ঘুরে আসুন- বালিয়াটি প্রাসাদে এক দিন

উনিশ শতকের শেষের দিকে ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত মানিকগঞ্জ বাজার প্রায় দুই বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। শুকনো মৌসুম ছাড়া চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। আর শুকনো মৌসুমে গাধা, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি ছিল পরিবহনব্যবস্থা। এখানে সর্ষের তেল ও তামাকের বড় ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। এগুলো আসত রংপুর ও কোচবিহার থেকে। মানিকগঞ্জ থেকে সেগুলোর চালান যেত নারায়ণগঞ্জ ও কলকাতায়।
মানিকগঞ্জ বর্তমানে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এই জেলার সাটুরিয়া থানায় অবস্থিত বালিয়াটি জমিদারবাড়িটিই বর্তমানে বালিয়াটি জাদুঘর।

বালিয়াটি জমিদারবাড়ি প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর স্থাপিত। জমিদারবাড়ির পুরো চত্বরটি উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এতে রয়েছে সাতটি প্রাসাদসম ইমারত, কক্ষ রয়েছে মোট ২০০টি। ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বালিয়াটি প্রাসাদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
আঠারো শতকের প্রথম ভাগ থেকে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বালিয়াটির জমিদাররা ওই এলাকা শাসন করেন। এ সময়ে তাঁরা নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি করেন। বালিয়াটি জমিদারবাড়ি সেগুলোর অন্যতম। আঠারো শতকের মধ্যভাগে জমিদার গোবিন্দরাম শাহ বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন। আর ক্রমান্বয়ে তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখানে নির্মাণ করেন আরো বেশ কিছু স্থাপনা।

এখানে রয়েছে পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, উত্তর বাড়ি, মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি নামের বড় আকারের পাঁচটি ভবন। জমিদারবাড়ির এই বিভিন্ন অংশ বালিয়াটি জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারীরাই তৈরি করেন।

মূল প্রাসাদসংলগ্ন একই রকম পাঁচটি অংশ আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। পূর্ব দিকের একটি অংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও বাকি চারটি টিকে আছে এখনো। মূল ভবনগুলোর সামনের দেয়ালজুড়ে নানা রকম কারুকাজ আর মূর্তি চোখে পড়ে। বালিয়াটি জমিদারবাড়ির ঘিরে তৈরি করা প্রাচীন আমলের সেই প্রাচীর এখনো টিকে আছে। এ চার দেয়ালের মাঝে এখন রয়েছে চারটি সুদৃশ্য ভবন।

ভবনগুলোর সামনে প্রাচীরের দেয়ালে রয়েছে চারটি প্রবেশ পথ। চারটি প্রবেশ পথের চূড়ায় রয়েছে পাথরের তৈরি চারটি সিংহমূর্তি। বালিয়াটি জমিদারবাড়ি মূলত পাঁচটি মহলে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে টিকে আছে প্রায় একই রকম চারটি মহল। চারটি মহলের মাঝের দুটি দোতলা আর দুই পাশের দুটি তিনতলা ভবন। ভবনগুলোর পেছনের দিকে আছে বড় একটি পুকুর। শানবাঁধানো ছয়টি ঘাট আছে পুকুরের চারপাশে।
বর্তমানে বালিয়াটি জমিদারবাড়ির অবস্থা খুবই করুণ। সংস্কারের অভাবে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি।

কীভাবে যাবেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে জনসেবা বা এসবি লিংক গেটলক পরিবহনের বাসে করে মাত্র দুই ঘণ্টায় সাটুরিয়া পৌঁছে যাওয়া যায়। বাসভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭০ টাকা। সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন বালিয়াটি জাদুঘর।
টিকেট বালিয়াটি জাদুঘরের জনপ্রতি টিকেটের দাম দেশি দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ১০০ টাকা। রোববার জাদুঘর পূর্ণদিবস বন্ধ থাকে এবং সোমবার বন্ধ থাকে অর্ধদিবস। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

4 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

4 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

4 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

4 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

4 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

4 days ago