অসম নাগরিকপঞ্জি নিয়ে শামিম আহমেদের পোস্ট ভাবিয়ে তুলছে

মিশ্র সংস্কৃতিই আমাদের অর্জিত বৈভব তা আমরা ভুলে গেলে চলবে না। দেশের নাগরিকদের বিদেশী বানিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে কোন উদ্দেশ্যে বুঝতে হবে। এভাবে বাঙালি মুসলমানদের খেদিয়ে দিয়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে ওরা পারবে না। ভারত আমাদের মাতৃভূমী। ওরা যে ভাবে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে ভারত গভীর সঙ্কটের মধ্যে আছে। চরম বিদ্বেষ ছড়ানোর কৌশল দেখে আমরা গভীর ভাবে চিন্তিত। আর লজ্জিত হই এই ভেবে আমার মহান ভারতকে আর কত নিচেয় নামাবে ওরা। প্রশ্ন ওরা কারা? মানুষ না মানুষের মতো অন্য কিছু?

“৪০, ০৭,৭০৭ জন বাঙালি অসমের প্রাথমিক খসড়া পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন। শোনা যাচ্ছে, এর মধ্যে ৩৭ লক্ষ বাঙালি মুসলমান।
টিভি চ্যানেলে ছিল একটা অনুষ্ঠান। জনৈক বিজেপি নেতা (অত্যন্ত ক্ষুদ্র), কী তার (তাঁর নয়, সরি) দাপট! সে প্রথমে বলে, হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালির বিষয় এটা নয়। শেষে বলে, আমি এখানে কথা দিয়ে গেলাম, কোনও হিন্দু বাঙালিকে তাড়ানো হবে না। বাকিটা বোধগম্য। সে এমন কথাও বললো, তার পূর্বপুরুষকে মুসলমানরা নিগ্রহ করেছিল, তাই সে চায় না, এই দেশে মুসলমান থাকুক।
বিরতিতে সে বলে, আপনারা তো একটা দেশ নিয়েছেন, আবার আর একটা?
এই ভাবে চলছিল…
আমি, হ্যাঁ ‘আমি’ শব্দ পছন্দ করি না, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি।
আমি দাড়িহীন মুসলমান। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছি। মহাভারত নিয়ে গবেষণা করেছি। রামকৃষ্ণ মিশনে হিন্দু দর্শন পড়াই। আমাকে ওই সাম্প্রদায়িক বিজেপি ক্ষুদ্র নেতার কী রোষের মুখে পড়তে হল, অন স্ক্রিন এবং অফ স্ক্রিন ভাবতে পারবেন না। লোকটা (সচেতনভাবে ‘ভদ্রলোক’ লিখলাম না) মিথ্যে তথ্য দিয়ে গেল সমানে। কী ঘৃণা ওর! ও বিজেপি!
ভাবি এখন, দাড়িটুপি মুসলমানরা এই দেশে তবে কতটা নিরাপদ!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুর্ণিশ, তিনি ওই অনিকতেদের পাশে থাকবেন বলেছেন। তিনি তাঁর মানবিক মুখ দেখালেন। প্রণাম নেবেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী!” লিখেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক শামিম আহমেদ।

“এই ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার চেয়ে জর্ডান, আমেরিকা, ব্রিটেন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রীয় পলিসি কিছুটা ভালো বলেই সেখানে শরণার্থীদের জায়গা হয়, দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেয়। সেখানে লক্ষ লক্ষ ভিনদেশি মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ভারতের হাজার হাজার মানুষ ওইসব দেশের বাসিন্দা হয়েছেন। যদি অসমের মতো সেখানে এনআরসি করা হয় তবে সব ভারতীয়কে এই দেশে ফিরতে হবে। অবশ্য, এমন জাতপাত কেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক ও নোংরা রাজনীতি সেখানে হয়না। যে যাই করুক, দেশের স্বার্থে সবাই এক।
এটা এমন একটি দেশ যেখানে এক সাথে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন হলো। দেশভাগ হয়েছে। আবার সাধারণ মানুষকে বারবার উদ্বাস্তু হতেও হয়েছে। অসমের এই লক্ষ লক্ষ মানুষ বিদেশি? তাহলে কোন দেশের? দশকের পর দশক বাস করেও তারা বিদেশি? যে শিশুটি এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করলো, বড়ো হলো সেও বিদেশি? এইসব আইন নাকি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে গর্ব করেন? কেন করেন? আপনার ভারতে যে মানুষটি খ্যাতি পেলোনা বিদেশের মাটিতে সে যখন হিরো হয়ে যাচ্ছে তখন আপনারা ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ বলে গর্ববোধ করছেন। এতে আমাদের লাভ কী? ব্যর্থতা ঢাকতে এই সব কথা? কে গর্জে উঠবে সেই আশায় বসে না থেকে চলুন পথে নামি। আমরা এর ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। কেন? আমরা কি পারিনা প্রতিবাদ করতে? কেউ পথে নামুক আর না নামুক, আমাদের কবিতা, গান গল্প আর স্লোগান দিয়ে ভারতকে মুক্ত করতে হবে।” বলছিলেন, সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডল।

“অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য-এর নতুন করে পরিচয় দেওয়ার কিছুই নেই। আসামে বাঙালির এই চরম সংকটকালে তিনি যেভাবে দক্ষ সেনাপতির মতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দুনিয়ার সমগ্র বাঙালি সমাজ তার জন্য গর্বিত। ২৯, ৩০, ৩১ জুলাই ২০১৮ কলকাতার পুবের কলম পত্রিকায় তিন কিস্তির তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। আজ প্রকাশিত হয়েছে শেষ কিস্তি। আসাম থেকে বাঙালি বিতাড়নে নীলনকশা ও সংশ্লিষ্ট বহু বিষয় এই সাক্ষাৎকারে আলোচিত। আসুন, এই আলোচনাটি অনুধাবন করি।” লিখেছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক একরামূল হক শেখ।

“বাংলার বাঙালিরা সাবধান।
বাস্তবিক একজন নির্ভেজাল বাঙালি হিসাবে আমি সমগ্র বাঙালি যার যে দেশে বাড়ি হোক কিংবা যে প্রান্তে থাকুক আমরা কিন্ত বাঙালি। আমাদের মূল ভূখন্ডটা বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে বাংলা হতে চলেছে।

দেশ ভাগের দায় তো রাজনীতি ও গদির স্বার্থে, এখানে সাধারণ বাঙালি কিম্বা ভারতীয়র কিছু করার ছিলনা।

বাঙালিরা দুই বাংলায় ছাড়াও অসম ও ত্রিপুরা সহ জীবন জীবিকার তাগিদে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আছেন।

দেশ ভাগের যন্ত্রনা যেমন হিন্দু বাঙালির আছে তেমনি মুসলিম বাঙালিরও আছে।

বাংলাদেশের হিন্দুরা যেমন অনেকেই সম্পদ, বাস্তু ভিটা হারিয়ে এবং ত্যাগ করে ভারতে এসেছেন তেমনি সংখ্যায় কম হলেও অজস্র মুসলিম বাঙালিও বাংলা ভাগের একই রকম লাঞ্ছনার শিকার।

আপনারা অনেকেই জানেন এবং যারা জানেননা কলকাতা চত্বরে নাকতলা, বাঁশদ্রোনী, টালিগঞ্জ, সেলিমপুর, কসবা, যাদবপুর সহ এরকম অজস্র জায়গার মুসলমানরা প্রবল অত্যাচার ও জীবন হানির আশংকায় ভিটে মাটি ত্যাগকরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে অনেক মুসলমান ঘর ভাড়া পান না।

মুসলিমদের এই জায়গাগুলি বেদখল হয়ে এখন কলোনি বা নতুবা ফ্লাট গড়ে উঠেছে, এই সব জায়গা গুলিতে বেশিরভাগই বাংলার মুসলমান বসবাস করতেন। দেশ ভাগ হওয়ার আগে।

নায়করাজ রাজ্জাক সাহেব নাকতলার মানুষ, উনিও ওনার সম্পদ ত্যাগ করে বাংলাদেশে সেটেল হয়েছেন। পারিবারিক সূত্রে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি ও জানি বলে ঘটনাটা জানি। রাজ্জাক সাহেবের মত এরকম অনেক ভুক্তভোগী মুসলমান আছেন যারা বাংলাদেশে চলে গেছেন। চলে যেতে তাঁদের বাদ্য করা হয়েছিল চরম অত্যাচার করে।

উল্লেখিত বিষয়টা উল্লেখ করলাম কারণ অনেক মানুষ মনে করেন দাঙ্গায় কেবল ওপার বাংলার হিন্দুদের ক্ষতি হয়েছে।
দাঙ্গায় এপার বাংলার মুসলিমদেরও সমূহ ক্ষতি হয়েছে।

বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গে যে হিন্দুত্বের জিগির তুলছে এবং এই বাংলার হিন্দুরা যদি এতে মেতে উঠে বিজেপির হাতকে শক্তিশালী করে, তাহলে মুসলমানদের থেকে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে ১৯৭০ সালের পর যেসব বাংলাদেশি ভারতে এসে বসবাস করছেন তারাই।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমন অজস্র হিন্দু পরিবারকে বেশ ঘনিষ্ট ভাবে চিনি ও জানি যারা নানান কারনে বাংলাদেশ থেকে ১৯৭০ এর পর পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। এরকম পরিবার গোটা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে বসবাস করছেন।
এদের অনেকেই সরকারি চাকরিও করেন।

৩০ বছর চাকরি করে অসমের মুসলমান যদি বিজেপি ও আরএসএস এর সৌজন্যে বিজেপির গাইড লাইন মেনে নাগরিকত্ব প্রমাণের অভাবে বাংলাদেশী হয়ে যান, এই বাংলার হিন্দু ভাইবোনদের একই পরিনাম হবে।

এক ঘোর অনিশ্চয়তা ও চরম অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে শান্ত ও সাধের বাংলা দাউ দাউ করে জ্বলবে আর এই আগুনের লেলিহান শিখায় আমি, আপনি, আমাদের প্রিয় প্রতিবেশী ও পরিজনরা পুড়ে মরবে, কারণ গাঁয়ে আগুন লাগলে পীর কিম্বা সন্ত-সাধুরাও পুড়বে, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

সুতরাং এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থাত এপার বাংলার হিন্দু মুসলিম সহ আর সব বাঙালি বিজেপি ও আরএসএস কে আমরা নির্বাচনে পরাজিত করতে না পারি তাহলে প্রত্যেক বাঙালির কপালে সমূহ দুর্দশা অপেক্ষা করছে।

ভাবো ও জাগো বাঙালি জাগো।” লিখেছেন, মির্জা আজাদ।

Satwajit Mondal

Share
Published by
Satwajit Mondal

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

3 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

3 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

3 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

3 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

3 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

3 days ago