চারিদিকে মানুষের মনুষ্যত্ব যখন বিপন্ন, যে যার নিজের চিন্তায় ব্যস্ত, নিজের গাড়ি,নিজের বাড়ি, নিজের জমি, বিলাসিতা এবং আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাত্রায় মানুষ যখন বিশ্বাসী ও যে সময়ে ডাক্তারদের প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে , সেই সময়ে এমন ত্যাগও মানুষ করতে পারে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হ্যাঁ আমি আমার নিজের স্বামী, উত্তর ২৪ পরগনার, সন্দেশখালী থানার অন্তর্গত ডাঃ ফারুক হোসেন গাজীর কথা বলছি, তিনি যখন সবে মাত্র অত্যন্ত দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে ডাক্তারি পাশ করেছেন ২০১২ সালে, তখন বাস করেন মাটির ঘরে, বাবা পেশায় দিনমজুর। সাধারণত দেখা যায় আয় ইনকাম শুরু হলে সবাই গাড়ি, বাড়ি, জমি কেনা ও বিলাসিতার জীবন শুরু করে কিন্তু না তিনি গেলেন স্রোতের বিপরীতে, তিনি জানতেন যে শুধু নিজে শিক্ষিত হলে, বা নিজের জীবন নিয়ে ভাবলে তার চার পাশের সামাজিক পরিবর্তন আসবে না, কারণ তিনি যেখানে জন্ম নিয়েছেন সেখানে না আছে শিক্ষার আলো, না আছে স্বাস্থ্য পরিষেবা, না আছে কর্ম সংস্থান, তাই ভাবলেন আগে এদের পাশে দাঁড়াতে হবে, টেনে তুলতে হবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, এপথ মসৃণ নয় জেনেও, সেই যুদ্ধে আমি যে সামিল হবো ঠিক তার মত করে কখনো ভাবিনি, কিন্ত ধীরে ধীরে হয়ে উঠলাম তার এই দুর্গম চলার পথের দোসর অর্থাৎ সহধর্মিনী থেকে সহযোদ্ধা হয়ে উঠলাম।
মানুষের জন্য কিছু করতে হবে এমন ভাবনা ছোট্ট বেলা থেকেই তার ছিল, তাতে আরো ইন্ধন যোগায় আর এক মহান মানুষ, তিনি আর কেউ নন বাংলার শিক্ষা আন্দোলনের নব রূপকার আল আমিন মিশনের প্রাণ পুরুষ নুরুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠান আল আমিন মিশন, এই মানুষটি ও তার মিশন তাকে মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, মানুষের জন্য ভাবতে সাহায্য করেছে এর পাশাপাশি তাকে উদ্বুদ্ধ করে রামকৃষ্ণ মিশন এর সেবার ধর্মও । আল আমিন মিশন এর অর্থ সাহায্য নিয়েই তিনি পড়াশোনা করেছেন বিনা খরচে। তাই স্যার এর প্রতি, আল আমিন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ও তার এই সমাজ সেবা বলতে পারেন। তিনি তাই বলেনও।
ডাঃ ফারুক হোসেন গাজী ছাত্র অবস্থা থেকেই সমাজ সেবায় নিয়োজিত,২০০৮ সালে গ্রামের কিছু যুবক কে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সমাজ সেবা প্রতিষ্ঠান, তার মাধ্যমে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন একটি মিশন স্কুল, সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসাবে ২০১৪ পর্যন্ত কাজ করেন, কিন্তু সাংগঠনিক বোঝা পড়া ঠিক না থাকায় ও তার স্বপ্নগুলো পাখা মেলতে না পারায় তিনি ২০১৩ সালে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পদত্যাগ করেন। এই ৬ বছরে তিনি কত দুঃখ, কষ্ট করে, পড়াশুনার ক্ষতি করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বহু চেষ্টা করেও তিনি স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপ না দিতে পেরে, কত বার যে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছেন তা আমার চেয়ে বোধ করি ভালো আর কেউ জানে না।
