বছরের ৩৬৫ দিনই এখন নানারকম দিবস। এত দিবসের ভিড়ে বিশ্ব হস্তি দিবসের কথা কেউ মনে রেখেছেন কিনা আমি জানিনা। কিন্তু ‘হস্তি অশোক’ এর এই দিনটার কথা মনে পড়বেই। আজ বিশ্ব হস্তি দিবস। হ্যাঁ, একসময় আমার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘হস্তি অশোক’। সেটা ৯০এর দশকের কথা। তখন খুব হাতির ছবি তুলতাম। বুনো হাতির তাণ্ডব, হাতির লোকালয়ে চলে আসা, হাতির শহর যাত্রা, চোরা শিকারিদের হাতে হাতির নিধন, গুন্ডা হাতিকে গুলি করে মারা এসব যেখানেই ঘটত, সেখানেই আমি যেন ‘প্রেজেন্ট স্যার’ বলে উপস্থিত। আজকাল ও আনন্দবাজার দুটি পর্বেই আমি একইসঙ্গে বলবান, বুদ্ধিমান, মজাদার এই অতিকায় প্রাণীটির নানা ছবি তুলেছি।
গুন্ডা হাতিকে ট্র্যাঙ্কুয়ালাইজ করে মারার প্রথম অপারেশনটি সম্ভবত ৯০এর দশকের কোন একটা সময়ে হয়েছিল। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মনোজ নন্দী, অতনু রাহা এবং সুব্রত পাল চৌধুরী। সুব্রত আমার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট বন্ধু। মূলত তারই চেষ্টায় আমিও ওই দলে জুটে গিয়েছিলাম। ভাল ছবি পাওয়ার উত্তেজনায় তখন আমার মাথায় আসেনি একজন অনভিজ্ঞ লোকের এমন অপারেশনের সঙ্গে থাকার বিপদের কথা। ঠিক তাই ঘটলো। কয়েকটা কুনকি হাতি নিয়ে গুন্ডা হাতিটার দিকে আমরা এগোচ্ছিলাম। আমি ছিলাম একটা কুনকি হাতির পিঠে। কোণঠাসা হয়ে গুন্ডা হাতিটা একসময় তেড়ে এল আমাদের হাতিটার দিকে, আমি হাতির পিঠ থেকে পড়ে গেলাম। হাতিটা আমার দিকে না এসে অন্যদিকে দৌড়ে গেল। হাতির পিঠ থেকে পড়ার ফলে আমার বাঁ হাতের কনুইয়ের নীচের অংশের হাড়টা ভেঙে এগারো টুকরো হয়ে যায়। ২৯ দিন নার্সিংহোমে ছিলাম। বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডাক্তার কল্যাণ মুখার্জির সফল অপারেশন আমাকে সেই হাতটা ফিরিয়ে দিয়েছে।
মানুষ চরিত্রগত ভাবেই দখলদার। অন্যের জমি, জায়গা, বাসস্থানের দিকে হাত বাড়ানোটা তার যেন একটা মজ্জাগত ব্যাপার। জল, জমি, জঙ্গল সব কিছুকেই সে করে তুলতে চায় তার একটা অবাধ লুণ্ঠনের জায়গা। হাতি লোকালয়ে আসছে বলে, ট্রেন লাইন পার হচ্ছে বলে যারা আজ হাঁকডাক করছেন, তাদের বুঝতে হবে কেন এই ঘটনা ঘটছে। উত্তরটাও খুব চেনা। কারণ, মানুষের লাগাতার দখলদারিতে জঙ্গলে তার খাবারে টান পড়েছে। তাই সে বনের বাইরে আসতে এবং এক জঙ্গল থেকে আরেক জঙ্গলে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর এখন যেটা রেল লাইন বা সড়ক কিংবা চলার পথ খোঁজ নিলে জানা যাবে সেটাই একসময় ছিল এলিফ্যান্ট করিডোর বা হাতির চলাচলের রাস্তা। সেই চেনাপথে পাড়ি দেওয়ার সময় হাতি দেখছে কোন জায়গায় মানুষের ঘর গেরস্থালী, কোন জায়গায় কারখানা, অন্ধকার জনপথে কোন জায়গায় জ্বলছে ঝলমলে লাইট। তবুও স্বাভাবিক প্রবৃত্তি তাকে সেখানে বারবার টেনে আনে। সড়ক বা রেলপথ পরিকল্পনার সময় আমাদের পরিকল্পনাবিদরা যেখানে কাজটি হচ্ছে সেখানকার প্রাণীকুল এবং বাস্তুতন্ত্র এরফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা সেটা হিসেবের মধ্যে রাখেন না বলে এই ঘটনা বারবার ঘটে। গণমাধ্যমে নিয়মিত জায়গা করে নেয় ট্রেন লাইনে লুটিয়ে পড়া হাতির ছবি।
রাজ্যের বন জঙ্গলকে হাতের তালুর মত চেনেন বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সুব্রত পাল চৌধুরী। তার মতে, হাতি আদতে একটা পরিব্রাজক প্রাণী। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ানো তার স্বভাব। কিন্তু মানুষ এখন তাকে প্রতিপক্ষ মনে করে তাকে লোকালয়ের কাছাকাছি দেখলেই তাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করছে ৫০০ টাকা রোজের হাতি তাড়ানো হুলা পার্টির লোকজন। তাড়া খেয়ে হাতি সাময়িকভাবে সরে গেলেও আবার চলে আসছে। এরা হাতিকে অকারণে ডিসটার্ব করে সমস্যা আরও জটিল করে তুলছে। এটা বন্ধ করার জন্য সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট হাতি তাড়াতে হুলা পার্টি ব্যাবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
