্থের বিষয়ে লক্ষ্য রেখে । তাই তিনি তিনটি H ( Head, Heart and Hand)
এর বিকাশের উপর জোর দেন যেথায় মেধার বিকাশ, চেতনার বিকাশ ও কর্মকুশলতারবিকাশ সমান গুরুত্ব পাবে। যেহেতু বিদ্যাসাগর নিজে ধর্মে বা ধর্মাচরণে বিশ্বাসী ছিলেন না তিনিও তাই সমস্তকিছুর উর্ধে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে গ্রহণ করে কঠিন বাস্তবের সমস্ত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।
সমিতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বর্তমানে সত্যেন মৈত্র জনশিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষক রণজিৎ কুমার মণ্ডল মহাশয় সমিতির অতীত ইতিহাস থেকে আশির দশকের বয়স্কদের জন্য প্রথা বহির্ভূত নৈশ বিদ্যালয় পরিচালনাসহ সমিতির বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রয়াস ও নিজের প্রত্যক্ষ যোগদানের কথা উল্লেখ করেন এবং বর্তমান প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরারি সাউ, চুনিলাল মণ্ডল, অজয় বাগ প্রমুখ ব্যক্তিগণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন । শ্রীজাতা মান্নার নৃত্য পরিবেশনা, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রর শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত নাটিকা, সেখ আব্দুর সামাদ ও শচীন রায়চৌধুরির আবৃত্তি অনুষ্ঠান টিকে মনোজ্ঞ করে তোলে ।
হায়াৎ নগরের নবগঠিত বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রর 11 জনমহিলা শিক্ষার্থীসহ 117 জন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ।
সভার শেষে সমিতির পক্ষে শ্রী মৃত্যুঞ্জয় পাল ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন । ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সমিতির পক্ষে তাপস মণ্ডল মহাশয় এবং লাইব্রেরীর পক্ষে অবসর প্রাপ্ত গ্রন্থাগরিক অসিত কুমার মান্না ও সহকর্মী অমল পুরকাইত ।