উত্তর দিনাজপুর জেলা লোকসংস্কৃতি অন্যতর পীঠস্থান । যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির অঙ্গিনার হরেক রকমের লোকসংস্কৃতির উপদানের প্রাচুর্য ভরপুর।উত্তরবঙ্গের লোকশল্পের মধ্যে মুখোশ শিল্প একটি অন্যতম জনপ্রিয় শিল্প। কোথাও মুখোশ কোথাও মুখা, কোথাও মোথা নামে পরিচিত। উত্তরদিনাজপুর জেলার ধর্মপ্রান মানুষেরা কালী, দুর্গা, চন্ডী, মনসা ও পীর ঠাকুরের পুজা করে থাকে।এইসব পুজা কে কেন্দ্র করে রামের বনবাস রাবনবধ , চন্ডীমঙ্গল,জং হালুয়া-হালুয়ানি,সত্যপীর,ও বিষহরি গানের আয়োজন সারা বছর ধরে চলতে থাকে। এই সমস্ত পালাগুলির ববহুবছর ধরে বিভিন্ন দেবদদেবীর সাথে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখীর চরিত্র থাকে পালকে আকর্ষনীয় করবার কারনেই।
পালাগালের চরিত্র অনুযায়ী শিল্পীরা কাঠের খোদাই করা মুখোশ পরিধান করে বিভিন্ন পালার অংশগ্রহণ করে থাকে। এর ফলে গ্রামঞ্চলে অনুষ্টিত পালাগুলি আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে।আর সেই সমস্ত মুখোশ উত্তরবঙ্গ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার যার হাতের জাদুতে প্রথম থেকেই প্রানবন্ত ও জীবন্ত করে তুলতে পারে তিনি এই জেলার হেমতাবাদ ব্লকের কৃষ্ণবাটী গ্রামের বর্ষীয়ান মুখোশ শিল্পী শচীন্দ্রনাথ সরকার। এক সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মিউজিয়ামের ডিরেক্টর সবিতা রঞ্জন সরকার উত্তর দিনাজপুর জেলার মুখোশ তৈরী হয় তা জানতে পেরে শচীন্দ্রনাথ সরকার।এক সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মিউজিয়ামের ডিরেক্টর সবিতা রঞ্জন সরকার উত্তর দিনাজপুর জেলার মুখোশ তৈরী হয় তা জানতে পেরে হেমতাবাদের কৃষ্ণবাটীতে মুখোশ শিল্পী শচীন্দ্রনাথ সরকারের বাড়িতে সোজা গিয়ে হাজির হয়ে পরেন।১৯৮২ সালে রাজ্য মিউজিয়াম ডিরেক্টর সবিতারঞ্জন সরকার মুখোশ শিল্পী শচিন্দ্রনাথ সরকারের হাতে তৈরী ছাতিম কাঠের দশমন্ডুধারী রাবনের মুখোশ জেলা ও রাজ্য পুরস্কৃত হলে সারা রাজ্যের আলোরন পরে যায়।
শচীন বাবু অসীম ধৈর্য ও শ্রম দিয়ে গামরি কাঠাল আম,ছাতিম, কদম, নিম,পুকুর কাঠে বাটলি দিয়ে র্খুদে র্খুদে শৈল্পিক সৃষ্টির নেশায় বুদ হয়ে থাকেন স্ককীয় শিল্প।মাধুর্যে রায়গঞ্জ কলেজের প্রক্তন অধ্যাপক তথা লোকশিল্পর গভেষক ড: শিশির মজুমদার তাকে এই কাজে যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছিলেন একসময়ে। অবশেষে কোলকতার বিশিষ্ট সহুদয় ব্যাক্তিত্ব রুবী পালচৌধুরী দশমুণ্ডুধারী রাবনের ছাতিম কাঠের মুখোশটি দেখে এবং সেটি মুখোশ শিল্পী শচিনবাবুর কাছ থেকে তা সংগ্রহ করে লন্ডনের মিউজিয়ামে স্থান করে দেবার ব্যবস্থা করলে রাজ্যের মুখোশ শিল্পের মানচিত্র আলোরন পরে যায়। সেই থেকে আজ অবধি শচিনবাবুর হাতে তৈরী দশমুণ্ডুধারী রাবনের মুখোশ লন্ডনের মিউজিয়ামে উজ্জল স্বাক্ষর বহন করে আসছে।বর্তমানে শচীন বাবুর গ্রামের বাড়ীতে রাজ্য সরকারের উদ্দ্যেগে মুখোশ শিল্পের উপর একটি গুরুকুল শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
সেখানে ২০১৩ সাল থেকে মুখোশ শিল্পের উপর প্রতি বছর ১০ জন করে দের বছর প্রশিক্ষন তিনি দিয়ে আসছেন।প্রশিক্ষন রত ছাত্রছাত্রীরা প্রশিক্ষন নেবার জন্য প্রতিমাসে ২৫০ টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছে।আর প্রশিক্ষক শচীনবাবু মাসে দের হাজার করে সাম্মনিক পেয়ে থাকেন। এছাড়াও শচীন বাবুর বাড়ীতে ভারত সরকারের ভারত সরকারের মিনিষ্ট্রি অফ টেক্সটাইল হ্যান্ডিক্র্যাফট ডেভলপমেণ্টর উদ্দ্যেগে প্রতি বছর মুখোশ শিল্প এবং মুখোশ শিল্পের নৃত্যের উপরেও প্রশিক্ষন দেবার ব্যবস্থা হয়ে থাকে।তাই উত্তর দিনাজপুর জেলার মুখোশ শিল্পের গর্ব শচীনবাবু এক সাক্ষাৎকারে বলেন শুধু মুখোশ তৈরী করা নয় তার মুখোশ নৃত্যের একটি দল রেয়েছে।
মুখোশ নৃত্যের দল নিয়ে তার নিজের জেলা ছারাও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের লোকশিল্পের অনুষ্টানে নিয়মিত অনুষ্টান করে থাকেন। শচীনবাবু বলেন তার এই শিল্পী জীবনে তিনি তার হাতের তৈরী উন্নত মানের মুখোশ নিয়ে রাজ্য বেশ কয়েকবার পুরস্কার পাবার সাথে সাথে জাতীয় স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানান।তা ছাড়া তার হাতের তৈরী উন্নত মানের মুখোশ লন্ডনের মিউজিয়ামের স্থান পাওয়ার এর চেয়ে বড় সম্মান কি পেতে পারি বলে জানান,তিনি জীবনের শেষ প্রান্ত এসেও মুখোশই তার জীবনেই একমাত্র চলার সর্বক্ষনের সাথী। মুখোশের ভাবনাই তাকে সর্বক্ষন ভাবায় বলে শচীনবাবু জানানতার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মুখোশ নিয়ে যাতে কাজ করে যাতে পারে ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনাই করে চলছেন ।