ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাদেশে স্কুল পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মূখে সড়ক দুর্ঘটনারোধে আইন পরিবর্তন করেছে সেদেশের সরকার। সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত নতুন আইন অনুমোদন করে শেখ হাসিনা সরকার। নতুন আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে যা পুরাতন আইনে ছিলো ৩ বছর।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে যাত্রীবাহী একটি বাস পেছন থেকে আসা অন্য বাসের ধক্কায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল পড়ুয়াদের উপর উঠে গেলে ঘটনাস্থলেই ২ শিক্ষর্থী নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। মূলত এঘটনার পর থেকেই ঢাকা শহরে আন্দোলন শুরু করে স্কুল পড়ুয়ারা। স্কুল শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে পুলিশ কর্তৃক লাঠিচার্জ ও কাঁদুনি গ্যাস নিক্ষেপের পর আন্দোলন আরো তীব্র হতে থাকে। একইসময় সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর করা বিতর্কিত মন্তব্যে শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠে।
টানা তিনদিন আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২০ লক্ষ করে টাকা ও সংশ্লিষ্ট কলেজকে ৫ টি সরকারি বাস প্রদান করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ফিরিয়ে দিয়ে ঢাকা শহরের ট্রাফিক কন্ট্রোল নিজেদের দখলে নিয়ে রাস্তায় বিভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স চেক করা শুরু করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর,বিভিন্ন মন্ত্রণালয়,পুলিশ বিচারপতি সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের লাইসেন্সহীন গাড়ি আটক করে চাবি জব্দ করে স্কুল পড়ুয়ারা। যার প্রতিবাদে সারা দেশে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিক কর্মচারীরা।
শনিবার শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিতে করা বিক্ষোভে দুষ্কৃতিকারী ও পুলিশের যৌথ হামলায় আন্দোলন আরো জোরদার হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের মিছেলে হামলা করে। এদিন বিকেলে ঢাকায় সরকার দলের এক অফিসে আটকে রেখে ছাত্রীদের শারীরিক নির্যাতন ও হত্যা করে হয়েছে বলে খরব ছড়িয়ে পড়ে সোসাল মিডিয়ার, যার সূত্র ধরে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাতেই ইন্টারনেট সেবা ধীর গতি করা হয় এবং মোবাইল ফোনে সরকার থেকে এ খবরের কোন সত্যতা নেই বলে জানানো হয়। রাতেই এক অভিনেত্রী ও আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার ড. শহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়।
শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে পরদিন রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসলে তাদের উপরও হামলা করা হয়। এদিন বার্তা সংস্থা এপির একট ফটোগ্রাফার সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের উপর হামলা করা হয়।
সোমবার মন্ত্রীসভায় নতুন সড়ক আইন অনুমোদন হওয়ার সময়ই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়,এসময় পুলিশের সাথে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাও হামলায় অংশ নেয় বলে ছাত্র ছাত্রীদের অভিযোগ। পরে রাতেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ও বাকি ২/৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গল ও বুধবার বন্ধ ঘোষণা করে।
এদিকে ট্রাফিক আইন কার্যকর করতে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষার্থীরা ঘরে না ফিরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধৈর্য্যের বাধ ভাঙলে কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন।
এবার “বাংলা এক্সপ্রেস” আপনার মোবাইলে, ডাউনলোড করুন বাংলা এক্সপ্রেস ফ্রি মোবাইল অ্যাপ