আমার ভাবনা হয়তো ভুল ও হতে পারে। এর পরেও কয়েকটি প্রশ্ন—
১। নাগরিক তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তারা কি আসলেই ভারতীয় নয়?
২। যদি ভারতীয় হয়ে থাকে তাহলে এই বিরাট সংখ্যক মানুষের নাম বাদ যাওয়া টা নিশ্চয় ভূল করে হয়নি বরং রহস্য জনক পরিকল্পনা মাফিক ইচ্ছা কৃত ভাবেই বাদ দেওয়া হয়নি কি?
৩। যদি তারা ভারতীয় নাগরিক না হয়ে অনুপ্রবেশকারী হয়ে থাকে, তাহলে দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর দায়িত্ব ও কর্তব্যের গাফিলতি হচ্ছে না কি?
৪। তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ব্যক্তিরা যে সমস্ত রেশন কার্ড, আই ডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড জমা দিয়েছিলেন সেগুলো নিশ্চয় অবৈধ প্রমাণ হয়েছে বলেই তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে। ৪০ লক্ষ ভুয়া রেশন কার্ড, আই ডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড তৈরী হলো গোয়েন্দা দফতর সেই জালিয়াতি ধরতে পারল না কেন? তাহলে গোয়েন্দা দফতরের পিছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করার দরকার আছে কি?
পুরো প্রসঙ্গটি একটু অন্যরকম করে ভাবা যায়- আমার ধারণা কেন্দ্র সরকার পরিকল্পনা মাফিক ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নাম বাদ দিয়েছে। আবার গুটি সাজিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাদের নাম তালিকা ভুক্ত করে নেবে। তাহলে কেন্দ্র সরকারের এই নাটকীয় কর্মকাণ্ডের আসল রহস্য কি?
হিন্দুত্ববাদের যে তাস খেলে এবং উন্নয়নের যে ফানুস উড়িয়ে ২০১৪ তে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল তা যে পুরোপুরি ফেক দেশের জনগন তা বুঝতে পেরেছেন। ২০১৯ এ বিজেপির কাছে ভোট চাওয়ার কোনো ইসু নেই। যেন তেন করে হিন্দু ভোট এক জায়গায় করতে না পারলে বিজেপির যে ভরা ডুবি হবে তা সু নিশ্চিত। আসামের NRC র এই কর্মকে ২০১৯ এর তুরুপের তাস বানানো হবে। কেন্দ্র সরকারের যাবতীয় ব্যর্থতা ধামাচাপা দিয়ে সারা দেশবাসীর দৃষ্টি আসামের দিকে টেনে রাখা হয়েছে। আসামকে দু রকম ভাবে কাজে লাগাতে পারে বিজেপি সরকার।
এক। নাগরিকদের তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে তালিকাভুক্ত করে দিয়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে বোঝাবে বিজেপি ই আপনাদের একমাত্র ত্রাতা। বিজেপি ছাড়া এ দেশের হিন্দু মুসলিমদের রক্ষা করার কেউ নেই। বিজেপি এটাকে হাতিয়ার করে ভোট বৈতরণী পার করার চেষ্টা করবে।
দুই। দেশের নাগরিকদের দু ভাগে ভাগ করে দেয়া। আসল নাগরিক ও অনুপ্রবেশকারী নাগরিক। এই দুই নাগরিকদের মধ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দিয়ে দলিত ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা। দলিত-মুসলিম একত্রিত হলে বিজেপির যে মহা বিপদ। তাই দাঙ্গা লাগাতে না পারলে বিজেপি কোনো মতেই হিন্দু ভোট ব্যাংক জমা করতে পারবে না। দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দু মনে মুসলিম ত্রাস ঢুকিয়ে সব হিন্দুদের এক প্লাটফরমে আন্ডার জন্য সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
যাই হোক জগত সংসারে মানব সম্পদই সব চেয়ে বড় সম্পদ। এই সম্পদ কে কাজে লাগাতে পারলে জগতের অনেক কল্যাণ সাধন করা যাবে। তাই আসাম থেকে মানুষদের তাড়িয়ে না দিয়ে তাদের দেশের মধ্যে রেখে দিয়ে দেশের কল্যাণে ব্যবহার করা হোক। তাতে আসামের উন্নতি ছাড়া অবনতি হবেনা। সর্বোপরি বিজেপি সরকার আসামের মানুষের সাথে যদি মানুষের মতো ব্যবহার না করে পশুর মতো ব্যবহার করে, এবং বাদ দেওয়া ৪০ লক্ষ মানুষকে পূর্ণ নাগরিকত্বের মর্যাদা না দেয়, তাহলে পাগলা কুকুরের ব্রেন ওয়াস করার মতো ব্যবস্থা আসামিদের কাছে না থাকলেও বাঙালিদের কাছে মজুদ রয়েছে। এটা বিজেপির মনে রাখা উচিত।
বিজেপি বারংবার মসজিদ-মন্দির, তাজমহল, তালাক, লাভজেহাদ, গোমাংস ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন ইসু তৈরী করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকবার চেষ্টা করবে। আমাদের গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে বিজেপি যেন কোনো ভাবেই তাদের এই চক্রান্ত সফল করতে না পারে। পাশাপাশি আর এস এস এর ধ্বংসাত্মক আদর্শ ও তাদের চরম ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে এবং জোর কদমে দেশের জনগণকে সচেতন করতে হবে।
লেখক_ আব্দুল মাতিন
এবার “বাংলা এক্সপ্রেস” আপনার মোবাইলে, ডাউনলোড করুন বাংলা এক্সপ্রেস ফ্রি মোবাইল অ্যাপ