হাতির মত একদা গৃহপালিত প্রাণীটিও মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। আমি জানি হাতিকে গৃহপালিত প্রাণী বলার পরপরই কিছু লোক আমাকে তেড়ে মারতে আসবেন। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, ঋকবেদ থেকে শুরু করে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, সর্বত্র গৃহপালিত হাতির উল্লেখ আছে। এখন সেই হাতিকে দেখলেই লোকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। ওড়িশা তাড়িয়ে পাঠাচ্ছে বিহারে, বিহার পাঠাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে, ঝাড়খণ্ড পাঠাচ্ছে বাংলায়। আবার কখনও বা এ রাজ্যে ঢুকছে নেপাল বা ভুটানের হাতি। কোন জায়গাতেই তার ঠাঁই নেই। বাংলায় হাতি বেশি আসছে তার একটা বড় কারণ হল, এখানে সবুজ বেশি। হাতির স্বাভাবিক খাদ্য গাছপালা, ফলমূল, খাদ্যশস্য সবকিছুই এখানে প্রচুর। রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্য এর সবচেয়ে বড় কারণ। বাংলায় একবার ঢুকে পড়লে হাতি আর এখন থেকে যেতে চায় না। কারণ, এত নিশ্চিত আহার আর কোথাও মিলবে না। আর এখানকার মানুষ হাতি ভালবাসে। হাতিকে পুজো করে তারা। নিতান্ত ফসল নষ্ট না করলে কিংবা তার আক্রমণে বা তাড়ায় মানুষ প্রাণ না হারালে লোকে হাতির দিকে তেড়ে যায় না।
উত্তরপূর্ব ভারতে যে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল জুড়ে এই প্রাণীকুল বাস করতো রাজনৈতিক কারণে তা এখন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সমস্যাদীর্ণ সেসব রাজ্যের মানুষ হাতিকে তাদের প্রতিপক্ষ মনে করে। হাতির অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র সীমিত হচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এব্যাপারে যৌথভাবে হস্তক্ষেপ না করলে এ সমস্যা মিটবে না। এলিফ্যান্ট করিডোরকে মানুষের দখলদারি থেকে মুক্ত রাখলে মানুষ ও হাতি দুয়েরই মঙ্গল। এমনিতেই সারা পৃথিবী জুড়েই হাতির সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে এশীয় হাতির অবস্থা আরও খারাপ। এর ওপর যদি কিছুদিন পরপর জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় তিনটি হাতির মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে হাতির জায়গা হবে শুধুমাত্র চিড়িয়াখানা অথবা জাদুঘরেই।
হাতি কেন বারবার ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সে ব্যাপারে সুব্রত একটা আকর্ষণীয় তথ্য দিলো। তা হল, হাতির পায়ে একটা বিশেষ অনুভূতি শক্তি আছে। তার সাহায্যে তারা এক কিলোমিটার দূর থেকে আসা কম্পনও বুঝতে পারে। সে ভাবে যে আসছে সে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে ঠিক তার উল্টো। সুব্রত-র কথা শুনে আমার মনে হল, হাতির বিশালত্ব ও শক্তি তাকে এই অনুভব দিয়েছে। কেউ যে তাকে পিষ্ট করে দিয়ে চলে যাবে সেই বোধটাই তার নেই। ফলে ট্রেনের শব্দ শুনেও সভ্যতার নিয়ম না জানা হাতি দাঁড়িয়ে থাকে। সপ্তরথী পরিবৃত অভিমন্যুর মতই লুটিয়ে পরে এবং খবর হয়। অভিমন্যুর মতই সে সভ্যতায় ঢোকার নিয়ম শিখেছে, বেরোনোর নিয়ম শেখেনি।
Now retrieving the price.
(as of রবিবার,১৭/১১/২০২৪ ১৬:৩৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹399.00 (as of রবিবার,১৭/১১/২০২৪ ১৬:৩৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹499.00 (as of রবিবার,১৭/১১/২০২৪ ১৬:৩৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹485.00 (as of রবিবার,১৭/১১/২০২৪ ১৬:৩৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹405.42 (as of রবিবার,১৭/১১/২০২৪ ১৬:৩৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…
‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…
আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…
পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…