এক সময় মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে টাই হারিয়ে যেতে বসেছিল, স্বপ্নের সলিল সমাধি হতে বসেছিল, কিন্তু না উনি কিছুতেই হার মানার পাত্র নন, কারণ উনি যে অন্ধকার থেকে আলোর পথে অসহায় কে টেনে তোলার দীক্ষা নিয়েছেন, আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন, পড়াশুনা চালিয়ে ২০১২ সালে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এম বি বি এস পাস করে,২০১৩ সালে হাউস ফিজিসিয়ান হিসাবে কোলকাতা, ফুল বাগান শিশু হাসপাতালে চাকরি করতে থাকেন, কিন্তু সমাজের জন্য বৃহৎ কিছু করতে তিনি পারছিলেন না তার আগের প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক সমস্যার কারণে, যা তাকে কুরে কুরে মারছিল, তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন, ও নিজের প্রথম সংঘটনের ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০১৪ সালে আবার নতুন যাত্রা শুরু করলেন। কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠান, নতুন স্কুল অফিস খুলতে দরকার বহু টাকা ও কিছু নতুন সাথী, পাশে পেলেন শিক্ষিত কিছু যুবক ও যুবতী, কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে, তারও তখন অভাব অনটন, সবে মাত্র কিছু টাকা মাইনে পান, যাইহোক নিজের পাকাঘর তৈরী করার জন্য যে কটা টাকা গুছিয়ে ছিলেন সেই সম্বল টুকু দিয়ে দিলেন প্রতিষ্ঠান শুরু করতে, প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা, যা সেই সময় তার কাছে অনেক কষ্টকর ও মূল্যবান ছিল, সমাজের জন্য এই ত্যাগ কজনই বা করতে পারে ওই বয়সে, সূচনা হল “নব দিগন্ত ” যে নাম তিনি নিজেই দিলেন। নব দিগন্ত মিশনে আজও কোনো ভর্তি ফি নেওয়া হয় না, কারণ তিনি মনে করেন, টাকা চাইলে এরা শিশু কে মিশন স্কুল এ পাঠাবে না, কারণ এই স্কুল এ যারা পড়ে তারা এতিম, অনাথ, কেউ প্রতিবন্ধী শিশু, তো কেউ আবার আদিবাসী শিশু। পাশাপাশি তিনি যেহেতু ডাক্তার তাই গ্রামের মানুষের দুঃখ মেটাতে মিশন স্কুল এর পাশাপাশি হাসপাতালের ন্যায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে শুরু করেন, গ্রামের ছেলে মেয়ে দের নিয়ে হেলথ টিম গড়ে তোলেন, যার দ্বারা কত মানুষ যে আজ উপকৃত সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বই, খাতা, জামাকাপড়, টিউশন ফি সবই ফ্রি, ওষুধ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা তাও ফ্রি, আসে পাশের দু দশটা গ্রাম আজ উপকৃত। ডাঃ ফারুক হোসেন বীরভূম জেলার দুবরাজপুর এ সরকারি মেডিকেল অফিসার হিসাবে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন তত দিনে।
কিন্তু তিনি ভাবলেন তিনি ডাক্তার, তার সব বন্ধু ও বান্ধবীরাও ডাক্তার, নার্স, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ অফিসার, সরকারি অফিসার ও বিভিন্ন মহলে সবাই প্রতিষ্ঠিত, তাদের যদি কাজে লাগলো যায়, এর সুফল সারা পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র অসহায় মানুষ পাবে! এই চিন্তা করে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি সবাই কে ডাকলেন কোলকাতার নিউটাউন এ, তার এক ডাকে প্রায় ৫০ জন প্রতিষ্ঠিত বন্ধু বান্ধব হাজির হলেন, তিনি বক্তৃতা রাখলেন তারা মুগ্ধ হয়ে শুনলেন। সবাই তার ডাকে সাড়া দিয়ে নব দিগন্ত এ যোগদান করলেন ও সেই বছর থেকেই সারা পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় নব দিগন্ত এর কাজ শুরু করলেন, শুরু হল বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া ও কর্ম সংস্থান এর ব্যবস্থা করা , শুরু হল হেলথ ক্যাম্প, বস্ত্র বিতরণ, স্কলারশিপ বিতরণ, ব্যাগ বিতরণ, কম্বল বিতরণ, বন্যা ত্রাণ বিতরণ, অসহায় এর পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি। এই কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ২৩ জেলা কে তারা ৫ টি জোন এ বিভক্ত করে কাজ শুরু করলেন (যথাক্রমে:সুন্দর বন, জঙ্গল মহল, উত্তর বঙ্গ, কোলকাতা ও বর্ধমান জোন)
এরপর ঠিক হলো মিশন, ভিশন, গঠিত হল পরিচালন সমিতি। পরিচালন সমিতির বেশির ভাগ সদস্যরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তারপর সদস্য হিসাবে যারা এগিয়ে এলো তার বেশির ভাগই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ অফিসার, সরকারি আধিকারিক ও চাকুরিজিবি। তারা নিজেরা দিলেন শ্রম,অর্থ, সংগ্রহ করলেন দান, যাকাত, কেউ বা হয়ে উঠলেন মাসিক দাতা। নব দিগন্ত এর লক্ষ্য একটি জাতীয় স্তরের এনজিও হয়ে ওঠা, যত দ্রুত সম্ভব জাতির সেবায় নিয়োজিত হওয়া। দেশের সেবায় নিয়োজিত হয়ে, জাতীয় স্তরে কাজ করে দারিদ্র মোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ফেরানো। নব দিগন্ত এর পাশে দাঁড়িয়েছে ছোটো বড় সমস্ত পত্র পত্রিকা সহ নিউজ চ্যানেল গুলোও। যেমন আনন্দ বাজার পত্রিকা, দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মত নিউজ পেপার গুলো। জি বাংলার মাধ্যমে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এর ‘দাদাগিরি’ ও রচনা বন্দোপাধ্যায় এর ‘দিদি নং 1’ এর মত জনপ্রিয় টিভি শো তে নব দিগন্ত এর কাজ কর্ম তুলে ধরা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি, আসা করা যায় খুব শীঘ্রই মিলবে। যদিও বহু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আজ নব দিগন্ত এর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অফিস,মিশন, হাসপাতাল গড়ে তোলা ও এত বহুবিধ কর্মকান্ড প্রতি নিয়ত চালিয়ে যাওয়ার জন্য নব দিগন্ত এর প্রয়োজন বহু অর্থের ।আশাকরি সবাই পাশে দাঁড়াবে, যারা এখনো গুরুত্ব বোঝেননি ভবিষ্যতে
বুঝবেন।
কোনো জাতি বা ধর্মের ভেদাভেদ নয়, মানব সেবাই মূলমন্ত্র “নব দিগন্ত” এর ।
এভাবেই সমাজ পরিবর্তনের ইচ্ছা নিয়ে জাতির সেবায় নিয়োজিত নব দিগন্ত টিম ও ডাঃ ফারুক হোসেন গাজী ।
সবাই যাতে নব দিগন্ত সম্বন্ধে জানতে পারে, তাই আমার এই লেখা বা প্রচেষ্টা মাত্র, কাউকে বড় করে দেখানো, ঢাক পেটানো বা অতিরঞ্জিত করে কিছু বলা আমার স্বভাব এর পরিপন্থী। একটা লেখনীর মাধ্যমে কিছু মানুষের ধারণা যদি বদলায় তাহলেই এ লেখা সার্থক।
₹3,299.00 (as of সোমবার,১৪/০৪/২০২৫ ১৫:২৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹369.00 (as of সোমবার,১৪/০৪/২০২৫ ১৫:২৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹205.00 (as of সোমবার,১৪/০৪/২০২৫ ১৫:২৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹239.00 (as of সোমবার,১৪/০৪/২০২৫ ১৫:২৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
₹106.20 (as of সোমবার,১৪/০৪/২০২৫ ১৫:২৯ GMT +05:30 – More infoProduct prices and availability are accurate as of the date/time indicated and are subject to change. Any price and availability information displayed on [relevant Amazon Site(s), as applicable] at the time of purchase will apply to the purchase of this product.)
Barcode স্টিকার তৈরি করার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ, তবে নির্ভর করে আপনি কিসের জন্য এটি বানাচ্ছেন—ব্যবসার…
কলকাতা, ১৪ এপ্রিল ২০২৫:নববর্ষের আগের দিনেই শহরবাসীকে বিশেষ উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণেশ্বরের পর…
মুর্শিদাবাদ, ১৫ এপ্রিল ২০২৫:এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। ভাত বসিয়েই কেউ দৌড়েছেন প্রাণ বাঁচাতে। রাতারাতি…
নন্দীগ্রাম, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: বাংলা নববর্ষের সকালেই ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আবহে পথে নামলেন রাজ্যের বিরোধী…
কলকাতা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: রাজ্যের একের পর এক অশান্ত ঘটনা— মুর্শিদাবাদ, ভাঙড় — সব মিলিয়ে…
ভাঙড়: মুর্শিদাবাদে ঘটনার আঁচ না মিটতেই এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। এলাকায়…