মায়ের পূজার্চনার জন্য  সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ১০৮ টি পদ্মফুল


রবিবার,২৬/০৮/২০১৮
1571

পিয়া গুপ্তা---

উত্তর দিনাজপুর: কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি আবার কখনো বা মেঘলা আকাশ। মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির মাঝে প্রকৃতিতে যেনো এক নৈসর্গিক মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর মাঠে মাঠে কাশ ফুলের দোলা ,বাতাসের সাথে বয়ে আসা শিউলি ফুলের গন্ধ  সকলেই জানিয়ে  দিয়ে যায় মা আসতে বাকি আর কয়টা দিন। তাই মা দুর্গাকে বরণের জন্য সকলেই ব্যস্ত।, তা সে পুজো মন্ডপ তৈরির কারিগর হোক বা প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা সকলেই মায়ের প্রতিমা তৈরি  কিংবা পূজোর আলোকসজ্জা সব কিছুতেই নিজেদের অভিনবত্ব   তুলে ধরার চেষ্টা করে চলছেন। এই পর্বে অবশ্য বাদ নেই চাষি ভাইরাও। মায়ের পূজার্চনার জন্য  সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ১০৮ টি পদ্মফুল । জানা যায় পদ্মের অভাবে নাকি রামচন্দ্রের অকালবোধনের পুজোও একসময় অসমাপ্ত হতে বসেছিল, বাধ্য হয়েই নিজের নীল কমলাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

সেই থেকে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোয় আর কিছু থাক বা না থাক ১০৮টি পদ্ম চাই-ই চাই। আর মহাপুজোর মহালগ্নে সারা রাজ্যে আনুমানিক ১৬ লক্ষ পদ্ম লাগে আর তার এক শতাংশ য়াংশ পদ্মই জোগান দেয় উত্তর দিনাজপুর। । তাই কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেও চূড়ান্ত ব্যস্ততা দেখা গেল চাষী ভাইদের মধ্যে। ভাদ্র মাসের প্যাচপ্যাচে গরম তার ওপর  বৃষ্টির লুকোচুড়ি খেলার মাঝেও  পদ্ম চাষীরা নাওয়া খাওয়া ভুলে অবিরাম, অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন ।

আশ্বিনের পুজোর জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাস থেকেই পদ্মের বীজ পোঁতা শুরু হয়ে যায় । আর শ্রাবণ-ভাদ্র মাস থেকেই তাতে ফুল ফুটতে শুরু করে। হাটু বা একবুক সমান জলে নেমে আগাছা বাছাই কত অক্লান্ত পরিশ্রম ই না করতে হয় পদ্ম চাষীদের। সেই জন্য হয়তো কবি লিখেছেন-“কাটা হেরি কান্ত কেন কমল তুলিতে,দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে?” দুর্গা পুজার সময় পশ্চিমবঙ্গের সাথে সাথে উত্তর দিনাজপুর জেলাতেও পদ্মের আকাল দেখা দেয় । তাই জেলা সহ কলকাতা ও বিহারের পুজা মণ্ডপ গুলিতে পদ্মের জোগান দিতে পদ্ম ফুলের চাষ শুরু করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর গ্রামের বাসিন্দারা ।
হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ই পদ্ম চাষ করেন | গ্রামে যতগুলি পুকুর আছে তার বেশির ভাগগুলিতেই চাষ হয় পদ্ম ফুলের এক বিঘার একটি পুকুরে অন্তর পদ্ম পাওয়া যায় প্রায় 2০০ থেকে ৩০০টি। এই সময় পদ্মের দাম প্রতি শ’য়ে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা হলেও পুজোর সময় তা হয়ে যায় শ’প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

এই সময় রমরমিয়ে চলে এই ফুলের চাষ । কম খরচে অধিক লাভের আশায় গ্রামের রেনুকা বর্মন, দিলীপ বর্মন, স্বপন বর্মন ও জগদীশ বর্মনের মত আরও অনেকেই বেছে নিয়েছে এই পেশা । গ্রামের বহু মহিলারাও এখন একাজে ভীষণ ব্যস্ত। তবুও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী যোগান দেওয়া মুসকিল হয়ে পরে   এই পদ্ম ফুলের|একদিকে পুকুরের যেমন অভাব সাথেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুকুর ভরাটের কাজ। তাই পদ্মের চাহিদা বেশি থাকায় যোগান দিতেই প্রতিবার হিমশিম খাচ্ছে চাষিরা। অকাল পদ্মের বাজারে একটু বেশী লাভের আশায় নিজেদের পুকুরেই চাষ শুরু করেছেন অনেকেই। চাষিরা জানান, আগে  পদ্ম চাষের জলাশয়ের অভাব ছিল না। কিন্তু বর্তমানে জলাশয়ের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাজারের চলতি চাহিদা অনুযায়ী তেমন পদ্মের যোগান দিতে পারেন না চাষীরা ।

তবুও হাসি মুখে বহু বাঁধা পেরিয়ে প্রতি বছর চাষ করে চলেছেন মায়ের পুজোর প্রধান ফুল। আর কয়েকদিন পরেই ফুলগুলিকে পুকুর থেকে তুলে, পৌছে দেওয়া হবে মহাজনদের।কারণ ক্ষুদ্র চাষিদের কাছে পদ্ম সংরক্ষণ করার কোনও ব্যবস্থা নেই বলে অনেক চাষি মহাজনকে পদ্মগুলি বিক্রি করে দেন ।চাষিদের  উৎপন্ন পদ্ম দিয়েই পূজিত হন দেবী মৃন্ময়ী । আর আপাময় বাঙ্গালী মেতে উঠবেন বছরের সেরা উত্সবে।  কিন্তু পদ্ম চাষের সঙ্কট নিয়ে সরকার ভাবছে না বলে অভিযোগ চাষিদের। চাষিদের আশঙ্কা বর্তমানে যে ভাবে পদ্ম ফুলের চাষ কমেছে তাতে আগামী দিনে পদ্মের ঘাটতি কিভাবে পুরন হবে তাই নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমেছে। তবে কি পদ্মের বিকল্প ফুলের সন্ধান করতে হবে ?

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট