সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে পুরস্কৃত কথাসাহিত্যিক আফসার আমেদ চলে গেলেন

সাহিত্যের সেরা সম্মান ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পেয়েছিলেন বাংলা-সাহিত্যোর বিশিষ্ট লেখক ও কথাসাহিত্যিক আফসার আমেদ। তাঁর উপন্যাস ‘সেই নিখোঁজ মানুষটা’-র জন্য তিনি ২০১৬-র সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। বিশ্বের সাহিত্যের পাঠক সমাজের সংগে আমিও তাঁর এই সম্মানপ্রাপ্তিতে গর্বিত ও আনন্দিত হয়েছিলাম।

ইতিপূর্বে এই লেখক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া ‘বঙ্কিম পুরস্কার’ লাভ করেছেন ২০১০ সালে। এই পুরস্কার পান তিনি ‘হিরে ও ভিখারিনি সুন্দরী রমণী কিসসা’ নামক উপন্যাসের জন্য। এই উপন্যাসটি ২০০৬ সালে ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার উৎসব সংখ্যায় ‘কথা-রূপকথা’ নামে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে উপন্যাসটি দে’জ পাবলিশার্স থেকে নাম বদল করে ‘হিরে ভিখারিনি সুন্দরী রমণী কিসসা’ নামে প্রকাশিত হয়।

আফসার আমেদ-এর পৈত্রিক বাড়ি হাওড়ার বাগনানে। স্কুল-জীবনে পড়াকালীন লেখা-লেখি শুরু করেন। বন্ধুদের সঙ্গে বের করেন সাহিত্য-পত্রিকা ‘ময়দান’। প্রথম-জীবনে কবিতা দিয়ে শুরু করলেও অচিরেই তিনি গদ্য লিখতে শুরু করেন। প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি তিনি ছোটো পত্রিকায় দু-হাতে লিখতে থাকেন। তাঁর লেখা গল্পগুলো বেরোতে থাকে ‘পরিচয়’, ‘কালান্তর’, ‘বারোমাস’, ‘সারস্বত’ ইত্যাদি পত্র-পত্রিকাগুলিতে। ‘বাঙালি মুসলমানের বিয়ের গান’ তাঁর এক উল্লেখযোগ্য কাজ। প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে ‘পরিচয়’ পত্রিকায়। এই কাজই তাঁকে বাংলার বিদ্বজ্জন সমাজের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি ঘটায়। ১৯৮০ সালে প্রথম উপন্যাস ‘ঘরগেরস্তি’ প্রকাশিত হয় ‘শারদীয়া কালান্তর’-এ। অল্প সময়ের জন্য ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকায় চাকরি করেন। ২০০০ সালে উর্দু-কবি কলিম হাজিখের সঙ্গে যৌথভাবে অনুবাদের জন্য সাহিত্য আকাদেমি অনুবাদ পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্ববরেণ্য ফিল্ম-পরিচালক মৃণাল সেন তাঁর উপন্যাস ‘ধানজ্যোৎস্না’ অবলম্বনে ‘আমার ভুবন’ নামে বিখ্যাত সিনেমা তৈরি করেন।

আফসার আমেদ মুসলমান সমাজের অন্তরকে সাহিত্য সেবায় তুলে ধরেন এবং বিশেষ আলোকপাতের মাধ্যমে উভয় সমাজকে চেনান। মুসলমান সমাজের হরেক কিসসা লিখেই সাহিত্য আকাশে ও পুরস্কার আকাশে বাজিমাৎ করলেও পাঠক মনে সিরিয়াস দাগ রেখে যাবেন কি না তা নিয়ে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়। তবে তিনি চলে গেলেম দাগ রেখে। কয়েকমাস তিনি অসুস্থ ছিলেন। সাহিত্য সম্মাননা পাওয়ার পর বাংলার একটি টিভিতে টক শো অংশ নিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে “তাহাদের কথা’ নামক ওই অনুষ্ঠানে শেষ দেখা হয়েছিল।

মুসলমান সমাজকে হেয় করে কেউ কেউ আবুল বাশার মতো আনন্দ লাভ করেন। এখন নবেল পাওয়ার আশায় কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন? কবজির জোরে সৈয়দ মুজতবা আলী, হাসান আজিজুল হক ও সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ যে উচ্চতর সাহিত্য রচনা করেছেন তা এখনকার লেখকদের হতে উঠে আসছে কই? এই খরা কেটে বাংলায় আবার আসুক নবেল পুরস্কার।
চলে গেলেন লেখক আফসার আমেদ। বাংলা সাহিত্যে তিনি বহু গপ্ল, উপন্যাস রেখে গেলেন যেমন আর রেখে গেলেন বহু পাঠকবৃন্দ।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

5 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

5 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

5 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

5 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

5 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

5 days ago